লাল সিগন্যাল নেই। অথচ আচমকাই দাঁড়িয়ে পড়েছে ট্রেন। ঘণ্টাখানেক নট নড়নচড়ন।
দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে কী হয়েছে বোঝার চেষ্টা করছিলেন বেজিংয়ের ন্যু ওয়াইন। আশপাশের লোকজনের কথা শুনে কিছু বোঝার উপায় নেই তাঁর। প্ল্যাটফর্মে নেমে ইতিউতি তাকিয়ে পাকড়াও করলেন এক আরপিএফ কর্মীকে। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে ট্রেন কেন এত ক্ষণ দাঁড়িয়ে, তা বোঝার পরে রীতিমতো হতাশ এই পর্যটক।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জেরে মঙ্গলবার পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের নানা জায়গায় একের পর এক আটকে পড়ল বহু ট্রেন। সীতারামপুর স্টেশনে দানাপুর-টাটা এক্সপ্রেস ও কালকা মেল, যশিডি স্টেশনে অমৃতসর-হাওড়া এক্সপ্রেস, তুলসিটার স্টেশনে দ্বারভাঙা-সেকেন্দ্রাবাদ এক্সপ্রেস, ঘোরপাড়নে হিমগিরি এক্সপ্রেস, কালিপাহাড়িতে দুন এক্সপ্রেস, অন্ডালে অনন্যা এক্সপ্রেস, শিয়ালদহগামী জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেস আসানসোলে স্টেশনে, হাওড়াগামী রাজধানী কুলটিতে, শিয়ালদহগামী দুরন্ত এক্সপ্রেস প্রধানখন্টা স্টেশনে, রাজবাঁধে লালকেল্লা এক্সপ্রেস, টাটা-দানাপুর কাসীটার স্টেশনে থেমে থাকে। আচমকা ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ায় হতচকিত হয়ে যান যাত্রীরা।
রাজধানীতে চড়ে কলকাতা যাচ্ছিলেন অপর্ণা প্রসাদ। কুলটি স্টেশনে ট্রেন থেমে যাওয়ার পরে তিনি বলেন, “হঠাৎ দেখি, প্রচুর পুলিশ এসে ট্রেনের চারদিকে দাঁড়াল। তখনই বুঝেছি, গুরুতর কিছু হয়েছে। কিন্তু স্টেশনে নেমে জানার সাহস হয়নি। কিছুক্ষণ পরে ঘোষণা শুনে বুঝলাম, বিদ্যুৎ না থাকায় এই বিপত্তি।” ঘণ্টা চারেক ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে ঠিক মতো খাবার ও জল মেলেনি বলে অভিযোগ রাজধানীর যাত্রীদের। অমনদীপ সিংহ চাওলা নামে এক যাত্রীর কথায়, “প্রায় সাড়ে ৩টে বেজে গেলেও আমরা জল ও খাবার কিছুই পাইনি। রেলের তরফে ন্যূনতম খোঁজখবরও নেওয়া হয় না।” কলকাতার বাবুবাগান এলাকার বাসিন্দা জয়দেব সরখেল বলেন, “ট্রেন এমনিতেই দিল্লি থেকে দেরিতে ছেড়েছে। তার উপরে এই বিপর্যয়। কখন বাড়ি পৌঁছব জানি না। প্ল্যাটফর্মেও খাবার পাচ্ছি না।” রেলের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, রাজধানীর যাত্রীদের পর্যাপ্ত জল ও খাবার সময় মতোই দেওয়া হয়েছে। আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক বিশ্বনাথ মুর্মু বলেন, “বিকাল ৩টে নাগাদ বিশেষ গাড়িতে করে জল ও খাবার জি টি রোড ধরে কুলটি স্টেশনে পাঠানো হয়।” যাত্রীদের অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ায় এ দিন আসানসোল স্টেশনে ছিল কয়েক হাজার যাত্রীর ভিড়। তাঁদের কেউ ট্রেন ধরতে এসেছিলেন, কেউ আবার ট্রেন থেকে নেমে গন্তব্যে যাওয়ার উপায় খুঁজতে বেরিয়েছেন। বেনারস থেকে জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেসে চড়ে কাটোয়ায় বাড়ি ফিরছিলেন নিখিল দত্ত। ট্রেন থেমে যাওয়ায় স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, “বর্ধমানে নেমে বাস বা ট্রেনে চেপে বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা ছিল। এখন কী করব, জানি না।” বিশ্বনাথবাবু জানান, বিকেল সাড়ে ৩টে থেকে ডিজেল ইঞ্জিন লাগিয়ে দূরপাল্লার ট্রেনগুলি চালানোর ব্যবস্থা করা হয়। এ দিন শক্তিগড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে শিয়ালদহ-বর্ধমান আপ লোকাল। ডাউন জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেস বেলমুড়ি স্টেশনে থেমে যায়। কাটোয়া থেকে হাওড়াগামী একটি লোকাল আটকে পড়ে পূর্বস্থলীর লক্ষ্মীপুর স্টেশনে। যাত্রীদের সেখান থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে ছাতনি মোড়ে পৌঁছে বাস ধরে কাটোয়া ফিরতে হয়। ট্রেন না চলায় বাসে প্রচণ্ড ভিড় হয়। এ দিন কাটোয়া-আজিমগঞ্জ শাখায় ডিজেল ইঞ্জিনের ট্রেন চলেছে। ব্যান্ডেল-কাটোয়া লাইনে বেশ কিছু ট্রেন আটকে পড়ে। সিঙ্গল লাইন হওয়ায় ডিজেল ইঞ্জিনের ট্রেন এই লাইনে চালানো যায়নি। একটি আপ ও একটি ডাউন কাটোয়া লোকাল পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পড়ে কালনা স্টেশনে। সন্ধ্যা পৌনে ৬টা নাগাদ কালনা থেকে হাওড়াগামী কাটোয়া লোকাল রওনা দেয়। জানানো হয়, আপাতত সেটি গুপ্তিপাড়া পর্যন্ত যাবে। |