|
|
|
|
|
লবঙ্গ-ভঙ্গ আন্দোলন জয় হে |
কোন সুদূর যুগ থেকে আমরা তার সুগন্ধে বশ। আয়ুর্বেদে,
রসনাশাস্ত্রে তার দাপট বিশ্ব জুড়ে। মসালা ম্যাজিক-এ লবঙ্গ-রঙ্গ |
যদি বলি, সিজিজিয়াম অ্যারোম্যাটিকাম, কিচ্ছুটি বোঝা যাবে না। আবার যদি তাকে অন্য নামে ডাকি, ইউজিনিয়া ক্যারিয়োফিলাস, তা হলেও নিশ্চয়ই সব্বাই স্পিকটি নট! আচ্ছা বেশ, তা হলে যে নামে তাকে চিনি, সেটাই বলে ফেলা যাক। চেনা নাম: লবঙ্গ। হ্যাঁ, ওগুলো সব আমাদের খুব পরিচিত মশলাটির নাম। লবঙ্গ হল এক ধরনের ফুলের কুঁড়ি। হ্যাঁ, কুঁড়ি, ফুল নয়। ভুলেও বলবেন না ফুল ফুটুক না ফুটুক, লবঙ্গ। ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীন ‘স্পাইসেস বোর্ড ইন্ডিয়া’র বয়ানে স্পষ্ট লেখা আছে: লবঙ্গ হল সিজিজাম অ্যারোম্যাটিকাম-এর সুগন্ধি, সম্পূর্ণ কিন্তু না-ফোটা শুকনো কুঁড়ি। আদি বাসস্থান ইন্দোনেশিয়ার মালাক্কা দ্বীপ। দারুচিনি দ্বীপ ঠিক কোথায়, জানি না, কিন্তু মালাক্কাকে লবঙ্গ দ্বীপ নামেই ডাকা হত সে কালে। সেখান থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকার তানজানিয়া, জাঞ্জিবার, এ দিকে শ্রীলঙ্কা, এমন নানা ভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে লবঙ্গের চাষ। গল্পে আছে, সিন্দবাদ নাবিক ব্যবসার সূত্রে লবঙ্গকে জগদ্বিখ্যাত করে তোলেন। মধ্যযুগ থেকে লবঙ্গের বহুল ব্যবহার শুরু হয়। এখন দুনিয়ার নানা অঞ্চলের রান্নায় এটি বহুল ব্যবহৃত।
উত্তর ভারতীয় রান্না গরম মশলা বিনা হয় না, যার প্রধান উপকরণ লবঙ্গ। গুজরাতের ‘মশলা চা’ জগদ্বিখ্যাত। এর প্রধান সুগন্ধটি আসে লবঙ্গ থেকে। মসালা চা মানে সচরাচর লবঙ্গ চা। মেক্সিকান রান্নাতেও লবঙ্গ খুব ব্যবহৃত হয়। আমেরিকাতে কিছু মিষ্টি ধরনের পাউরুটি প্রস্তুত করতে লবঙ্গের ব্যবহার হয়। এক সময়ে ইন্দোনেশিয়া ডাচ উপনিবেশ ছিল, সেই কারণে ডাচ রান্নায় লবঙ্গ ব্যবহার দেখতে পাই।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ক্রিসমাসের সময় মদ তৈরি করতে লবঙ্গ ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া অনেক অঞ্চলে দরজার সামনে বেশ কিছু লবঙ্গ ঝুলিয়ে রাখা হয়। তার ফলে সমস্ত বাড়িতে, একটি পবিত্র গন্ধের আমেজ ছড়িয়ে যায়। ইন্দোনেশিয়ার লবঙ্গ গন্ধ সমৃদ্ধ সিগারেট খুবই বিখ্যাত, এটি ইউরোপ, এশিয়া ও আমেরিকাতে বহুল প্রচলিত। চিন এবং জাপানে লবঙ্গ গন্ধ সমৃদ্ধ সুগন্ধি জনপ্রিয়। প্রাচীন যুগে ভারত, চিন এবং পশ্চিমের কিছু দেশে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতিতে লবঙ্গ ব্যবহার হত। প্রাচীন ভারতে বিভিন্ন ব্যথা নিরাময়ের ওষুধ লবঙ্গ বেটে প্রস্তুত করা হত। তিব্বতে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে লবঙ্গকে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা হত।
|
আধুনিক যুগে ওষুধে লবঙ্গের ব্যবহার |
দাঁত ও মাড়ি সংক্রান্ত বিভিন্ন ওষুধ, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা এবং মুখের ভিতরের কোনও অসুখে সাময়িক ভাবে জায়গাটিকে অসাড় করতে লবঙ্গ ব্যবহার করা হয়। বমি এবং বমি-ভাব আটকাতে, গ্যাস সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা, পেটের গণ্ডগোল, ব্যথার সমস্যা এবং ব্যথা থেকে ফুলে ওঠা ইত্যাদির সমাধানে যে সব ওষুধ ব্যবহার করা হয় তার বেশির ভাগের মধ্যে লবঙ্গের পরিমাণ বিভিন্ন মাত্রায় থাকে।
|
সতর্কতা কেন জরুরি |
লবঙ্গ যখন কোনও খাবারে ব্যবহার হয়, তখন কোনও রকম ভয়ের বা বিপদের সম্ভাবনা থাকে না, কিন্তু ওষুধ হিসেবে এবং বাড়িতে ঘরোয়া পদ্ধতি অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়, তখন লবঙ্গের ব্যবহারের পরিমাণ এবং মাত্রা যথাযথ হওয়া উচিত। যেমন, বাচ্চাদের মুখের কোনও অসুখে লবঙ্গ ব্যবহার করা উচিত নয়। গর্ভবতী মায়েদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া লবঙ্গ যুক্ত ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। লবঙ্গের পরিমাণ বেশি (বিশেষত ওষুধের ক্ষেত্রে) হলে তার ফল মারাত্মক হতে পারে, ধীরে ধীরে রক্ত জমাট বেঁধে যায়।
|
রূপচর্চায় লবঙ্গের ব্যবহার |
লবঙ্গ ও চন্দনের মিশ্রণ ব্রণতে লাগালে ব্রণ দ্রুত কমে যায়। এ ছাড়া লবঙ্গবাটা কয়েক ফোঁটা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ব্রণর ক্ষতস্থানে লাগালে সমস্ত দাগ চলে যায়। |
|
|
|
|
|