দায় কার
আঁধারে আলোর ভবিষ্যৎ
বাতিস্তম্ভ আছে যথাস্থানে। কিন্তু অধিকাংশেই আলো জ্বলে না। সারানোও হয় না। কারণ, আলো জ্বালানো বা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার, তা নিয়েই চলছে চাপানউতোর। অভিযোগ, আলো লাগানো বা রক্ষণাবেক্ষণে হেলদোল নেই কারও। প্রতিটি দফতরই একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাতে ব্যস্ত। অগত্যা আঁধারেই রয়ে গিয়েছে খাস জাতীয় সড়ক কোনা এক্সপ্রেসওয়ের সাঁতরাগাছি উড়ালপুল।
দীর্ঘ দিন ধরেই এই উড়ালপুলের বেশির ভাগ আলো জ্বলে না। অধিকাংশ বাতিস্তম্ভে বাতিগুলি খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। গোটা সেতুতে মাত্র দু’-তিনটি আলো জ্বলে। সন্ধের পর থেকেই তাই অন্ধকারে ডুবে থাকে সেতুর বেশির ভাগ অংশ। যাতায়াত করতে ভরসা গাড়ির হেডলাইট। দুর্ঘটনাপ্রবণ বলে বদনাম রয়েছে সাঁতরাগাছি উড়ালপুলের। তার উপরে বাতি না জ্বলা প্রতিপদে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে।
কোনা এক্সপ্রেসওয়ে আগে ছিল ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া-র (এনএইচএআই) অধীনে। ২০০৫-এ হস্তান্তরের পরে এখন এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে পূর্ত দফতরের জাতীয় সড়ক বিভাগ। রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বহন করে কেন্দ্র। কিন্তু সাঁতরাগাছি উড়ালপুলের আলোর দায়িত্ব কার, তা নিয়ে পূর্ত দফতরের মধ্যেই দ্বিমত রয়েছে। দফতরের সচিব যখন বলছেন, কেন্দ্রের টাকাতেই আলো লাগানো বা রক্ষণাবেক্ষণের কথা, তখন দফতরেরই এক ইঞ্জিনিয়ার বলছেন, আলোর দায়িত্বে কেএমডিএ। অথচ কেএমডিএ পাল্টা জানাচ্ছে, ওই আলোগুলির দায়িত্বে রয়েছে পূর্ত দফতরই।
আর এই সমন্বয়ের অভাবেই অন্ধকারে ডুবে রয়েছে সাঁতরাগাছি উড়ালপুল। ব্যাহত হচ্ছে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের রক্ষণাবেক্ষণের কাজও। অভিযোগ, শুধু সাঁতরাগাছি উড়ালপুলই নয়, উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কোনা এক্সপ্রেসওয়েতেও অনেক আলো খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। সারানোর কোনও উদ্যোগও নেই। অনেক বাতিস্তম্ভে আবার বাতিই নেই। কোথাও বাতিস্তম্ভ এক দিকে হেলে আছে, কোথাও বা ভেঙে পড়েছে। তা ছাড়া, লোডশেডিংয়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে অন্ধকার হয়ে থাকে। ট্রাফিক সিগন্যালও জ্বলে না।
উপযুক্ত সংস্কারের অভাবে এমনিতেই বেহাল দশা এই সেতুর। কংক্রিটের রেলিংয়ে ফাটল ধরেছে। রাস্তার অবস্থাও ভাল নয়। বাতিস্তম্ভগুলির জীর্ণ দশা। সেতুতে কোনও ডিভাইডার নেই। তার মধ্যেই বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে যানবাহন। সকাল-সন্ধে আধ ঘণ্টা-চল্লিশ মিনিট সেতুতে যানজটে আটকে থাকাও নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তার মধ্যেই সেতুর উপরে অন্ধকার থাকায় উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ির হেডলাইটে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। ফলে প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা।
পূর্ত দফতরের জাতীয় সড়ক (ডিভিশন-৪) বিভাগের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুশোভন গুহ বলেন, “আমরা কোনা এক্সপ্রেসওয়ের রাস্তাটা দেখি। যেহেতু এটা জাতীয় সড়ক, তাই কেন্দ্রীয় সরকারের টাকায় কোনা এক্সপ্রেসওয়ের রক্ষণাবেক্ষণ হয়। আলোর দায়িত্ব কেএমডিএ-র। কেন আলো জ্বলছে না, তা ওরাই বলতে পারবে। বিদ্যুতের বিলও কেএমডিএ দেয়।” যদিও কেএমডিএ-র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক বিবেক ভরদ্বাজ বলেন, “কোনা এক্সপ্রেসওয়ের আলোর দায়িত্ব পিডব্লিউডি-কে দেওয়া হয়েছে।”
এ দিকে, পূর্ত দফতরেরই সচিব অজিত বর্ধন বলেন, “কোনা এক্সপ্রেসওয়ে এখন পূর্ত দফতরের অধীনে। তবে রক্ষণাবেক্ষণের টাকা আসে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল থেকে। টাকার অভাবে দীর্ঘ দিন রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন বাতিস্তম্ভে আলো নিভে থাকায় অন্ধকারে দুর্ঘটনাও ঘটছে। এটি জাতীয় সড়ক বলে কেন্দ্রীয় সরকারের টাকায় কোনা এক্সপ্রেসওয়ের সংস্কারের কাজ করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকার টাকা পাঠাচ্ছে না বলে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের আলো সারানো হচ্ছে না। রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না।” পাশাপাশি তিনি বলেন, “তবে কেন্দ্রীয় সরকার শুধু বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা, আলো লাগানো ইত্যাদি খরচ বহন করে। বিদ্যুতের খরচ স্থানীয় পুরসভাকে বহন করতে হয়। পিডব্লিউডি-কেও কিছু খরচ বহন করতে হয়। লোডশেডিং হলে অবশ্য কোনা এক্সপ্রেসওয়ের আলো নিভে যায়। কেন্দ্রের থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টাকা আসেনি। তাই আলোর রক্ষণাবেক্ষণ করা যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি। টাকা এলে আলো সারিয়ে দেওয়া হবে।”
স্থানীয় বিধায়ক জটু লাহিড়ীও বলেন, “দু’টি দফতরের প্রধান দু’রকম কথা বলছেন। এমন চলতে থাকলে মুশকিল।” এ সবের মধ্যেই আবার সেতুর আলোর বিদ্যুতের খরচ পুরসভার দেওয়ার কথা, এমনটা মানতে রাজি নন খোদ হাওড়া পুরসভার মেয়র মমতা জয়সোয়াল। তাঁর কথায়: “কেন্দ্রের টাকাতেই কোনা এক্সপ্রেসওয়ের রক্ষণাবেক্ষণ হয়। আলোর জন্য পুরসভাকে টাকা দিতে হয় না। বিদ্যুতের বিল আসে। যারা দেখভাল করে, সেই সংস্থাই সেই বিলের টাকা দেয়।”
চাপানউতোরের এই গেরোয় আপাতত অন্ধকারে থাকাই ভবিতব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে সাঁতরাগাছি উড়ালপুলের!




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.