জৈব সার
নতুন পথে
দিনের পর দিন ভাগাড়ের আকার বাড়ছে। তা থেকে এলাকায় ছড়াচ্ছে দূষণ। অতি পরিচিত সেই ছবি এ বার বদলাতে উদ্যোগী হয়েছে বালি পুরসভা। একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বেলুড় চাঁদমারিতে বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে জৈব সার।
পুরসভা সূত্রে খবর, ১১.৮১ বর্গ কিলোমিটার এলাকার বালি পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ড। যার মধ্যে রয়েছে বালি, বেলুড় ও লিলুয়া অঞ্চল। প্রায় চার লক্ষ বসবাসকারীর এই পুর এলাকার আবর্জনা ফেলার জন্য বালি জগাছা ব্লকের সাঁপুইপাড়া পঞ্চায়েতের চাঁদমারিতে একটি ভাগাড় ছিল। সেখানেই প্রতি দিন বালির ৩৫টি ওয়ার্ডের সমস্ত রকমের আবর্জনা এনে ফেলা হত। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই স্থানীয় লোকেরা সেই ভাগাড় সরানোর আবেদন জানাতে থাকেন। ভাগাড় সরানোর জন্য বালি পুরসভা জাতীয় সড়কের ধারে ডানকুনিতে একটি জমিও কেনে। তবে বিভিন্ন অসুবিধার জন্য সেখানে ভাগাড় তৈরি বাস্তবায়িত হয়নি বলেই দাবি পুর কর্তৃপক্ষের। ফলে চাঁদমারি-সহ অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ী ভাবে প্রতি দিন আবর্জনা ফেলতে শুরু করে পুরসভা।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পরে ২০১০-এর মার্চে জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন-এর (জেএনএনআরইউএম) সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি থেকে প্রতি দিন বর্জ্য সংগ্রহ করে তা থেকে জৈব সার তৈরির জন্য বেলুড়ের চাঁদমারি ভাগাড়েই একটি কারখানা তৈরির কাজ শুরু হয়। পুরো প্রকল্পটি তৈরি হয় পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মডেলে। প্রকল্পটি তৈরিতে খরচ হয় ৮ কোটি ৮ লক্ষ টাকা। ওই বছরেই প্রকল্পটির শিলান্যাস করেন রাজ্যের তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য।
বালি পুরসভার স্যানিটারি ইনস্পেক্টর প্রদীপ রাউত বলেন, “জেএনএনইউআরএম-এর এই প্রকল্পটির পুরো দায়িত্বই কেএমডিএ-র। তারাই টেন্ডার ডেকে একটি বেসরকারি সংস্থাকে বালি পুরসভার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অর্থাৎ পিপিপি মডেলে কাজ করার জন্য যুক্ত করে।” প্রদীপবাবু জানান, ওই বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে পুরসভার একটি চুক্তি হয়। তাতে স্থির হয়, ওই সংস্থাকে প্রতি মাসে প্রতি মেট্রিক টন বর্জ্য প্রতি ৫১৮ টাকা ৪০ পয়সা করে দেবে পুরসভা। এর পরে ওই বছরেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র নিয়ে জৈব সার তৈরির কারখানা গঠনের কাজ শুরু হয়। কেএমডিএ-র জনসংযোগ আধিকারিক সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যের ন’টি পুরসভাকে নিয়ে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। তার মধ্যে বালি, কামারহাটি ও বাঁশবেড়িয়া পুরসভা কাজ শুরু করেছে। বাকিরা কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।”
পুরসভা সূত্রে খবর, মাত্র আট মাস আগে থেকে বেলুড়ে জৈব সার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এখন প্রতি মাসে প্রায় ২৫০ মেট্রিক টন সার উৎপাদন হয়। প্রতি দিন সকালে বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে পুরসভার সাফাইকর্মীরা তা নিয়ে এসে চাঁদমারিতে জমা করেন। সেগুলি শুকিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে তা থেকে প্লাস্টিক, কাগজ সমেত অন্যান্য শক্ত বস্তু আলাদা করা হয়। বাকি শুধু পচনশীল বস্তু থেকেই তৈরি হয় জৈব সার। এর পরে ওই বেসরকারি সংস্থা আরও দু’টি সংস্থার মাধ্যমে জৈব সার কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য বাজারে ছড়িয়ে দেয়।
পুরসভা সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে বালি পুর এলাকার ১৫টি ওয়ার্ড থেকে বর্জ্য সংগ্রহ সম্ভব হচ্ছে। বাকি ১৯টি ওয়ার্ড থেকে এখনও বর্জ্য সংগ্রহ করে তা জৈব সার উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না। ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে একমাত্র ২৬ নম্বর ওয়ার্ডটি রেল কলোনির মধ্যে হওয়ায় তার আবর্জনা সংগ্রহের দায়িত্বে রয়েছে রেল নিজেই।
মাত্র ১৫টি ওয়ার্ডের আবর্জনা সংগ্রহ করা হচ্ছে কেন?
বালির পুরপ্রধান অরুণাভ লাহিড়ী বলেন, “প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করতে গেলে ৩০টি মিনি ট্রাকের প্রয়োজন। কেন না, ট্রাক্টরের ক্ষেত্রে জ্বালানি খরচ অনেক বেশি। এমনকী, পুরসভার অত ট্রাক্টরও নেই। তাই খুব শীঘ্রই ১৮টি মিনি ট্রাক কেনা হচ্ছে। তখন আরও কয়েকটি ওয়ার্ড বাড়ানো হবে। পরে ৩০টি মিনি ট্রাক কেনা হয়ে গেলে সব ওয়ার্ডের আবর্জনাই সংগ্রহ করা হবে।” পুরসভা সূত্রে খবর: প্রতিটি ওয়ার্ডের আবর্জনা সংগ্রহ করে জৈব সার উৎপাদন করা সম্ভব হলে প্রতি মাসে পরিবহণ খরচ বাবদ ৩০ হাজার টাকা ও সার বিক্রির লভ্যাংশ পুরসভাকে দেবে বেসরকারি সংস্থাটি। এতে পুরসভার আয় বাড়বে বলেও দাবি পুর কর্তৃপক্ষের।
তবে বর্জ্য থেকে সার উৎপাদন করা হলেও বর্জ্য প্লাস্টিক পুনর্নবীকরণ করা এখনও শুরু হয়নি বেলুড়ের ওই কারখানায়। এ বিষয়ে উৎপাদনকারী বেসরকারি সংস্থাটির তরফে সৌরভ সারদা বলেন, “মাত্র আট মাস হল কাজ শুরু হয়েছে। এখন যে সব বড় প্লাস্টিক, কাগজ বের হয় তা বাইরে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। আর প্লাস্টিক ও কাগজের ছোট ছোট টুকরো কারখানাতেই এক জায়গায় জমিয়ে রাখা হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই প্লাস্টিক পুনর্নবীকরণ যন্ত্র কারখানায় বসানো হবে।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.