তাঁর মোবাইলের কলার টিউন, ‘অকেলে হ্যায়, তো কেয়া গম হ্যায়? চাহে তো হামারে বস্ মে কেয়া নেহি?’ সত্যিই, একা হাতে সে দিন অসাধ্য সাধন করেন ক্যাপ্টেন ঊর্মিলা যাদব। ১০ জুন। সামনের চাকা খসা অবস্থায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানকে ৪৮ জন যাত্রী ও ৪ কর্মী-সহ নিরাপদে নামিয়ে আনেন তিনি। আজ, শ্রেণি-সংগঠন-দল-মত-ভাষা-গোষ্ঠী নির্বিশেষে, অসমের মানুষ একজোট হয়ে সংবর্ধনা জানাল তাঁকে।
গুয়াহাটির বিবেকানন্দ কেন্দ্রে ব্যতিক্রম মাসডো এবং রাজ্য ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ বিভাগের যৌথ উদ্যোগে আজকের সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়। এসেছিলেন কামরূপের জেলাশাসক এস কে রায়, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের অধিকর্তা গৌরব বথরা, যুব কংগ্রেস নেতা তথা সমাজসেবী গৌরব গগৈ, জনতা দলের (ইউ) নেতা অজয় দত্ত, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের আঞ্চলিক প্রধান স্বামী সাধনানন্দ প্রমুখ। |
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঊর্মিলা যাদব। ছবি: উজ্জ্বল দেব |
তা ছাড়াও রাজ্যের মাড়ওয়ারি সমাজ, জৈন সমাজ, অসম সাহিত্য সভা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবি, সাহিত্যিক, সমাজসেবী, শিল্পীও আজ এয়ার ইন্ডিয়ার এই সাহসিনী পাইলটকে সংবর্ধনা দেন। উড়ান সংস্থায় প্রশিক্ষণরত ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের উৎসাহ দেন ক্যাপ্টেন ঊর্মিলা। অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে দিল্লি থেকে ঊর্মিলার সঙ্গে উড়ে আসেন তাঁর দিদি সরিতা যাদবও। তাঁর কথায়, “ছোট থেকেই আমার বোন খুব জেদি। বাবা বিমান বাহিনীতে ছিলেন। বোনও প্রথম থেকেই বলেছিল পাইলট হবে। হয়েই ছাড়ল। কাজের জন্য আজ ও যে সম্মান পাচ্ছে, তা আরও বহু মেয়েকে প্রেরণা যোগাবে।”
ঊর্মিলা নিজে বলেন, “বহুদিন এমন আবেগতাড়িত হইনি। যখন কুম্ভীরগ্রাম বিমানবন্দরে বসে কফি খাচ্ছিলাম তখনও ভাবিনি একটু পরেই এটিসি থেকে এমন একটা খবর আসবে যে ভয়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। তবে, ভয় পাইনি। সকলে মিলে কঠিন কাজটাকে উতরে দিয়েছি। বিমান নিরাপদে গুয়াহাটি নামাবার পরে সকলে যখন জড়িয়ে ধরছিলেন, তখনই পুরস্কার পেয়ে গিয়েছি। আজ আপনারা যে সম্মান দিলেন তা মানুষ হিসেবে আমার দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল।” সে দিন বিমানে ছিলেন, এমন যাত্রীরাও এ দিন ঊর্মিলাদেবীকে সম্মান জানান। যাত্রী প্রণবানন্দ দাস এই অনুষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য সড়কপথে সুদূর শিলচর থেকে গুয়াহাটি আসেন। তিনি বলেন, “মা আমায় প্রথমবার জন্ম দিয়েছিলেন। আপনি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে দিলেন। আপনি আমার দ্বিতীয় জন্মদাত্রী।” |