কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েন
দ্রুত ঘরে ফিরতে চান দুই গোষ্ঠীর মানুষই
ক দিকে দু’শো ত্রাণ শিবির জুড়ে খাদ্য, পানীয়, চিকিৎসার জন্য হাহাকার চলছে। অন্য দিকে, অসমে সংঘর্ষ থামাতে ব্যর্থতার দায় নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর। বড়োভূমি এবং নামনি অসমে গোষ্ঠী সংঘর্ষের সাত দিন পরে নতুন করে সংঘর্ষ না ছড়ালেও আরও বেশ কিছু মৃতদেহ মেলার খবর এসেছে। সব মিলিয়ে সরকারের দেওয়া হিসেব মতো মৃতের সংখ্যা ৪৮-এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া ১১ জন গ্রামবাসীর কোনও খোঁজ নেই। তবে সেনা টহল শুরু হওয়ায় ও কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনীর সক্রিয়তায় পরিস্থিতি তুলনামূলক ভাবে ভাল। আজ কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা বাদ দিলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।
আগামী কাল সংঘর্ষ কবলিত এলাকাগুলি ঘুরে দেখতে অসমে আসছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তার পর পরই সংঘর্ষ কবলিত এলাকায় আসছেন বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। ঠিক তার আগের দিনই লাগাতার সমালোচনায় জর্জরিত মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সাফ জানিয়ে দিলেন, সেনা নামাতে দেরি হওয়ায় ও কেন্দ্র অতিরিক্ত বাহিনী পাঠাতে বিলম্ব করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। গত কাল সংঘর্ষস্থলগুলি ঘুরে এসে আজ দিসপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন গগৈ। সেখানে তিনি জানান, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা বড়োভূমিতে অশান্তি ছড়াবার কোনও পূর্বাভাসই দেয়নি।
গোষ্ঠী সংঘর্ষে ঘরছাড়া এই অসুস্থ শিশুটির ঠিকানা এখন কোকরাঝাড়ের
এক সরকারি হাসপাতাল। শুক্রবার এ এফ পি-র ছবি।
কেন্দ্রও সময় মতো অতিরিক্ত বাহিনী পাঠায়নি। উপরন্তু রাজ্য থেকে দফায় দফায় কেন্দ্রীয় বাহিনী সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ফলে ঘটনার সময় রাজ্যের হাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী ছিল না। গগৈ বলেন, “আমি বিতর্ক সৃষ্টি করতে বা কেন্দ্রের সমালোচনা করতে চাই না। কেন্দ্রকেও সারা দেশের নানা অংশে বাহিনী পাঠাতে হয়। তবে অসমে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পরে সেনাকর্তা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, প্রতিরক্ষামন্ত্রককে অনুরোধ করা, চিঠি পাঠানো ইত্যাদি প্রক্রিয়া শেষ করতে করতেই কয়েকটি মূল্যবান দিন নষ্ট হয়েছে। কেন্দ্র নিজে থেকে অসমে বাহিনী পাঠায়নি। রাজ্য থেকে চেয়ে পাঠাবার পরেও বাহিনী আসতে যথেষ্ট বিলম্ব হয়েছে।”
অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক গগৈয়ের অভিযোগ মানতে নারাজ। আজ সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে জানানো হয়েছে, ২০ জুলাই সংঘর্ষ শুরু হলেও অসম সরকার ২৩ জুলাই অতিরিক্ত ১৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে পাঠায়। সেই দিনই আধাসেনাদের একটি দল রাজ্যে পাঠানো হয়। কোকরাঝাড়ে ৮ কোম্পানি রাজ্যের বাহিনী ও ৮ কোম্পানি অতিরিক্ত আধাসেনা, চিরাং-এ ৪ কোম্পানি রাজ্যের বাহিনী ও ৫ কোম্পানি আধাসেনা ও ধুবুরিতে ২ কোম্পানি করে রাজ্য ও আধাসেনা মোতায়েন হয়। পরে রাজ্য সরকার আরও ৫৬ কোম্পানি আধাসেনা চায়। গগৈ বলেন, “আমি প্রথম দিনই সেনা চেয়েছিলাম।” স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, সেনাবাহিনী সময় মতো সাড়া দেয়নি। রাজ্যের বক্তব্য, ২৩ জুলাই কোকরাঝাড় ও চিরাং জেলার জেলাশাসকরা স্থানীয় সেনা শিবিরের কম্যান্ডারের কাছে সাহায্য চান। সেনাকম্যান্ডার তাঁদের জানান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নির্দেশ ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। এরপর মুখ্যসচিব নবকুমার দাস প্রতিরক্ষাসচিব শশীকান্ত শর্মা ও স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহকে চিঠি পাঠান। সব সরকারি প্রক্রিয়া শেষ করে সেনা নামে ২৫ জুলাই। রাজ্য সরকারের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৩০ নম্বর ধারা অনুযায়ী, জরুরি ভিত্তিতে একজন এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সেনাবাহিনী তলব করতে পারেন। এবং সংশ্লিষ্ঠ সেনা-কম্যান্ডার সেই তলবনামা মানতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আধা-সামরিক বাহিনী পাঠাতে দেরি হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। তবে তাদের বক্তব্য, রাজ্যের তলব পাওয়ার পর জামশেদপুর, ও অন্যান্য এলাকা থেকে আধাসেনা পাঠাতে সময় লাগে। এখনও পর্যন্ত ৭৩ কোম্পানির মধ্যে ৬১ কোম্পানি আধাসেনা সংঘর্ষ কবলিত এলাকায় পৌঁছে গিয়েছে। এ দিকে বাক্সা জেলায় পরিস্থিতি খানিকটা উত্তেজনাপ্রবণ হওয়ায় আজই আরও ৭০০ আধা-সামরিক জওয়ান সেখানে পাঠানো হয়েছে। এ দিন বাক্সায় ত্রাণ শিবিরে মন্ত্রী রাজীবলোচন পেগু গণবিক্ষোভের সামনে পড়েন। ধুবুরির ঝগড়াপাড় ত্রাণ শিবিরে বিধায়ক জাহানুদ্দিনের সঙ্গে কংগ্রেস কর্মীদের হাতাহাতি হয়। বাক্সায়, গতরাতে তিনটি বাড়িতে আগুন ধরানো হয়েছে। এই ক’দিনে দেড়শো জনকে সংঘর্ষ ছড়ানো ও মারপিটের অভিযোগে আটক বা গ্রেফতার করা হয়েছে।
গগৈ অনুপ্রবেশকারীদের ভোট রাজনীতির স্বার্থে মদত দিচ্ছেন বলে বিজেপির অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফাও দাবি করেছে তারা। ইস্তফার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে গগৈ আজও বলেন, “এখন পালিয়ে যাওয়ার নয়, কাজ করার সময়। আমি পদত্যাগ করলে সমস্যা বাড়বে, কমবে না।”
আজ কোকরাঝাড়, ধুবুরি, চিরাং-এ দিনের বেলায় কার্ফু শিথিল করা হলেও বাক্সায় কার্ফু জারি রয়েছে। রাজ্যের ত্রাণ শিবিরগুলিতে ঠাঁই নেওয়া সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি মানুষের মধ্যে খাদ্য, পানীয় ও ওষুধের হাহাকার চরমে। ইতিমধ্যে ধুবুরির ত্রাণশিবিরে এক শিশু ও এক বৃদ্ধের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানান, ৫৫ জন চিকিৎসককে চারটি জেলায় পাঠানো হয়েছে। চার জেলার সব চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পাঁচ ট্রাক ওষুধও পাঠানো হয়েছে বলে হিমন্ত জানান। সব ত্রাণ শিবিরে নার্স ও স্বাস্থকর্মী মোতায়েন করার কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ দিকে, আজ কাজে গাফিলতি বা কাজে যোগ না দেওয়ার জেরে কোকরাঝাড় সদরের ওসি ও গোঁসাইগাঁও, বিজনির এসডিপিওকে সরানো হয়েছে। এই সংঘর্ষকে ঘিরে রাজ্য কংগ্রেসের মধ্যে বিভেদ বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী গত কাল রাতে তরুণ গগৈয়ের নেতৃত্বে দশ সদস্যের বিশেষ সমন্বয়রক্ষাকারী কমিটি গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ধুবুরি, কোকরাঝাড়ের দুই গোষ্ঠীর আশ্রয় শিবিরগুলিতেই অবশ্য একই ছবি। তবে এত কিছুর পরেও গ্রাম ছাড়া মানুষগুলি এখন যত শীঘ্র সম্ভব গ্রামে ফিরতে চান। প্রশাসনের কর্তাদের সামনে পেলেই ছুটে গিয়েছেন তাঁরা। নিজেদের গ্রামের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন।
দুই গোষ্ঠীর ঘরছাড়া মানুষদের আর্জিও একটাই, কোনও রকমে গ্রামে ফেরার ব্যবস্থা করে দিক প্রশাসন। প্রতিটি ত্রাণ শিবিরেই খাবারের জোগান নিয়ে নানা অভিযোগ। পানীয় জল ও শিশু খাদ্যের অভাবই সবচেয়ে বেশি। তবে আশ্রয় শিবিরের বাসিন্দারা সকলেই জানান, স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। গৌরীপুরের মাটিয়াবাগ হাই স্কুলের ত্রাণ শিবিরের বাসিন্দারা হাতে ভিক্ষার পাত্র নিয়ে জাতীয় সড়কে চলে যান। দূরপাল্লার গাড়ি দাঁড় করিয়ে সাহায্য সংগ্রহ করেন। ধুবুরির জেলাশাসক কুমুদ কলিতা বলেন, “প্রতিটি শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। কোথাও না পৌঁছলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.