আসছেন ফেসবুক, টুইটারে
তরুণ প্রজন্মকে ছুঁতে
এ বার তরুণ প্রযুক্তিতে প্রণব
খনও রাষ্ট্রপতি হননি। নর্থ ব্লকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মন্ত্রিসভার এক সতীর্থ। ঘটনাচক্রে সে দিনই আবার এক রাজনীতিকের বিতর্কিত সিডি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড হওয়ায় সরগরম সব টিভি চ্যানেল। সে সব দেখতে দেখতেই স্বগতোক্তি করেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়, “কম্পিউটারটাই আমার শেখা হল না! প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে যখন ছিলাম, চেষ্টা করেছি। পরে আর সময় পেলাম কই!” মজা পেয়েছিলেন সামনে বসে থাকা মন্ত্রীটি। আরও মজা করে বলেন, “রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলে অফুরন্ত সময় পাবেন! তখন না হয় একটা ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়বেন শিখতে।”
দু’দিন আগে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন প্রণব। কম্পিউটার শেখা তো পরের কথা, রাষ্ট্রপতি ভবনের সব কিছু বুঝে উঠতেই সময় লাগছে তাঁর। এর মাঝেই রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে কিনা জানানো হচ্ছে, এ বার ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগ দিতে পারেন প্রণববাবু! এ-ও বলা হচ্ছে, এত দিন যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন তিনি, আপাতত সে দু’টিও থাকবে তাঁর কাছে।
কিন্তু রাষ্ট্রপতি কি পারেন মোবাইল ব্যবহার করতে? জবাবে রাষ্ট্রপতি ভবনের এক আমলা আজ পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, “কেন, সংবিধানে নিষেধাজ্ঞা আছে নাকি! অতীতে এই যোগাযোগের মাধ্যম ছিল না। এখন রয়েছে। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে উনি মোবাইল ব্যবহার করতেই পারেন। অন্তত আপাতত তা করছেন।”
আর ফেসবুক, টুইটার? রাষ্ট্রপতি ভবনের ওই আমলার কথায়, “সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগ দেওয়ার বিষয়টি সময়ের দাবি। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছতে তা প্রয়োজন। না হলে জাতির প্রতি রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা এখন ক’জন আর টিভির সামনে বসে দেখার সময় পান। অথচ তাঁদের কাছে যদি সেই বার্তাই ফেসবুক বা টুইটারের মাধ্যমে পৌঁছে যায়, তা হলে নিশ্চয়ই পড়বেন। এবং ‘রিয়েল টাইমে’ পড়বেন। রাষ্ট্রপতি কী করছেন, তাঁর কর্মসূচি সবই জানতে পারবেন মানুষ। তাঁদের মতামত, ক্ষোভ, দুঃখ-যন্ত্রণার কথাও রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছে যাবে।” প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছবি ও পরিচয় দিয়ে ইতিমধ্যেই ফেসবুক ও টুইটারে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতির ‘পেজ’ও রয়েছে ফেসবুকে। কিন্তু সেগুলির কোনওটাই আসল নয়। রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রণববাবুর তরফে অচিরে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হবে।
ফেসবুক-টুইটারে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতির পাশাপাশি ইউটিউবেও এসে গেল রাষ্ট্রপতি ভবনের অনুষ্ঠান। দু’দিন আগে প্রণববাবুর শপথ গ্রহণের টুকরো অংশ রাষ্ট্রপতি ভবনের তরফে ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ভবনের আধিকারিকরাই এ কথা জানিয়ে বলেছেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছনোর লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত। পরে ওই অনুষ্ঠানের আরও অংশ ইউটিউবে আপলোড করা হবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
নতুন রাষ্ট্রপতি যে সব দিক থেকে জনসংযোগ ব্যবস্থাকে আরও সুচারু করতে চাইছেন, তার ইঙ্গিতও আজ পাওয়া গিয়েছে। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব হিসেবে আজ নিয়োগ করা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রকের যুগ্মসচিব বেনু রাজামণিকে। তিনি আদতে এক জন কূটনীতিক। দীর্ঘদিন পর কোনও কূটনীতিককে রাষ্ট্রপতি ভবনে এই দায়িত্ব দেওয়া হল। এই ঘটনাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
এত দিন রাষ্ট্রপতি বা তাঁর সচিবালয়ের সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও অ্যাকাউন্ট ছিল না ঠিকই। কিন্তু কেন্দ্রে ইউপিএ সরকার এখন এই মাধ্যমকে পুরোদস্তর ব্যবহার করছে। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের নিজস্ব টুইটার অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আবার ফেসবুকের মাধ্যমে এখন বার্তা দিতে শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। নরেন্দ্র মোদীরও টুইটার অ্যাকাউন্ট রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের টুইটার অ্যাকাউন্টের ‘ফলোয়ার’-এর সংখ্যা ১ লক্ষ ৪৫ হাজারেরও বেশি। নরেন্দ্র মোদীর ‘ফলোয়ার’ রয়েছেন তার থেকে অনেক বেশি। প্রায় ৭ লক্ষ ৯৩ হাজার। সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই জনসংযোগ ব্যবস্থা কাজে লাগছে বলেই তাঁদের সচিবালয়ের কর্তাদের মত। তবে রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে বলা হচ্ছে, মনমোহন সিংহ যেমন নিজে টুইটারে-ফেসবুকে লেখেন না, তেমন প্রণববাবুও তা করবেন না। তাঁর সচিবালয়ের তরফেই তা করা হবে।
এই মুহূর্তে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতার মধ্যে ফেসবুকে যাঁর ‘ফলোয়ার’-এর সংখ্যা সব থেকে বেশি সেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও নিজে খুব একটা টুইট করেন না। ওবামার ‘অনুগামী’র সংখ্যা ১ কোটি ৭৮ লক্ষেরও বেশি। তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টটি পরিচালনা করে নিজস্ব প্রচার টিম। তবে ওবামা নিজে যখন টুইট করেন, তখন নীচে সইও করেন। যেমন ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার জন্য তিনি যে টুইটটি করেছিলেন, তাতে তাঁর সই ছিল। আবার সম্প্রতি ‘সমকামী দম্পতিদের বিয়ের অধিকার থাকা চাই’ বলে যে টুইটটি করেছিল তাঁর প্রচার টিম, সেটি রেকর্ড পরিমাণ রিটুইট হয়েছে। ৬২ হাজার বার।
শুধু মনমোহন বা ওবামা কেন, রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনে থাকা ১৯৩টি দেশের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ দেশের সরকারই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগ দিয়েছে। সম্প্রতি জেনিভার একটি জনসংযোগ সংস্থা এ ব্যাপারে একটি সমীক্ষাও চালায়। তাঁদের সেই সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়, জি-২০ গোষ্ঠীর ১৬টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান টুইটারে সক্রিয়। চিন, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, ইতালির মতো কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার এতে যোগ দেয়নি।
রাষ্ট্রপতি ভবনের এক কর্তার কথায়, এই সব তথ্য-পরিসংখ্যান শুনলে নিশ্চয়ই রোমাঞ্চিত হবেন প্রণববাবু। এত দিন তিনি ছিলেন এই সবের থেকে সহস্র যোজন দূরে। কিছু দিন আগেও নিজের মোবাইলে মেসেজ খুলে পড়তে গেলে সমস্যায় পড়তেন তিনি। হাতে সময়ও বিশেষ ছিল না তখন। তাই সব মেসেজ টাইপ করে তাঁকে প্রিন্ট আউট দেওয়া হত। এ বার, নতুন প্রযুক্তিতে তিনি কত দ্রুত সড়গড় হন, সেটাই দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.