রাজ্য সরকারের তরফে ফ্ল্যাট দেওয়ার চুক্তি করে কী ভাবে সেটা বদলে ফেলা যায়, প্রশ্ন তুলল উচ্চ আদালতই। এবং এই প্রশ্ন তুলেই উল্টোডাঙায় কেএমডিএ-র চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের আবাসন থেকে প্রায় ৫০টি পরিবারকে উচ্ছেদের সরকারি নোটিস শুক্রবার স্থগিত করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
উল্টোডাঙায় ওই আবাসনের জমিতে যৌথ উদ্যোগে আবাসিক ও বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স তৈরি করছে কেএমডিএ। সেখানে আটতলা টাওয়ার গড়ে তোলা হবে। নির্মাণকাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে। আর সেই কাজ শুরুর সময়েই কেএমডিএ গত ১২ জুন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রায় ৫০টি পরিবারকে ওই আবাসন থেকে উচ্ছেদের নোটিস জারি করে। এ দিন ওই নোটিসের উপরে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। তিনি জানিয়ে দেন, মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার আগে কোনও পরিবারকেই উচ্ছেদ করা যাবে না।
কেএমডিএ-র চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের জন্য উল্টোডাঙা রোডে ওই আবাসন তৈরি হয়েছিল। সেখানে ১৬০টি ফ্ল্যাট আছে। যাঁরা এখন ওই আবাসনে রয়েছেন, তাঁরা কেএমডিএ-র চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, অবসরপ্রাপ্ত কর্মী এবং কর্মরত অবস্থায় মৃত কর্মীদের পরিবার। শম্পা চট্টোপাধ্যায়-সহ ২৮ জন হাইকোর্টে মামলা করে বলেন, বিগত সরকারের আমলে ১৬০টি পরিবারকে নতুন আবাসনে ফ্লা্যট দেওয়া হবে বলে লিখিত চুক্তি হয়েছিল। তাতে বলা হয়, বর্তমানে যাঁর ফ্ল্যাটের যা আয়তন, নতুন আবাসনে তাঁদের সেই মাপেরই ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। কিন্তু সরকার বদলের পরেই দেখা যায়, কিছু পরিবারকে অন্য ফ্ল্যাটে সরিয়ে দিয়ে বাকি আবাসিকদের উচ্ছেদের নোটিস ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ২০০৮ সালে তৎকালীন রাজ্য সরকারের সঙ্গে ওই চুক্তি হয়। সেই চুক্তিতে সরকার বলে, আবাসনের বাড়িগুলি যে-কোনও সময়েই ভেঙে পড়তে পারে। সেখানে ফাঁকা জায়গা রয়েছে। যৌথ উদ্যোগে টাওয়ার গড়ে তোলা হবে। নতুন আবাসনে একটি করে ফ্ল্যাটের মালিক হবে ১৬০টি আবাসিক পরিবার। অবশিষ্ট ফ্ল্যাট বাজারদরে বিক্রি করা হবে। টাওয়ার নির্মাণের ব্যাপারে ফোর্ট প্রজেক্ট নামে একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়। তাতে বলা হয়, কোনও পরিবারকেই উচ্ছেদ করা হবে না। নতুন টাওয়ার তৈরির সময় বর্তমান আবাসিকদের অন্য ফাঁকা ফ্ল্যাটে সরিয়ে নেওয়া হবে।
সুব্রতবাবু বলেন, নতুন সরকার আসার পরে প্রবল গতিতে নির্মাণকাজ চালু হয়ে যায়। এবং কিছু দিন পরেই প্রায় ৫০টি পরিবারকে ধরানো হয় উচ্ছেদের নোটিস। কেএমডিএ-র পক্ষে আইনজীবী পার্থসারথি বসু বলেন, যাঁরা এখন ওই সংস্থায় কর্মরত, রাজ্য সরকার শুধু তাঁদেরই পুর্নবাসন দেবে, অন্যদের নয়। বিচারপতি জানতে চান, কর্মরত, অবসরপ্রাপ্ত কর্মী এবং কর্মরত অবস্থায় মৃত কর্মীদের পরিবারকে ফ্ল্যাট দেওয়া হবে বলে চুক্তি করে এখন তা বদল করা হবে কোন যুক্তিতে? এ দিন ওই প্রশ্নের ফয়সালা হয়নি। শুধু উচ্ছেদের নোটিস স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। |