জড়তা কাটিয়ে মুখ খুলতে সময় লাগল মোটে কয়েক ঘণ্টা। দাঁত-ভাঙা বিদেশি শব্দে ভয় পাওয়া দূরে থাক, ফুর্তি ভরা ক্লাসঘরে ঠিক উচ্চারণে গান ধরল পাড়াগাঁ-মফস্সলের মুখচোরারা।
শুক্রবার বিকেলে কলকাতার মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে ইংরেজির ক্লাস শেষে পূর্ব মেদিনীপুরের কচি-কাঁচারা যেন অন্য মানুষ। দিঘা, রামনগর, ফতেপুরের সৌভিক, চয়ন, সৌমিতা, শুভম, তুলিকারা ইংরেজিতে গোটা একটা বাক্য সামলাতেও সড়গড় নয়। বিদেশি ভাষার সেই জুজুই তবু হেরে ভূত হল। ইংরেজিতে গল্প-গান-কবিতা থেকে শুরু করে দিনভর নানা মজার খেলায় মাতল গোটা ক্লাস।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাতেই দেখা গিয়েছে, মেধায় খামতি না-থাকলেও ইংরেজিতে ভাব-প্রকাশের অসুবিধায় মার খাচ্ছেন এ রাজ্যের শিক্ষার্থীরা। এই সমস্যা কাটিয়ে বিজাতীয় লব্জ শিখতে কথ্য ভাষা রপ্ত করার কথা বার বারই বলেন বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু ‘কমিউনিকেটিভ ইংলিশ’-এর কসরত এ রাজ্যে প্রয়োগ করা সে-ভাবে এখনও সম্ভব হয়নি। মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের উদ্যোগে ব্যবহারিক ইংরেজির এই পাঠই এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বাংলা মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া শুরু হল। |
কলকাতায় ইংরেজির ক্লাসে যোগ দিতে দিঘা বা আশপাশ থেকে সেই কাকভোরে রওনা দিয়েছিলেন ৬০ জন স্কুলপড়ুয়া। দিঘা বিদ্যাভবন, রামনগর রাও হাইস্কুল, রামনগর বালিকা বিদ্যালয় ও নিমতলা বালিকা বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের ক্লাস শেষ হতে বিকেল গড়িয়ে গেল। ‘ম্যারাথন’ ক্লাসের পরে মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের গ্রন্থাগারও ঘুরে দেখল কিশোর-বাহিনী। এর পরে ওয়াল্ট ডিজনির সিনেমার স্বাদ-গ্রহণ। সন্ধের মুখে কলকাতা থেকে ফিরতি-সফরের আগেও পড়ুয়াদের চোখে-মুখে ক্লান্তির বদলে দুষ্টুমির ঝিলিক। ছাত্রদের উদ্দীপনার সংক্রমণ থেকে আমেরিকান সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত উপ-অধিকর্তা অ্যান্টনি ডিন ট্র্যাঞ্চিনাও রেহাই পেলেন না। অ্যান্টনিকে ঘিরে ধরে ইংরেজিতে প্রশ্ন করেই তাঁর ১০০টা দেশভ্রমণের সখ বা কলকাতার জিলিপি-প্রীতির গোপন খবরও আদায় করে নিল পড়ুয়ারা।
পূর্ব মেদিনীপুরের মতো মুর্শিদাবাদের ছাত্র-ছাত্রীদেরও ইতিমধ্যে কমিউনিকেটিভ বা ব্যবহারিক ইংরেজিতে তালিম দেওয়া হয়েছে মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে। অ্যান্টনি জানালেন, প্রত্যন্ত এলাকার অন্য পড়ুয়ারাও এই সুযোগ পাবে। শুধু শহরের নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে কর্মসূচি নয়, দূর মফস্সলের বাংলা মাধ্যম স্কুলপড়ুয়াদের কাছে পৌঁছতেও তৎপর মার্কিন কনস্যুলেট।
গ্রামবাংলার ছাত্রদের সহজে ইংরেজি-শিক্ষার পাঠ দিতে মাঠে নেমেছিলেন তিন শিক্ষক হেয়ার স্কুলের অরিন্দম সেনগুপ্ত, সোনারপুরের মেলিয়া রাইচরণ বিদ্যাপীঠের সোনালি চক্রবর্তী ও শিলিগুড়ির ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শান্তা দাস। চিরাচরিত ক্লাসের লেখা-পড়ার বদলে তাঁদের দাওয়াই হল, শোনা এবং বলা। নাটকীয় স্বরক্ষেপণে গল্প শোনা বা মজার খেলায় বানান ও উচ্চারণ-শিক্ষাও উপভোগ করেছে পড়ুয়ারা। রামনগরের স্কুলে ইংরেজির মাস্টারমশাই বিদ্যাসাগর মাহাতোও এই অভিনব ক্লাসের সাক্ষী হয়ে উত্তেজিত। তিনি বললেন, “এ ভাবে পড়াতে পারলে স্কুলের ক্লাস অবশ্যই ঢের সরস হয়ে উঠবে।” |