বছর আটেকের শিবু সিংহ হোমে থাকবে, না কি তাকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে? আগামী ৩১ জুলাই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। তত দিন? সরকারি হোম ‘আনন্দ আশ্রম’-এই তত দিন শিবু থাকবে বলে বহরমপুরের সিজেএম আদালতের বিচারক অলি বিশ্বাস মঙ্গলবার নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ১০ জুলাই বাড়ির ‘কাজের ছেলে’ শিবুর গালে তপ্ত খুন্তির ছেঁকা দেন গৃহকর্ত্রী জয়ন্তী ভকত। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ঘটনার খবর পেয়ে মুর্শিদাবাদ চাইল্ড লাইনের সদস্যরা বহরমপুরের খাগড়া এলাকার কৈলাসতলা আমিরুদ্দিন লেনের বাসিন্দা অভিযুক্ত দম্পতি কিশোর ভকত ও জয়ন্তী ভকতের বাড়ি থেকে শিবুকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পরে ওই রাতে তাকে সরকারি হোমে রাখা হয়। ওই ঘটনায় বহরমপুর থানায় দু’টি পৃথক লিখিত অভিযোগও দায়ের হয়। প্রতিবেশী এক মহিলা ছাড়াও মুর্শিদাবাদ চাইল্ড লাইনের তরফেও থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু তার আগেই অভিযুক্ত দম্পতি তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। |
ওই ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪২, ৩২৩ ও ৩২৪ ধারায় মামলা দায়ের করার পাশাপাশি জুভেনাইল জাস্টিস কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অফ চাইন্ড অ্যাক্টেও মামলা রুজু করে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পরে গত ১৩ জুলাই আদালতে আত্মসমর্পণ করে ওই দম্পতি জামিনে ছাড়া পান। এর পরেই সোমবার ছেলেকে নিজের হেফাজতে রাখার দাবি জানিয়ে বহরমপুরের সিজেএম আদালতে আবেদন করেন ওই বালকের মা কল্পনা সিংহ। ওই আবেদনের ভিত্তিতে হোম কর্তৃপক্ষকে মঙ্গলবার শিবুকে হাজির করানোর নির্দেশ দেয় সিজেএম আদালতের বিচারক। সেই মতো শিবুকে এদিন আদালতে হাজির করানো হয়। আদালত চত্বরে এদিন কল্পনাদেবী বলেন, “আমার ছেলেকে আমি বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমার কাছে ছেলেকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।” মুর্শিদাবাদ চাইল্ড লাইন অবশ্য তার বিরোধিতা করেছে। চাইল্ড লাইনের পক্ষে আইনজীবী স্বরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই বালক হোমে ভাল রয়েছে। তাকে এখনই তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলে টাকার বিনিময়ে ফের অন্য কারও বাড়িতে পরিচারকের কাজে নিয়োগ করবে। ফলে এখনই ওই বালককে মায়ের কাছে যেন ফিরিয়ে দেওয়া যেন না হয়।” কল্পনা সিংহের আইনজীবী জয়দেব মণ্ডল অবশ্য বলেন, “আমার মক্কেলের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরে। ফলে এত দূর থেকে বহরমপুরে এসে ছেলের দেখাশোনা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে মায়ের কাছে ওই বালককে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। এছাড়া পশ্চিম মেদিনীপুরের কোনও হোমে যাতে ওই বালককে রাখা যায় সে ব্যাপারে বিচার-বিবেচনা করার জন্য আদালতের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।”
এ দিকে দু-পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে বিচারক ওই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আগামী ৩১ জুলাই। ওই দিন দু’পক্ষের শুনানি শেষে শিবু হোমে থাকবে না কী তাকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবেসে ব্যাপারে বিচারক তাঁর সিদ্ধান্ত জানাবেন। |