|
|
|
|
দুর্ঘটনাস্থলে হাসপাতাল সুপার, বাঁচলেন খালাসি |
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
দায়িত্ব এড়ানো নয়, চিকিৎসক ও পুলিশের এক ‘অন্য চেহারা’ দেখল ঝাড়গ্রাম। সবার সদর্থক চেষ্টায় বাঁচল একটি প্রাণ।
ঝাড়গ্রামের রাধানগরে সোমবার রাতে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রাকের মধ্যে বেকায়দায় আটকে পড়া খালাসির প্রাণ বাঁচাতে পৌঁছে গেলেন জেলা হাসপাতালের সুপার। পে-লোডার, গ্যাসকাটার জোগাড় করলেন এসডিপিও। সাহায্যের হাত বাড়ালেন এলাকাবাসীও। সম্মিলিত চেষ্টায় প্রাণ বাঁচল বছর পঁচিশের শেখ রবিবুলের।
বাঁকুড়ার ফুলকুসমা থেকে স্টোনচিপস নিয়ে হলদিয়া যাওয়ার পথে রাধানগরে চালক নিয়ন্ত্রণ হারানোয় রাস্তার পাশের স্কুলবাড়ির দেওয়ালে ধাক্কা মারে ট্রাকটি। দুমড়ে যায় চালকের কেবিন। সেখান থেকে জখম চালককে উদ্ধার
|
ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার সুদীপ কাঁড়ার।
ছবি: দেবরাজ ঘোষ |
করতে খুব একটা বেগ পাননি স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু চালকের পাশের আসনে থাকা রবিবুলের ডান পা থেকে কোমর পর্যন্ত ওই কেবিনেই আটকে ছিল। ধাক্কার চোটে তাঁর বাঁ হাতের দু’টি আঙুল কাটা পড়ে। অঝোরে রক্ত ঝরছিল শরীর থেকে।
দুর্ঘটনার মিনিট পনেরোর মধ্যে সোমবার রাত সওয়া ৮টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান এসডিপিও (ঝাড়গ্রাম) সন্তোষকুমার মণ্ডল। ঝাড়গ্রাম হাসপাতাল থেকে দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়। কিন্তু রবিবুলকে বার করা যাচ্ছিল না। সন্তোষবাবু বলেন, “রবিবুলের আর্তনাদে স্থির থাকতে পারছিলাম না। অথচ, টানাটানি করতে গেলে ক্ষতির আশঙ্কা ছিল।” সন্তোষবাবু ফোন করে পে-লোডার, গ্যাসকাটার-এর খোঁজ করতে থাকেন।
উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন গ্যাসকাটার আনতে লেগে যায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা। তার মধ্যে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা কোনও মতে কেবিনে ঢুকে রবিবুলকে জল খাওয়ান। কিন্তু ক্রমে নিস্তেজ হয়ে পড়ছিলেন রবিবুল। পরিস্থিতি দেখে পুলিশের তরফে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার সুদীপ কাঁড়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলা হয় চিকিৎসক দল পাঠাতে। কিন্তু তা সময়সাপেক্ষ বলে সুদীপবাবু এক জনের মোটরবাইকের পিছনে চেপে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছন। রাত ১১টা নাগাদ রবিবুলকে বার করা সম্ভব হয়। সুদীপবাবু নিজে রবিবুলকে অ্যাম্বুল্যান্সে চিকিৎসা শুরু করেন। নিয়ে যান হাসপাতালে। |
|
তখনও দুর্ঘটনাগ্রস্ত লড়িতে আটকে রবিউল। |
সরকারি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে যেখানে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ প্রায়ই ওঠে, সেখানে সুপার পদমর্যাদার এক চিকিৎসক এই বাড়তি দায়িত্ব নিলেন কেন?
সুদীপবাবুর সংক্ষিপ্ত জবাব, “আমি ডাক্তার। ডাক্তারের কাজ করেছি। পুলিশ এবং এলাকাবাসীর জন্যই ছেলেটিকে বাঁচানো গিয়েছে।”
তবে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চিকিৎসক হিসেবে বরাবরই জনপ্রিয় কর্তব্যপরায়ণ সুদীপবাবু। এক সময় পশ্চিম মেদিনীপুরেরই গোপীবল্লভপুর ২ ব্লকের তপসিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন। ২০০৬ সালে তাঁর বদলি রুখতে এলাকাবাসী পথ অবরোধ পর্যন্ত করেন। আন্দোলনের চাপে তখনকারমতো স্থগিত হয়ে গিয়েছিল বদলি। সোমবার ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে পায়ে অস্ত্রোপচার হয় রবিবুলের।
চিকিৎসকদের বক্তব্য, পায়ের হাড় ও মাংসপেশির ক্ষতি হয়েছে ওই যুবকের। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের রাজরামপুরে রবিবুলের বাড়ি। মঙ্গলবার তমলুকের এক নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তি করান পরিবারের লোকেরা। ঝাড়গ্রাম ছাড়ার আগে রবিবুল বলেন, “পুলিশ ছিল, রাধানগরের লোকেরা ছিলেনসবার চেষ্টাতেই বেঁচে গেলাম। তবে ডাক্তারবাবু আলাদা!” |
|
|
|
|
|