সমস্যাটা শুরু হয়েছিল শরদ পওয়ারের এনসিপি-কে নিয়ে। এ বার তা ঢুকে পড়ল কংগ্রেসের ঘরেও।
কংগ্রেসের সঙ্গে দর কষাকষি করতে গিয়ে এত দিন এনসিপি শিবির থেকে বলা হচ্ছিল, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পৃথ্বীরাজ চহ্বাণকে সরানো হোক। তাদের দাবি মানা না হলে কেন্দ্রে মনমোহন সিংহের সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছে এনসিপি। এর মধ্যেই রাজ্যে কংগ্রেস বিধায়কদের একটা বড় অংশ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দলীয় নেতৃত্বের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এবং তাঁদের তির পৃথ্বীরাজের বিরুদ্ধেই। একটি সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী কার্যত ‘ধরাছোঁওয়ার’ বাইরে বলে অভিযোগ করেছেন ‘বিদ্রোহী’রা। রাজ্যের ৮২ জন কংগ্রেস বিধায়কের মধ্যে ৪৩ জনই মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব বলেও দাবি ওই সূত্রের।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানিকরাও ঠাকরে অবশ্য দলের একাংশের এই ক্ষোভকে প্রকাশ্যে গুরুত্ব দিতে নারাজ। সূত্রের দাবি, ‘বিদ্রোহী’ বিধায়কেরা ঠাকরের কাছে নালিশ জানাতে গিয়ে বলেছেন, পৃথ্বীরাজের জমানায় শিক্ষা, সেচ, স্বাস্থ্য-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্পের কাজ আটকে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে গড়িমসি করেন এবং দলের স্বার্থ দেখেন না। তাৎপর্যপূর্ণ হল, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করা এই বিধায়কেরা সকলেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখ ও অশোক চহ্বাণের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তথা এনসিপি-সঙ্কট নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বয়ং কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার গত সপ্তাহের বৈঠকে হাজির ছিলেন না শরদ পওয়ার। মন্ত্রিসভার পরবর্তী বৈঠক বৃহস্পতিবার। তার আগে কংগ্রেস ও এনসিপি দুই শিবিরই সমস্যার সমাধান করতে চাইছে। এনসিপি অবশ্য প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে, ইউপিএ-র মধ্যে সমন্বয় কমিটি ও শরিকদের মতকে গুরুত্ব দেওয়ার মতো দাবি মানা না হলে তারা সরকার থেকে বেরিয়ে যাবে। বুধবারের মধ্যে ওই সব দাবি মানতে হবে বলে আজ ফের দাবি তুলেছে এনসিপি। তাদের বক্তব্য, না হলে সমর্থন তুলে নিয়ে সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করবে তারা। এর ধাক্কা যে মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস-এনসিপি জোটেও লাগবে, সেটাই স্বাভাবিক।
কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, শরদ পওয়ারের ভাইপো তথা রাজ্যের মন্ত্রী অজিত পওয়ারের দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছেন পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ। সে কারণেই শরদ পাওয়ার কেন্দ্রে কংগ্রেসের উপর চাপ তৈরি করেছেন। আবার দুর্নীতির প্রশ্নে বিলাসরাও দেশমুখ বা অশোক চহ্বাণকেও আড়াল করতে নারাজ পৃথ্বীরাজ। তাই দুই শিবিরেরই রাগ গিয়ে পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর উপর। তবে পৃথ্বীরাজকে এখনই সরানো উচিত হবে না বলে মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা। কারণ সে ক্ষেত্রে কংগ্রেস দুর্নীতির প্রশ্নে আপস করছে বলে অভিযোগ তুলতে পারে বিজেপি। তা ছাড়া পৃথ্বীরাজ যা করছেন, শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশেই করেছেন বলেও কংগ্রেস শিবির থেকে বলা হচ্ছে। অন্য দিকে এনসিপি-র অনেক নেতারই বক্তব্য, মহারাষ্ট্রের বেশ কিছু জেলায় খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বহু জায়গাতেই কৃষক অসন্তোষ বাড়ছে। এই অবস্থায় জোট বজায় রেখেও সরকার থেকে বেরিয়ে এলে মানুষের অসন্তোষ এড়ানো সম্ভব। সে ক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতেও সমস্যা হবে না।
কংগ্রেস স্বাভাবিক ভাবেই চাইছে না, এনসিপি সরকার থেকে বেরিয়ে যাক। পওয়ারকে বোঝানোর জন্য সব
রকম ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। দুই শিবিরের মধ্যে দৌত্যের কাজটা করছেন আহমেদ পটেল এবং প্রফুল্ল পটেল।
পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ নিজেও দিল্লিতে আসছেন। কংগ্রেসের বক্তব্য জানার পরে আগামিকাল এনসিপি নেতারা ফের বৈঠকে বসবেন। সেখানেই চূড়ান্ত ফয়সালা হবে বলে দলের তরফে জানানো হয়েছে। |