|
|
|
|
রাষ্ট্রপতি প্রণব |
উচ্ছ্বাসে অকাল হোলি-দেওয়ালি শিলিগুড়িতে |
কৌশিক চৌধুরী • শিলিগুড়ি |
রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায় নির্বাচিত হতেই কোথাও শুরু হোলি। আবার কোথাও যেন অকাল দেওয়ালি। ভরা বর্ষায় এই দৃশ্যই দেখা গেল শিলিগুড়ি শহরে।
দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের উদ্যোগে সবুজ আবির উড়িয়ে লাড্ডু বিলি করে শুরু হল উৎসব। অনেক রাত পর্যন্ত পুড়ল আতসবাজি। নাচে-গানে উদ্বেল হল হিলকার্ট রোডের হাসমি চক। রবিবার বিকাল থেকে শুরু হওয়া উৎসব চলল গভীর রাত অবধি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দেখা গেল রাস্তার ধারে গাড়ি, বাইক, সাইকেল রেখে উৎসবে সামিল হলেন শহরবাসীরাও। রাস্তার ধারে মঞ্চ হলে যা হয়! হিলকার্ট রোডের একদিক বন্ধ হয়ে গেল। তাতে যান চলাচলে বিঘ্নও ঘটল। দুর্ভোগও হল অনেকের। সম্ভবত সে কথা মাথায় রেখেই দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস (সমতল) সভাপতি শঙ্কর মালাকারকে বারবার বলতে শোনা গেল, “প্রণববাবু বহুবার শিলিগুড়ি এসেছেন। ওঁর এই বিরাট সম্মানের মুহূর্তে আমরাও সাক্ষী হয়ে থাকতে চেয়েছি। উনি বরাবর শিলিগুড়ির আপনজন। সাধারণ মানুষ উৎসবে মেতে ওটায় হিলকার্ট রোডে যান চলাচলে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। অনেকের অসুবিধে হয়েছে। সে জন্য আমরা দুঃখিত।”
কংগ্রেস সূত্রের খবর, প্রথমে শহরের প্রাণকেন্দ্র হাসমিচক বা গাঁধীচককে বাদ রেখে অন্যত্র বড় মাঠে অনুষ্ঠান করার চিন্তাভাবনা হয়। কিন্তু ঘরোয়া সভায় জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার জানিয়ে দেন, এই হাসমি চকের অনুষ্ঠান মঞ্চের রাস্তা ধরেই দুই বছর আগে (২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস) প্রণববাবু নতুন জেলা কংগ্রেস দফতর বিধান ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন। তাই কংগ্রেস নেতারা বেছে নেন এই জায়গাটিকে। একে বৃষ্টিহীন ছুটির রবিবার বিকাল। তার উপরে অনুষ্ঠান। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ অনুষ্ঠান শুরুর দুই ঘন্টার মধ্যেই অবশ্য হিলকার্টরোডের একপাশ মানুষের ভিড়ে উপচে পড়ে। গাড়ির লম্বা লাইনে যানজট দেখা দেয়। বিলি হয় কয়েক হাজার লাড্ডু। |
|
রাষ্ট্রপতি প্রণব। শিলিগুড়িতে অকাল-দেওয়ালি। রবিবার। ছবি: কার্তিক দাস। |
শিলিগুড়ি ট্রাফিকের আইসি হেমন্ত দাসের নেতৃত্বে ট্রাফিক পুলিশ কর্মীরা ভিড় সামলাতে হিমসিম খান। লোহার ব্যারিকেড দাঁড় করিয়ে রাখতে সমস্যায় পড়েন পুলিশ কর্মীরা। শেষ অবধি হাসমিচক থেকে যাদব সমিতি অবধি হিলকার্ট রোডের একপাশে যানচলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। বাধ্য হয়ে মাইকে জেলা কংগ্রেস সভাপতিকে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলতে হয়, “আমরা বুঝতে পারছি অনেকের সমস্যা হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের অফিসার, কর্মীদের অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু এই দিনটা আপনারা সবাই একটু ধৈর্য্য ধরুন। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখুন।” প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছবির কাটআউট, আলো, হোর্ডিং দিয়ে গত শনিবার থেকে হাসমিচক ঢেকে ফেলেছিল কংগ্রেস। সঙ্গে প্রণববাবুর জীবনের নানা উল্লেখযোগ্য ঘটনার ছবি সম্বলিত মঞ্চ। আলো, আতসবাজি, ফুলঝুরির মধ্যে দিতে রাষ্ট্রপতি প্রণববাবুর ছবির উন্মোচন কিছুই বাদ রাখা হয়নি।
অনুষ্ঠানে এসে অনেকটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন মেয়র গঙ্গোত্রী দেবী। মেয়র বললেন, “উনি আমাদের অভিভাবকের মত। যেখানেই দেখা হত শিলিগুড়ির কথা জানতে চাইতেন। নানা প্রকল্প, অর্থের কথা বলতাম, বলতেন ধৈর্য্য ধর হবে। ওঁর চেষ্টায় দীর্ঘদিন আগে শিলিগুড়িতে মেয়েদের একটা স্বনির্ভর প্রকল্প চালু হয়েছিল। মহানন্দা সেতু, ইস্টার্ন বাইপাস, মত আজকের আধুনিক শিলিগুরি অনেক কিছুই ওঁর সাহায্যের ফসল।” কংগ্রেস নেতা সুবীন ভৌমিক, নান্টু পাল, কুন্তল ঘোষেরা জানান, ‘ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে রাস্তায় নেমেছে গোটা শিলিগুড়ি।’
আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন সিপিম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, “আমি একজন বাঙালি। প্রণব মুখোপাধ্যায়ও বাঙালি। এই একটা আবেগেই আমি খুশি। আরও ভাল লাগছে হয়ত কোনওদিন দেখা হলে দেশের রাষ্ট্রপতি আমাকে নাম ধরে ডাকবেন। আজ, বার বার মনে পড়ছে ওঁর কথা।” অশোকবাবুর অভিমত, “কংগ্রেস যা করছে তা ঠিক নয়। প্রণববাবু এখন দেশের রাষ্ট্রপতি, তিনি শুধু কংগ্রেসের নন। তিনি রাজনীতির ঊর্ধ্বে।” |
|
|
|
|
|