|
|
|
|
সমস্ত চা বাগানে ভিডিএ চেয়ে আন্দোলন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ফালাকাটা |
চা বাগানের হারানো জমি পুনরুদ্ধার করতে এ বার শ্রমিকদের পরিবর্তনশীল মহার্ঘ ভাতার (ভিডিএ) দাবিতে আন্দোলনে নামছে ডান-বাম শ্রমিক ইউনিয়নগুলি। ২৬ জুলাই সমস্ত বাগানে এক ঘণ্টা গেট মিটিংয়ের কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ৩৪ টি শ্রমিক সংগঠনের কোঅর্ডিনেশন ও ডিফেন্স কমিটি। এরপর অগস্ট মাস জুড়ে শ্রমিকদের নানান দাবি দাওয়া নিয়ে ধর্না, অবস্থান-সহ বড় ধরনের আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছেন তাঁরা। মোর্চার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ সংগঠন বাড়াতে শুরু করলে একের পর এক চা বাগান সিটু-সহ ডান-বাম সংগঠনের হাতছাড়া হতে থাকে। তবে গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে আগের তুলনায় চা বাগানে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ অনেকটা দুর্বল বলে মনে করছেন শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতারা। বিকাশ পরিষদের গোষ্ঠী কোন্দল কাজে লাগিয়ে নতুন করে আন্দোলনের মাধ্যমে হারানো জমি পুনরুদ্ধারের পথ হিসাবে ডান-বাম দলগুলি ভিডিএ নিয়ে আন্দোলনে নামছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। শ্রমিক ইউনিয়নগুলির অভিযোগ, যে ভাবে দিনের পর দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ক্রমশ বাড়ছে তাতে চা বাগানে শ্রমিকরা স্বল্প টাকায় কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। ২০১০ সালে তৎকালীন বাম সরকার বাগানে ভিডিএ চালু করা নিয়ে ডিভিশনাল কমিশনারকে চেয়ারম্যান করে কমিটি তৈরি করে। নয়া সরকারের কাছে ওই কমিটির রিপোর্ট পেশ করা হয়। শ্রমমন্ত্রী তিন জনের কমিটির রিপোর্ট দেখার পরে মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে কী ভাবে ভিডিএ চালু করা যায় তা নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলির কাছে ছ’মাস সময় চান। তার পরে আট মাস পেরিয়ে গেলেও রাজ্য সরকার ভিডিএ চালুর ব্যাপারে উদ্যোগী না-হওয়ায় আন্দোলনে নামার কথা ঘোষণা করা হয়। আগস্ট মাস জুড়ে কী ভাবে আন্দোলন হবে তা নিয়ে ৫ অগস্ট দুই যৌথ শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটি মিলিত ভাবে শিলিগুড়িতে বৈঠক করে রূপরেখা তৈরি করবে।
শ্রম মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “পরিবেশ বা পরিস্থিতি না থাকায় এতদিন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে তাড়াতাড়িই আমরা মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে ভিডিএ কী ভাবে চালু করা যায় তা নিয়ে বৈঠক করব।” তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়ন অবশ্য এ ধরনের আন্দোলনের তীব্র বিরোধিতা করেছে। রাজ্য তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দোলা সেন বলেন, “ছ মাসের জায়গাতে আট মাস সময় লেগেছে বলে কোনও মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়নি। বাম আমলে তো শ্রমিকদের জন্য কিছু হয়নি। ৩ বছর অন্তর দু থেকে আড়াই টাকা মজুরি বৃদ্ধি হয়েছে। নয়া সরকার আসার পর চা শ্রমিকদের মজুরি এক ধাপে ২৭ টাকা বেড়েছে। এ ধরনের আন্দোলন কোনও ভাবে সমর্থনযোগ্য নয়।” কোঅর্ডিনেশন কমিটির আহ্বায়ক চিত্ত দে বলেন, “জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। শ্রমিকরা খুবই দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি মজুরি বাড়াবার বিষয়টি মেনে নিয়ে বাম সরকার কমিটি তৈরি করে। তবে এই দাবিতে অগস্ট মাস জুড়ে বাগানে নানান ধরনের আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া হবে।” ডিফেন্স কমিটির আহ্বায়ক সমীর রায় বলেন, “বাম সরকারের আমলে ভিডিএ ব্যবস্থা বন্ধ হয়। তার আগে পরিবর্তনশীল মহার্ঘ ভাতা চালু ছিল। এখন ফের সেটা চালু হওয়াটা দরকার। এর জন্য আমরা আন্দোলন করব।” জেলা সিটু নেতা জিয়াউল আলম বলেন, “ছ মাসের সময় চেয়ে সরকার মহার্ঘ ভাতা নিয়ে উদ্যোগ হয়নি। এর বিরুদ্ধে আমরা মিলিত ভাবে আন্দোলনে যাচ্ছি।” আরএসপি দলের শ্রমিক ইউনিয়ন ইউটিইউসি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষের কথায়, “পরিবর্তনশীল মহার্ঘ ভাতার দাবি নিয়ে চা বাগানের মাটি পুনরুদ্ধারের বিষয়টি ঠিক নয়। বাম আমলে শ্রমিক কল্যাণে যে কাজ হয়েছে তা এই আমলে হয়নি। ভিডিএ ও নুন্যতম মজুরি কত হওয়া উচিত তা বাম সরকার ঠিক করে যায়” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “বর্তমান সরকার শ্রমিকদের নিয়ে তেমন ভাবছে না। চা বাগানের সমস্যা নিয়ে আলোচনায় বসার জন্য মুখ্যমন্ত্রী এবং শ্রমমন্ত্রীকে আবেদন করা হলেও জবাব আসেনি।” মালিক ভিডিএর মত বাড়তি চাপ নিতে নারাজ। ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মূখ্য উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, “এক দশক ধরে ক্ষতির পর হাল কিছুটা ফিরেছিল। বাড়তি শ্রমিকদের মজুরির চাপ-সহ তেমন ভাবে পাতা না মেলায় বাগানগুলি আর্থিক দিক থেকে ভাল অবস্থায় নেই। বাড়তি চাপ নেওয়ার অবস্থা নেই।” |
|
|
|
|
|