ডিরেক্টর নির্বাচন ঘিরে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। এ বার চেয়ারম্যান নির্বাচন ঘিরেও সামনে আসতে চলেছে তৃণমূলের কোন্দল। আগামী ২৫ জুলাই মেদিনীপুর কো-অপারেটিভ এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান নির্বাচন। এই নির্বাচন ঘিরে ইতিমধ্যেই বিভাজিত তৃণমূলের দুই পক্ষ। যদিও দলের জেলা নেতৃত্ব সর্বসম্মতিক্রমে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান মনোনীত করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তৃণমূলের জেলা নেতা অজিত মাইতি বলেন, “আলোচনার মাধ্যমেই সব কিছু হবে।”
যদিও তৃণমূল সূত্রের খবর, ‘ক্ষমতাসীন’ গোষ্ঠীকে চাপে রাখতে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে ‘বিক্ষুব্ধ’ গোষ্ঠী। তাদের পছন্দের কাউকে চেয়ারম্যান হিসেবে প্রস্তাব না করলে পাল্টা নাম প্রস্তাবের দিকে এগোতে পারেন ‘বিক্ষুব্ধরা’। সে ক্ষেত্রে ভোটাভুটি হবে। রুরাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক দীর্ঘদিন সিপিএমের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তখন ডিরেক্টর নির্বাচনে ভোটভুটি হত না। দলীয় স্তরে আলোচনার পর একটিই প্যানেল জমা পড়ত। সকলে সেটিকে সমর্থন করতেন। তবে এ বার ডিরেক্টর নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসে পড়ে। রাজ্যে পালাবদলের পর গত অক্টোবরে এখানে অনাস্থা আনা হয়। ১৫ অক্টোবর অনাস্থা ভোট হয়। জয়ী হয় তৃণমূল। সিপিএমের অভিযোগ ছিল, তাঁদের সমর্থকদের আটকে রেখে, সন্ত্রাস করে জিতেছে তৃণমূল। সেই সময় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান হন বীরেশচন্দ্র দেব ও ভাইস চেয়ারম্যান মিহিরকুমার চন্দ্র। ক্রমে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। ব্যাঙ্ক পরিচালনা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় তৃণমূলের মধ্যে। গত ৩০ জুন ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর নির্বাচন হয়। জেলা তৃণমূলের ‘ক্ষমতাসীন’ গোষ্ঠী প্রাক্তন ভাইস চেয়্যারম্যান মিহিরকুমার চন্দ্র-সহ ১২ জন ডিরেক্টরের তালিকা দেন। পাল্টা প্যানেলও জমা পড়ে। তাতে ব্যাঙ্কের পূর্বতন চেয়ারম্যান বীরেশচন্দ্র দেব-সহ ১২ জনের নাম ছিল। ৭৮ জন প্রতিনিধি ডিরেক্টর নির্বাচনে ভোট নেন। গণনা শেষে দেখা যায়, ‘বিক্ষুব্ধ’ গোষ্ঠীই জয়ী হয়েছে। ‘ক্ষমতাসীন’ গোষ্ঠীর প্যানেল থেকে একজনই জয়ী হন, তিনি পূর্বতন ভাইস চেয়ারম্যান। দ্বন্দ্বের জেরে পরিস্থিতি এমনই জায়গায় পৌঁছেছিল যে ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও হারতে হয়েছে তৃণমূলের সবং ব্লক সভাপতি সভাপতি প্রভাত মাইতি, গড়বেতা ৩ ব্লক সভাপতি নিমাই বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।
এ বার আগামী ৫ বছরের জন্য স্থায়ী বোর্ড তৈরি হবে। তাই ক্ষমতা হাতছাড়া করতে নারাজ দু’পক্ষই। নিজেদের অনুগামীকে চেয়ারম্যান পদে রাখতে শুরু হয়েছে তৎপরতা। নির্বাচিত ডিরেক্টরদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের জেলা নেতা চিত্ত গরাই, প্রদীপ পাত্র প্রমুখ। আগামী ২৫ তারিখ চেয়ারম্যান নির্বাচন। তবে রবিবার পর্যন্ত এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। দলীয় সূত্রে খবর, ২৫ তারিখ চেয়ারম্যান হিসেবে যাঁর নাম প্রস্তাব করা হবে সেখানে যদি আগের চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যানের নাম থাকে, তাহলে পাল্টা নাম প্রস্তাব করতে পারে ‘বিক্ষুব্ধ’ গোষ্ঠী। দলের এক জেলা নেতার মন্তব্য, “মাত্র ১২ জন যদি ঐক্যমতে পৌঁছতে না পারেন, সেটা দুর্ভাগ্যের। চেয়ারম্যান নির্বাচনে ভোটাভুটি হলে তা অনভিপ্রেত হবে।”
|