কাগজের খবর-ছবিই ফিরিয়ে দিল সুব্রতকে
কোথাও যেন ‘অতিথি’র তারাপদ, কোথাও আদল ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’র কাঞ্চনের সঙ্গে। কোথাও একদম নিজের মতো সুব্রত বারিক।
ক্যানসারে আক্রান্ত ঝাড়গ্রামের কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের একাদশ শ্রেণির এই কৃতী পড়ুয়ার মনে হয়েছিল, ‘বেঁচে থেকে কী হবে’? তাই বাড়ি থেকে পালানো। এমনকী, ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’ও। কিন্তু বছর সতেরোর সুব্রত দিল্লি থেকে কন্যাকুমারিকা ঘুরেও সে চেষ্টায় সফল হয়নি। কিন্তু বেড়ানোর নেশা তাকে পেয়ে বসেছে বলে দাবি প্রায় পাঁচ মাস নিখোঁজ এই কিশোরের। রবিবার জানা গিয়েছে, বীরভূমের তারাপীঠের একটি লজে পরিচয় লুকিয়ে কাজ করছিল সে।
তারাপীঠে হোটেল মালিকের সঙ্গে সুব্রত। ছবি:সব্যসাচী ইসলাম
ঝাড়গ্রামের নেকড়াশুলি গ্রামের বাসিন্দা সুব্রতর কথায়, “ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ব বলে মনে একটা আশঙ্কা ছিল। ডাক্তারেরাও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, অস্ত্রোপচারের পরে হয়তো আমি নিজের পায়ে আর চলতে পারব না। বেঁচে থেকে কী করব, এটা ভাবতেই-ভাবতেই অনেক জায়গায় চলে গিয়েছি। নানা জায়গায় একাধিক বার সুইসাইডের চেষ্টাও করেছি। শেষ পর্যন্ত কোথাও সফল হইনি। কিন্তু ওই ভাবেই বেড়ানোর নেশাটা ধরে গিয়েছে আমার।”
গত ১৬ এপ্রিল মুম্বইয়ের হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল হাড়ের ক্যানসারে (অস্টিওসারকোমা) আক্রান্ত সুব্রতর। সে জন্য তার সহপাঠী-শিক্ষকেরা টাকাও সংগ্রহ করছিলেন। কিন্তু গত ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে স্কুল হস্টেল থেকে স্টেশনে যাওয়ার নাম করে সুব্রত নিখোঁজ হয়। শনিবারই ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’য় ছাপা হয়েছিল সে খবর।
রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ঝাড়গ্রামের নেকড়াশুলি গ্রামের মাঠে চাষের কাজের দেখভালে ব্যস্ত সুব্রতর মা রঙ্গলতাদেবীর মোবাইল বেজে ওঠে। ফোনের অপর প্রান্তে আশিস মণ্ডল, যাঁর তারাপীঠের হোটেলে কাজ করছিল সুব্রত। আশিসবাবু জানান, সংবাদপত্রে ছবি দেখে সুব্রতকে জেরা করে বাড়ির নম্বর পেয়ে তিনি ফোন করছেন। রঙ্গলতাদেবী বলেন, “গত পাঁচ মাস অসহ্য মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত কাটিয়েছি। যাঁদের জন্য ওর খবর পেলাম, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। ছেলেটা এত দিন কোথায় কাটাল কে জানে?”
কোথায় ছিল সুব্রত? কিশোর জানাল, বাড়ি ছাড়ার সময়ে তার হাতে ছিল মাত্র সাড়ে ৪ হাজার টাকা। ট্রেনে-বাসে বিনা টিকিটে সুব্রত হাওড়া, কাকদ্বীপ, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, কন্যাকুমারী, দিল্লি, মুম্বই গিয়েছে। একমাত্র দার্জিলিঙে ঠান্ডায় কাবু হয়ে হোটেলে উঠেছিল। বাকি সর্বত্র ‘ভোজনং যত্রতত্র শয়নং হট্টমন্দিরে’। গত ২১ এপ্রিল রাতে সুব্রত তারাপীঠে পৌঁছে একটি হোটেলে ‘বয়’ হিসেবে কাজ নেয়। ওই হোটেলের অন্যতম মালিক নব্যেন্দু দাস বলেন, “দেখে মনে হয়েছিল, ছেলেটার প্রতিভা আছে। ও আমার ছেলেকে পড়াতও। ভাবতে পারিনি, এ ভাবে পরিচয় গোপন রেখে কাজ করবে। ‘বাড়ি যাব’ বলে হঠাৎ কাজ ছেড়ে দিল!”
যাঁর সাহায্যে সুব্রত বাড়ি ফিরছে সেই হোটেল-মালিক আশিস মণ্ডল বলেন, “অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করে সব জানতে পারি। ওকে বোঝাই, বাড়ির লোকেদের কাছে না ফিরলে, তাঁদের কষ্ট দেওয়া হবে।”
এ দিন বিকেলে ঝাড়গ্রাম থেকে গাড়ি ভাড়া করে তারাপীঠের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন সুব্রতর সম্পর্কিত জ্যাঠামশাই সন্তোষকুমার বারিক-সহ চার আত্মীয়-পড়শি।
এ বার বাড়ি ফিরবে তো? সুব্রতর জবাব, “আগেই সে ইচ্ছে হয়েছিল। কিন্তু মুখ দেখাব কী করে, তা ভেবেই ফিরিনি। যখনই দেখতাম, কাগজে আমার ছবি বেরিয়েছে, সে জায়গা ছেড়ে দিতাম। এ দিন কাগজটা দেখা হয়নি।”
ফের বাড়ি থেকে পালাবে না কি? জবাব, “বাড়ি ফিরতে চাই।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.