সিএবি-র কি এ বার ‘বেস্ট ড্রেসড্ ক্রিকেটার’ বলে কোনও পুরস্কার চালু করা উচিত?
বিষেণ সিংহ বেদী নামে কেউ যদি বঙ্গ-ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তা হলে এ রকম পরামর্শ উড়ে এলে অবাক হওয়ার কিছু নেই!
ভারতীয় দলের ম্যানেজার থাকাকালীন কঠোর শৃঙ্খলা চালু করার জন্য ‘সুনাম’ আছে বেদীর। রবিবার সিএবি-র বার্ষিক পুরস্কার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসেও যেন সেই ঝলক! মঞ্চে পুরস্কার নিতে আসা স্থানীয় ক্রিকেটারদের পোশাক দেখে বেদী সটান মন্তব্য করে বসলেন, “অনুষ্ঠানে পুরস্কার নিতে আসার সময় পোশাক সম্পর্কে সচেতন থাকা খুব জরুরি। ভারত বিশ্বকাপ জেতার পর দিল্লিতে যখন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসেছিল, তখন দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে, অনেকেই যেমন-তেমন পোশাক পরে চলে এসেছে। অনেকের গায়ে ব্লেজার পর্যন্ত নেই। এখানেও দেখছি, অনেকে জিন্স পরে এসেছে।” বলে বেদী ‘বেস্ট ড্রেসড্ ক্রিকেটার’-এর পুরস্কারটা যেন দিয়েই দিলেন। “একমাত্র লক্ষ্মীরতন শুক্লকে দেখছি ফর্ম্যাল ড্রেসে এসেছে।” |
বেদী নিজে পরে এসেছিলেন ট্রাউজারের সঙ্গে কুর্তা। যা নিয়ে কেউ কেউ বলতে ছাড়লেন না ঠিকই যে, বক্তা নিজে ‘ড্রেস কোড’ মানলেন কোথায়? আর যাঁর সুপারিশে বেদীর কলকাতা আগমন সেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আসতে পারেননি বাবা চণ্ডী গঙ্গোপাধ্যায়ের অসুস্থার জন্য। ঊননব্বইতে রঞ্জি জয়ী বাংলা দলকে এ দিন সংবর্ধনা দেওয়া হল। অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দুভূষণ রায়, উৎপল চট্টোপাধ্যায়রা থাকলেও সৌরভের সঙ্গে অনুপস্থিত স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ও। সারা জীবনের স্বীকৃতি-পুরস্কার হিসেবে এক লক্ষ টাকা এবং স্মারক তুলে দেওয়া হল চুনী গোস্বামীর হাতে। ঝুলন গোস্বামীকে সংবর্ধনা দেওয়া হল প্রথম ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০০ উইকেট নেওয়ার জন্য। ভিড়ের মধ্যে দেখা গেল, বেদীর আগমন নিয়ে তর্ক রয়েছে। বাংলার সবথেকে সফল বাঁ-হাতি স্পিনার উৎপল চট্টোপাধ্যায় যেমন বলে গেলেন, “বেদীর অভিজ্ঞতার কথা শুনে নিশ্চয়ই ছেলেরা উপকৃত হবে। কিন্তু শারীরিক ধকল সহ্য করে কতটা মাঠে দাঁড়িয়ে সাহায্য করতে পারবে সেটা বলা কঠিন।” সংস্থার রাজনৈতিক রং-ও মিলেমিশে ছিল। মঞ্চে জগমোহন ডালমিয়ার পাশে বসা ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। ক’দিন আগেই শোনা যাচ্ছিল সংস্থার নির্বাচনে দু’জনে দু’দিকে। |
কিন্তু নির্বাচনী বাজনাকেও ছাপিয়ে যেন পুরস্কার মঞ্চে পোশাক-বিতর্ক। ট্রাউজার এবং হাতা গোটানো ফুল স্লিভ শার্টে লক্ষ্মীকে বেশ কয়েক বার মঞ্চে উঠতে হল। কখনও তাঁর স্থানীয় ক্লাব মোহনবাগানের হয়ে, যারা এ বারে চারটে ট্রফি জিতেছে। কখনও যুগ্ম ভাবে ‘ক্রিকেটার্স অব দ্য ইয়ার’ নিতে। কিন্তু অনেক বেশি আলোচনা বেদীর দেওয়া ‘পুরস্কার’ নিয়ে। লক্ষ্মী পরে বলছিলেন, “ক্রিকেটজীবনের শুরু থেকে সব অনুষ্ঠানে আমি ফর্ম্যাল ড্রেসেই যাই।” লক্ষ্মীর অনেক সতীর্থকে যা অনুসরণ করতে দেখা গেল না। দাত্তু ফাড়কর বা আন্তঃ স্কুল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজ-এর ছাত্ররা কিন্তু পুরস্কার নিতে উঠল টাই-সহ স্কুল ড্রেস পরে। সিএবি সচিব বিশ্বরূপ দে ব্যাখ্যা দিলেন, “ব্যক্তিগত পুরস্কার-প্রাপকদের ফর্ম্যাল ড্রেস পরে আসতে হবে, এটা আমরা বলে দিই। তার জন্য সিএবি বিশেষ ড্রেসও দেয়। কিন্তু টিমের পুরস্কারের ক্ষেত্রে সে রকম কোনও ড্রেস কোড নেই।”
এমনিতে পুরস্কার-বিতরণী অনুষ্ঠানকে নস্টালজিয়ায় মুড়ে দিয়ে গেলেন চুনী গোস্বামী। ভয়ঙ্কর লেস্টার কিং থেকে নির্দয় রয় গিলক্রিস্টনানা পুরনো কাহিনি উঠে এল তাঁর বক্তব্যে। পোষাক-বিতর্ক নিয়ে চুনীও বলে দিচ্ছেন, “আমি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি। তখনকার দিনে ভাল ভাল ড্রেস কেনার টাকা ছিল না। তবু একটা ফর্ম্যাল ড্রেস আর একটা ব্লেজার অন্তত সব সময় সঙ্গী থাকত। কোনও অনুষ্ঠানে ক্যাজুয়াল পরে পুরস্কার নিতে ওঠা আমি ভাবতেই পারিনি কখনও। আজও পারি না।”
পরে আনন্দবাজারকে শোনালেন তাঁর ক্রিকেটজীবনের একমাত্র স্লেজিংয়ের কাহিনি। হায়দরাবাদ বনাম বাংলা রঞ্জি ম্যাচ ইডেনে। হায়দরাবাদ তখন ভারত-সেরা টিম। সাত জন ভারতীয় ক্রিকেটারে ঠাসা। “আমি জানতাম সাড়ে তিনশোর ওপর তুলতে পারলে আমার দিলীপ দোশী আছে। সহজে ছাড়ব না,” বলে চুনী স্লেজিংয়ের কাহিনিতে ঢুকলেন, “টাইগার ব্যাট করতে ঢুকছে। আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম, ক্যান আই গিভ ইউ আ শর্ট লেগ টাইগার? ও কিছু বলেনি। শুধু তাকাল। কয়েকটা বল পরে শর্ট লেগেই ব্যাট-প্যাড ক্যাচ দিয়ে আউট হল। ফেরার সময় দারুণ উত্তরটা দিয়েছিল টাইগার আই শুডন্ট হ্যাভ অ্যালাউড ইউ দেয়ার!”
আর মঞ্চে পুরস্কার নেওয়ার সময় চুনীর পোশাক? ট্রাউজার, ফুলস্লিভ শার্ট, টাই এবং সিএবি ব্লেজার! |