পনেরো দিনের মধ্যে হাওড়া গ্রামীণ থানা এলাকায় এক যুবক ও দু’জন মহিলা খুন হলেও সেই সব ঘটনার কিনারা এখনও করতে পারল না পুলিশ। ধরা পড়েনি দুষ্কৃতীরাও।
বড় ঘটনাটি ঘটে গত রবিবার রাতে হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের সন্তোষপুর গ্রামে। এই ঘটনায় এসমাতারা বেগম নামে এক গৃহবধূকে খুন করে তাঁর বাড়ির জিনিসপত্র লুঠ করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। তাঁর স্বামী আসমত আলি মিদ্যাকেও চপার দিয়ে কোপায় দুষ্কৃতীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ) অনিলকুমার-সহ জেলা পুলিশের কর্তারা। তার পর থেকে কেটে গিয়েছে চার দিন। কিন্তু এখনও ডাকাতি এবং খুনের ঘটনায় অভিযুক্তেরা অধরা। এসমাতারা ছিলেন বড়গাছিয়া ২ পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের প্রাক্তন সদস্য। স্থানীয় কংগ্রেস নেতা হবিবর রহমান বলেন, “আমাদের এলাকায় এত বড় অপরাধের ঘটনা এর আগে ঘটেনি। এখনও দুষ্কৃতীরা ধরা না-পড়ায় আমরা হতাশ।” জেলা পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “দুষ্কৃতীদের সন্ধানে জোর তল্লাশি চলছে।”
ওই ঘটনার একদিন পরেই মঙ্গলবার ভোরে বাগনানের ঘোড়াঘাটার কাছে পিপুল্যান গ্রামে খুন হন মুর্শিদা বেগম। বিবাহিত মুর্শিদা মায়ের বাড়িতেই নিজের তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকতেন। ওই দিন ভোরে হাত পা বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তাঁকে খুন করা হয়। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “কতগুলি সম্ভাবনা মাথায় নিয়ে পুলিশ এগোচ্ছে। এই ঘটনায় দোষীরা খুব শীঘ্রই ধরা পড়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।”
গত ৫ জুলাই বাউড়িয়া ফেরিঘাটে খুন হয়ে যান ঈশ্বর সাউ নামে বছর তিরিশের এক যুবক। ওই দিন বিকেলে ফেরিঘাটে বন্ধুদের সঙ্গে যখন গল্প করছিলেন তখন তিন জন দুষ্কৃতী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাঁর উপরে হামলা চালায়। তাঁকে গুলি করে মেরে সকলের সামনে দিয়ে দুষ্কৃতীরা উধাও হয়ে যায়।
ঈশ্বর বাউড়িয়া এলাকারই বাসিন্দা। তিনি পেশায় শেয়ারের কারবার করতেন। পুলিশ প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছে, তিনি অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য। কিন্তু সেই সব টাকা তিনি তাঁদের নামে নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট (ডিম্যাট) খুলে তার মাধ্যমে বিনিয়োগ করেননি। পুলিশের অনুমান, কেউ হয়ত অপরাধমূলক কাজকর্ম থেকে অর্জিত টাকা টাকা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য ঈশ্বরকে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই টাকা ঈশ্বর শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেননি। পরবর্তীকালে টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে তাঁর সঙ্গে ঈশ্বরের বিবাদ হয়। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “যে হেতু অপরাধমূলক কাজকর্ম থেকে অর্জিত টাকা ওই ব্যক্তি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য ঈশ্বরকে দিয়েছিলেন, তাই টাকা ফেরত না-পেলেও তিনি বিষয়টিকে প্রকাশ্যে আনতে পারেননি। এই বিবাদের জেরেও খুনের ঘটনাটি ঘটতে পারে।” যদিও সেই ব্যক্তিটি কে, তা এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ।
এ দিকে, ঘটনার পরে প্রায় পনেরো দিন কেটে গেলেও দুষ্কৃতীরা এখনও ধরা না পড়ায় তাঁর বাড়ির লোকজন বেশ ক্ষুব্ধ। ঈশ্বরের ভাই উত্তম সাউ বলেন, “প্রকাশ্যে দাদাকে খুন করে এক দল লোক পালিয়ে গেল। অথচ এখনও পর্যন্ত কাউকেই ধরতে পারল না পুলিশ।” তাঁর মন্তব্য, “দাদার খুনিরা আদৌ ধরা পড়বে তো?” পুলিশের অবশ্য দাবি, তদন্তের কাজ জোর কদমে চলছে। দুষ্কৃতীরা রেহাই পাবে না। |