বাবার শপথগ্রহণের দিন কোন শাড়িটা পরবেন, আগে থাকতেই ভেবে রেখেছেন। কোনটা? “এখনই বলে দিলে তো মজাটাই মাটি হয়ে যাবে!” প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরে সহাস্যে জানালেন কন্যা শর্মিষ্ঠা।
শুধু শপথগ্রহণের দিন নয়, ভবিষ্যতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বাবার সঙ্গে তাঁকে কতটা সক্রিয় ভাবে দেখা যাবে, তা নিয়ে রাজধানীতে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনিই কি নতুন রাষ্ট্রপতির ‘অফিসিয়াল হোস্টেস’ হচ্ছেন? শর্মিষ্ঠার জবাব, “মায়ের যা শারীরিক অবস্থা, তাতে তাঁর পক্ষে বাবার সঙ্গে ঘোরা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে আমায় কিছু দায়িত্ব তো নিতেই হবে।”
চিরকুমার এপিজে আব্দুল কালাম রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে সফরে অন্য কারও যাওয়ার প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু অতীতের পৃষ্ঠা উল্টে দেখা যাচ্ছে, অনেকেই এই ‘অফিসিয়াল হোস্টেস’-এর ভূমিকায় নজর কেড়েছেন। ভি ভি গিরি-র স্ত্রী সরস্বতীর ভূমিকা দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছিল। ফকরুদ্দিন আলি আমেদের স্ত্রী আবিদা আহমেদও ছিলেন যথেষ্ট সক্রিয়। কে আর নারায়ণন অথবা শঙ্করদয়াল শর্মা-র রাষ্ট্রীয় সফরে সব সময় সঙ্গে থাকতেন তাঁদের স্ত্রী-রা। জৈল সিংহ ‘অফিসিয়াল হোস্টেস’ করেন নিজের মেয়েকেই। |
প্রণব-কন্যা শর্মিষ্ঠা। ছবি: পিটিআই |
“আমার অবশ্য অন্য অনেক কাজ রয়েছে। সেগুলি বজায় রেখেই যা করার করতে হবে”, মন্তব্য শর্মিষ্ঠার। তাঁর কথায়, “এ ক্ষেত্রে কোন কাজের গুরুত্ব বেশি, তা ভাবতে হবে। শুধু নৈশভোজে উপস্থিত থাকাটাই তো নয়, অন্যান্য কী দায়িত্ব আছে, তা-ও দেখতে হবে।” ঘুরতে চিরকালই ভালবাসেন শর্মিষ্ঠা। বললেন, “এ বার বাবা রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর নিশ্চয়ই নতুন জায়গায় যাওয়ার সুযোগ হবে!”
সব মিলিয়ে স্পষ্ট যে, ভবিষ্যতের ভূমিকার জন্য মনে মনে প্রস্তুতি শুরু করেছেন প্রণব-কন্যা। আজ সনিয়া গাঁধী এবং রাহুল আসার পর প্রণববাবুর অফিসঘরে মায়ের সঙ্গে ছিলেন তিনিও। বসেছিলেন সোফায়, রাহুল গাঁধীর পাশেই। কিছু পরে সেই আসরে যোগ দেন সস্ত্রীক প্রধানমন্ত্রীও।
আপাতত মেয়ের সবচেয়ে বড় চিন্তা বাবার বইগুলি যাতে ঠিক মতো নিয়ে যাওয়া যায় ‘নতুন বাড়িতে’। তাঁর কথায়, “বাবার জামাকাপড় খুব বেশি নেই। নিজস্ব জিনিস বলতেও খুব কিছু নেই। যা রয়েছে, তা হল রাশি রাশি বই! সেগুলো ঠিক মতো নিয়ে যেতে হবে। হাতের কাছে যে বইটি যখন চাইছেন, সেটা না পেলেই রাগ হয়ে যায় ওনার!” রাষ্ট্রপতি ভবনের নিজস্ব লাইব্রেরি রয়েছে। কিন্তু প্রণববাবুর বেডরুম এবং অফিসে নিজস্ব যে সব বই রয়েছে, সেগুলি ওই লাইব্রেরিতে রাখা হবে না বলেই জানাচ্ছেন শর্মিষ্ঠা। সেগুলি থাকবে প্রণববাবুর স্টাডিতে। প্রণববাবু অর্থমন্ত্রী থাকার সময় বাজেটের আগে নিজের আবেদন চিঠি লিখে বাবাকে জানিয়েছিলেন শর্মিষ্ঠা। রাষ্ট্রপতির কাছে কী চাইবেন দেশবাসীর হয়ে? শর্মিষ্ঠার বক্তব্য, “বাবা যখন যে পদে থেকেছেন, যে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। সেই পদ কাজে লাগিয়ে অনেক কিছু করেছেন, যা আগে দেখা যায়নি। আমি নিশ্চিত, রাষ্ট্রপতি হিসেবেও তিনি অফিসে নতুন মাত্রা যোগ করবেন।”
|