মেননকে জিতিয়েই চোখে পড়েন ইন্দিরার
রাজকীয় রাইসিনা হিল থেকে বহু দূরে বাংলার সেই দরিদ্র গ্রাম মিরাটি। বীরভূমের কীর্ণাহার থেকে মাইল দুয়েক দূরে।
ছেষট্টি বছর আগে বর্ষাকালে যেখানে ডুবে যেত আলপথ। সেখান থেকে আড়াই মাইল কার্যত সাঁতরে, ইউনিফর্ম ছেড়ে গামছা পরে, কীর্ণাহার শিবচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ে পড়তে যেত ক্লাস ফাইভের সদ্য কিশোরটি। ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের কাছে এসে একটু উঁচু জায়গা মেলায় রক্ষে! সেখানে এসে গামছা ছেড়ে ফের শার্ট প্যান্ট পরে স্কুলে যাওয়া। এক বার জল এত বেশি হয়ে গিয়েছিল যে উঁচু ক্লাসের এক দাদা না বাঁচালে ডুবেই গিয়েছিল ছোটখাটো পল্টু!
মাঝে মধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে শ্লেট পেন্সিল ছুঁড়ে গাছে চড়ে আম পাড়া, দল বেঁধে ফুটবল খেলা এবং ধরা পড়লে মায়ের হাতে প্রবল প্রহার জলভাত ছিল তাঁর। সেই গ্রামীণ সারল্য থেকে জীবন শুরু করে এক দীর্ঘ যাত্রা পথ অতিক্রম করে আজ রাইসিনা হিল পৌঁছলেন সে দিনের পল্টু, ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। গাঁধীবাদী কংগ্রেস নেতা এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের পুত্র প্রণব জন্মের পর থেকেই দেখেছেন, ইংরেজ শাসিত পুলিশের হাত থেকে মাসের পর মাস আত্মগোপন করে আছেন বাবা। কখনও গ্রেফতার হচ্ছেন। বাবাকে বাঁচাতে সাধ্যমতো রুখেও দাঁড়াতেন ছোট্ট প্রণব।
সেই জেদ এবং অধ্যবসায়কে সঙ্গে নিয়ে গ্রাম থেকে কলকাতা এবং ক্রমে ভারতের রাজধানীতে পা রাখার বৃত্তান্ত এখন ইতিহাস। ইন্দিরা গাঁধীর মন্ত্রিসভায় ক্রমশ সব চেয়ে আস্থাভাজন হয়ে ওঠা, তাঁর মৃত্যুর পর দল থেকে ছিটকে যাওয়া, আবার সসম্মানে ফিরে আসার ঘটনাও ঢুকে গিয়েছে রাজনৈতিক ইতিহাসের পাতায়।
জন্ম ১৯৩৫-এ। ইতিহাস এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ। সঙ্গে এলএলবি ডিগ্রিও। তত দিনে শান পড়েছে বিখ্যাত স্মৃতিশক্তিতে। কলকাতায় ডাক ও তার বিভাগে কেরানি হিসাবে কর্মজীবন শুরু। তার পরে স্কুল ও কলেজে শিক্ষকতা, সঙ্গে সাংবাদিকতার কাজও।
অজয় মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলা কংগ্রেসে রাজনৈতিক শিক্ষানবিশির পর ১৯৬৯ সালে যোগ দেন জাতীয় কংগ্রেসে। সে বছরেই মেদিনীপুরে উপনির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়েছিলেন ইন্দিরাপন্থীদের প্রার্থী কৃষ্ণ মেনন। মেননের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন প্রণব। তাঁর কৌশলেই সেই যুদ্ধজয়। তখনই ইন্দিরার চোখে পড়ে যান প্রণব। তাঁকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসেন ইন্দিরা। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দ্রুত হয়ে ওঠেন ইন্দিরা গাঁধীর সবচেয়ে আস্থাভাজন। ’৯৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বার রাজ্যসভা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। দু’বার জিতেছেন লোকসভা থেকে (২০০৪ এবং ’০৯)। বাণিজ্য থেকে অর্থ মন্ত্রক, বিদেশ থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন, লোকসভার নেতা এক কথায় বহুরূপে কংগ্রেসে বিরাজ করে গিয়েছেন প্রণব।
মনমোহনের জমানায় তিনিই ছিলেন ইউপিএ সরকারের সঙ্কটমোচনে প্রধান ব্যক্তি। প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গেলে তিনিই ডাকতেন মন্ত্রিসভার বৈঠক। ইন্দিরার সময় ছিলেন অঘোষিত ‘নম্বর টু’। রাজনৈতিক জীবনের শেষেও ফিরে এসেছিলেন সেই দায়িত্বে।
বরাবরই দিল্লির রাজনৈতিক আবহাওয়ায় স্বচ্ছন্দ প্রণববাবু। ঘনিষ্ঠ আলোচনায় বরাবরই বলেছেন, পোশাক, আদব কায়দা, খাদ্যাভাসে আপাদমস্তক বাঙালি হলেও রাজনীতিতে নিজেকে সর্বভারতীয় বলেই মনে করেন তিনি। তবু ২০০৪-এ জঙ্গিপুর থেকে লোকসভা আসনে জিতে অন্য স্পর্শকাতরতা তৈরি হচ্ছিল তাঁর। দেশ-বিদেশ নিয়ে চিন্তার পাশাপাশি সময় দিয়েছেন নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্রকে। সেখানে কুয়ো খোঁড়া থেকে প্রাথমিক স্কুল বানানো, সবেতেই নজর ছিল তাঁর। যার জেরে জঙ্গিপুরের হাফপ্যান্ট পরা বাচ্চারাও তাঁকে চেনে ‘দাদু’ বলে। দৌড়য় তাঁর কনভয়ের সঙ্গে সঙ্গে।
রাইসিনার পাহাড়ে যাওয়ার আগে কবে এবং কী ভাবে সেখানকার মানুষদের ধন্যবাদ জানিয়ে আসতে পারবেন, এখন সেটাই চিন্তা ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতির।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.