চার সন্দেহভাজন জঙ্গির বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলার শুনানি শুরু হল বনগাঁ আদালতে।
২০০৭ সালের ৪ এপ্রিল বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে মহম্মদ ইউনুস, শেখ আবদুল্লা, মুজফ্ফর আহমেদ রাঠোর এবং সামির ওরফে শেখ নঈম নামে ওই চার সন্দেহভাজন জঙ্গিকে আটক করে বিএসএফ। তারা লস্কর-ই-তইবার আত্মঘাতী বাহিনীর সক্রিয় সদস্য এবং সেনাবাহিনীর উপরে আক্রমণ চালাতে এ দেশে ঢোকে বলে সেই সময়ে দাবি করেছিল পুলিশ, বিএসএফ এবং গোয়েন্দারা। সামির ২০০৬ সালে মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত বলেও দাবি সিআইডি-র। ধৃত চার জনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহ, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র-সহ ১২টি ধারায় মামলা করেছিল পুলিশ এবং সিআইডি। |
ধরা পড়ার পরে ওই চার জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বনগাঁর হরিদাসপুর বিএসএফ ক্যাম্পে কর্মরত ১৯৩ নম্বর ব্যাটালিয়নের তৎকালীন কমান্ডিং অফিসার অমিত যাদব। সোমবার বনগাঁ আদালতে আনা হয়। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফাস্ট ট্র্যাক সেকেন্ড কোর্ট) অপরাজিতা ঘোষের এজলাসে অমিত যাদবের সাক্ষ্যগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি অন্যত্র কর্মরত থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। আজ, মঙ্গলবার থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৪৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই মামলার সরকারি আইনজীবী সমীর দাস। আজ, ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্র আদালতে জমা পড়ার কথা। ধৃতেরা এখন আছে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। এ দিন দুপুরে র্যাফ এবং ইএফআরের নিরাপত্তায় সামির-সহ চার জনকে বনগাঁ আদালতে আনা হয়।
ধৃতদের পক্ষের আইনজীবী অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং সুব্রত বসু বিচারকের কাছে দ্রুত বিচার-পর্ব শুরুর আবেদন জানান। সরকারি আইনজীবীও দ্রুত বিচার-পর্ব শেষ করার আর্জি জানান। সিআইডি এই মামলায় চার্জশিট দিয়েছিল ২০০৭ সালের ২৯ জুন মাসে। সরকারি আইনজীবী বলেন, “ধৃতদের বিরুদ্ধে অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকে মামলা থাকায় এবং সাক্ষীদের সময়মতো না পাওয়ায় শুনানিতে দেরি হয়েছে।” ধৃত সামিরের বাড়ি মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে। মজফ্ফর কাশ্মীরের অনন্তনাগের বাসিন্দা। বাকি দু’জন পাকিস্তানের নাগরিক বলে পুলিশ সেই সময় জানিয়েছিল। ২০০৬-এর ১১ জুলাই মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে পরের পর সাতটি বিস্ফোরণে বিপুল প্রাণহানি ঘটে। সামির ধরা পড়ার পরে সিআইডি-র দাবি ছিল, মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনের বিস্ফোণে তার ‘সক্রিয়’ ভূমিকা থাকার কথা সামির ‘নার্কো-অ্যানালিসিস’ পরীক্ষার সময় কবুল করেছে। এ দিন সামির অবশ্য দাবি করে, “আমাকে অন্যায় ভাবে আটকে রাখা হয়েছে।” যদিও সিআইডি-র ধারণা, ধরা পড়ার আগে অন্তত বছর খানেক কলকাতায় ঘাঁটি গেড়ে সামির ছদ্মবেশে বাংলাদেশ এবং কাশ্মীর-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়মিত যাতায়াত করেছে। তার কাছ থেকে এ রাজ্যের ড্রাইভিং লাইসেন্সও মিলেছে। বিস্ফোরণের আগে জঙ্গিদের মুম্বইয়ে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে আরডিএক্স পাচারসবের পিছনেই সামিরের হাত ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছিল। |