কলকাতার প্রাণকেন্দ্র আজ, মঙ্গলবার সাদা-নীল। মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় রং-যুগল। কিন্তু তার ধারক বামপন্থীরা।
এবং রীতিমতো বুকে করে রাখবেন তাঁরা সেই রং!
বুকে করে রাখবেন একটি পরিচয়পত্র। আরও স্পষ্ট ভাবে বললে, একটি ‘ব্যাজ’। যা জামায় আটকে আজ কলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায় আইন অমান্য করতে দেখা যাবে রাজ্য বামফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের।
 আইন অমান্য কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য যে মোটা কাগজের ব্যাজ তৈরি করিয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট, তার রং সাদা-নীল! বামফ্রন্টের ‘ট্রেডমার্ক’ লাল নয়! নিরীহ সাদাও নয়। সাদা-নীল! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয় ‘থিম’ রং। কলকাতাকে যে রঙে রাঙাতে চেয়েছেন বলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আলিমুদ্দিনের কটাক্ষের শেষ নেই! আইন অমান্যের প্রাক্কালে ব্যাজ হাতে পাচ্ছেন বামফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা আর বিস্ময়-কৌতূকমিশ্রিত হাসি ফুটছে তাঁদের মুখে! আর রং পেল না বামফ্রন্ট? এই ব্যাজ প্রকাশ্যে ধারণ মাত্রই তৃণমূল সমর্থকদের টিকা-টিপ্পনি উড়ে এল বলে! হাসতে হাসতে বলছেন তাঁরা।
আলিমুদ্দিনের তৈরি ব্যাজে নীল জমির উপরে সাদা অক্ষরে লেখা ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে’। তার নীচে আবার সাদার উপরে নীল অক্ষরে ‘আইন অমান্য’। মূল্যবৃদ্ধি, কৃষকদের দুর্দশা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, মহিলাদের উপরে ক্রমবর্ধমান আক্রমণের মতো যে প্রশ্নগুলি জনজীবনে প্রভাব ফেলছে, সে সব নিয়েই আজ কলকাতায় বামফ্রন্টের কেন্দ্রীয় আইন অমান্য। অন্য কর্মসূচির জন্য রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ আগে থেকে ‘বুক’ থাকায় আজ কলকাতায় বামেদের আইন অমান্যের জমায়েত হওয়ার কথা ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে (অধুনা পরিভাষায় ‘ওয়াই’ ক্রসিং)। জমায়েত স্থলের পরিবর্তনের চেয়ে বামফ্রন্টের অন্দরে অবশ্য ঢের বেশি চর্চার বিষয়বস্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে নীল-সাদা কাগজখণ্ড!
কলকাতার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতার ‘থিম’ রং ওই সাদা-নীল। শহরের উল্লেখযোগ্য নানা ভবন, ফুটপাথের ধারের রেলিং, উড়ালপুলের দেওয়াল ওই রঙেই মুড়ে দেওয়া হয়েছে। মায় জেলখানার পাঁচিল পর্যন্ত প্রথাগত লাল ছেড়ে এখন সাদা-নীল। কলকাতা ছেড়ে সাদা-নীলের ‘পরশ’ লাগতে শুরু করেছে জেলা শহরগুলির বিভিন্ন সরকারি ভবনেও। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক গৌতম দেব, মমতার রং-প্রীতিকে ছেড়ে কথা বলেননি সিপিএমের কেউই। বুদ্ধবাবু যেমন বলে থাকেন, “হঠাৎ মনে হল, রং করতে হবে। সাদা-নীল রং করা শুরু হল!” বিধানসভায় বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের তরুণ বিধায়ক আলি ইমরান রাম্জ (ভিক্টর) কটাক্ষ করলেন, মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের হাওয়াই চটির রং সাদা-নীল বলে তৃণমূল সর্বত্র ওই রং-ই লাগাতে ব্যস্ত! বিধানসভায় ধুন্ধুমার। ‘সতর্কিত’ হলেন বাম বিধায়ক। শুধু তা-ই নয়। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী চেনা সাদা-নীল ছেড়ে সাদা হাওয়াই চটি ধরলেন।
এত কিছুর পরে কি না বামফ্রন্টের আন্দোলনেই সাদা-নীল! এক বাম নেতার কথায়, “এ তো মনে হচ্ছে তৃণমূলের আইন অমান্যে যাচ্ছি!” সিপিএমের এক নেতা অবশ্য বলছেন, “একটা ব্যাজ করা হয়েছে। তাতে সাধারণ ভাবেই দু’টো রং আছে। এর পিছনে এত অর্থ খোঁজা অর্থহীন!”
বলছেন বটে। তবে বিশেষ চিঁড়ে ভিজছে না! বামফ্রন্টেরই এক যুব নেতা যেমন মন্তব্য করছেন, “২১ জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূল নেত্রী জমায়েত করবেন। তার চার দিন আগে আমরাই যেন ওদের ‘বি-টিম’ হয়ে নামছি মনে হচ্ছে!” রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিন, ১৯ তারিখ সকালে আলিমুদ্দিনে বামফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হয়েছে। দিল্লিতে চার বাম দলের গৃহীত কর্মসূচি সেখানে আলোচিত হওয়ার সম্ভাবনা। সেই অবসরেই কেউ ‘রং-বিড়ম্বনা’ বৈঠকে তুলে ফেলেন কি না, তা-ই দেখার!
সে অবশ্য পরের কথা। আপাতত মমতারই রঙে শোভিত হয়ে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে তাঁরই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন! যা শুনে ‘স্বভাবরসিক’, রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলছেন, “পুলিশ লাঠি মারবে না বলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় রংয়ের ব্যাজ পরছে। এবার মুখে বন্দেমাতরমটা বলে দিয়েই ষোল কলা পূর্ণ হয়ে যায়!” |
