মদের আসরে গোলমালের সময়ে গুলি করে এক মাছ ব্যবসায়ীকে খুনের জেরে অভিযুক্তের বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁর শাগরেদকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ রায়গঞ্জ থানার বন্দর শ্মশান কলোনি এলাকায় ঘটনার সূত্রপাত হয়। নিহত মাছ ব্যবসায়ী বুদ্ধেশ্বর সরকার (৩০) এবং গণপ্রহারে মৃতের নাম সঞ্জীব ঘোষ (৩৬)। ঘটনার পরে উত্তেজনা থাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “পুলিশ দুটি খুনের ঘটনারই তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে।” পুলিশ জানায়, ওই রাতে বুদ্ধেশ্বর কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে নিজের পাড়ার একটি কালভার্টের সামনে বসে মদ খাচ্ছিলেন। আচমকা গোলমাল শুরু হলে মহেন্দ্র সিংহ নামে এক যুবক তাঁকে গুলি করে পালায় বলে অভিযোগ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বুদ্ধেশ্বরকে প্রথমে রায়গঞ্জ হাসপাতালে ও পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর বাবা রাধাবল্লববাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মহেন্দ্রকে ধরে। রাধাবল্লববাবু বলেন, “আমার ছেলে কোনও গোলমালে থাকত না! ওকে যে খুন করল তার কঠোর শাস্তি দাবি করেছি।” মাছ ব্যবসায়ীর মৃত্যুর খবর চাউর হতেই মহেন্দ্রর বাড়িতে ভাঙচুর শুরু করে জনতা। সেই সময় মহেন্দ্রর বন্ধু সঞ্জীব বাসিন্দাদের বাধা দিতে যান। জনতা সঞ্জীবকে রাস্তায় ফেলে লাঠি ও বাঁশ দিয়ে মারধরের পরে ইঁট দিয়ে মাথা থেঁতলে দেয়। পুলিশ গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই যুবককে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। রায়গঞ্জ থানার আইসি সমীর পাল বলেন, “গণপ্রহারে মৃত যুবকের বিরুদ্ধে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের কারবার, খুন, তোলাবাজির একাধিক অভিযোগে মামলা রয়েছে। কারা ওই যুবককে পিটিয়ে মারল তা এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।” ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর পবিত্র চন্দের অভিযোগ, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জেরেই খুন ও পাল্টা খুনের ঘটনা ঘটেছে। দলের জেলা সভাপতি মোহিত সেনগুপ্তের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ করা হবে।” মৃত সঞ্জীববাবুর বাড়িতে বিধবা মা ছাড়া তাঁর স্ত্রী, ৫ বছরের ছেলে রয়েছে। গণপিটুনিতে স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে স্ত্রী শিউলিদেবী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সঞ্জীববাবুর মা সুলেখাদেবী বলেন, “আমার ছেলেকে কয়েক বছর আগে পুলিশ সমাজবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল। এখন সে ভাল হয়ে গিয়েছে। ছেলে শ্মশান সংলগ্ন এলাকায় চালের দোকান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। গণপিটুনির হাত থেকে ছেলেকে বাঁচাতে না পেরে পুলিশ ছেলের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ তুলে গল্প ফাঁদছে। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি।” |