চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যু হয়েছে এক শিশুর, এমনই অভিযোগে বৃহস্পতিবার কালনা মহকুমা হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখালেন মৃত শিশুর পরিবারের লোকজন। এ দিন বেলা ১২টা থেকে তাঁরা দীর্ঘক্ষণ হাসপাতল সুপার অভিরূপ মণ্ডলের কার্যালয় ঘেরাও করে রাখেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত শিশুর নাম সমাপ্তি সাহা (৫)। বাড়ি কৃষ্ণদেবপুর পঞ্চায়েতের পিয়ারিনগর এলাকায়।
মৃত শিশুর পরিবার সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী সমাপ্তি মঙ্গলবার থেকেই জ্বরে ভুগছিল। মাঝে-মাঝেই বমি হচ্ছিল তার। পরিবারের লোকজন দু’জন চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। বুধবার তাতে জ্বর নামলেও বমি বন্ধ হয়নি। রাত ১০টা নাগাদ সমাপ্তির খিঁচুনি শুরু হলে ভয় পেয়ে যান তাঁর পরিবারের লোকজন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে, সেদিনই রাত দেড়টা নাগাদ তাঁরা সমাপ্তিকে কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ সেখানেই মৃত্যু হয় তার। |
হাসপাতা সূত্রে জানা গিয়েছে, সমাপ্তির মৃত্যুর পরে প্রথমে শিশু ওয়ার্ডে ও পরে হাসপাতাল সুপার অভিরূপ মণ্ডলের ঘরে বিক্ষোভ দেখান তার পরিবারের লোকজনেরা। তাঁদের দাবি, বৃহস্পতিবার সকালে এক চিকিৎসক সমাপ্তিকে ওষুধ-পত্র দেন। তিনি বলেন, সমাপ্তি ভাল রয়েছে। কিন্তু এর দেড় ঘন্টা পর একজন শিশু বিশেষজ্ঞ পরিবারের লোকজনদের জানিয়ে দেন, সমাপ্তির অবস্থা ভাল নয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় সমাপ্তির। সমাপ্তির মা মুনমুন সাহা ও অন্যান্য আত্মীয়াদের কান্নার আওয়াজে শিশু বিভাগে ছুটে আসেন হাসপাতালের সুপার অভিরূপ মণ্ডল। মুনমুনদেবীর অভিযোগ, “চিকিৎসা চলাকালীন নার্সরা কোনও সহযোগিতা করেননি। প্রথম থেকে যদি চিকিৎসকেরা সজাগ থাকতেন তা’হলে মেয়ের এই পরিণতি হত না।” সমাপ্তির জ্যেঠু সুব্রত সাহার বক্তব্য, “সকালে যে চিকিৎসক সমাপ্তিকে দেখেছিলেন, তিনি কেন বললেন সমাপ্তির অবস্থা ভাল? হাসপাতালের চিকিৎসকরা যদি একটু সতর্ক থাকতেন, তবে তাকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া যেত। তাহলে হয়তো এই পরিণতি হত না।”
বেলা ১২ টা নাগাদ অভিরূপবাবু শিশু বিভাগ থেকে নিজের কার্র্যালয়ে এলে তাঁর পিছু নেন পিয়ারিনগর গ্রামের বাসিন্দারা। সুপারের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। পরিস্থিতি সামলাতে কালনা থানার ওসি অমিত কুমার মিত্রের নেতৃত্বে এক দল পুলিশ-কর্মী হাসপাতাল চত্বরে এসে পৌঁছন। আসেন কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুও। সুপারের ঘরে বৈঠক শুরু হয়। পরিবারের লোকজনেরা দাবি করেন, যে চিকিৎসক সকালে সমাপ্তিকে দেখে ভাল বলেছিলেন, তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই প্রস্তাবে রাজি না হলেও পরে আলাদা একটি ঘরে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে পরিবারের কয়েকজনের কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়। ওই চিকিৎসক জানান, তিনি সমাপ্তিকে সুস্থ করার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলেন। এর পর বিক্ষোভ উঠে যায়। সুপারের দাবি, সমাপ্তির হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছিল। তাঁর কথায়, “আমার ধারণা মেনিনজাইটিস থেকেই ওর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটির তদন্ত করা হবে।” |