|
|
|
|
নির্দেশ নতুন করে তদন্তের |
জেলে মৃত্যু ছাত্রের, ক্ষতিপূরণ দিতে বলল হাইকোর্ট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
জলপাইগুড়ি জেলার জেল হেফাজতে বি এ পার্ট ওয়ানের ছাত্র আদল বসুমাতারিকে পিটিয়ে মারার অভিযোগের তদন্তে ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত অবিলম্বে আদলের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকারকে। পাশাপাশি, জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য দায়রা বিচারক এই অভিযোগের তদন্ত করে যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন, তা-ও খারিজ করে দিয়েছে কোর্ট। বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী পুরো ঘটনার নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “ঘটনার দিন জেলে যে সব অফিসারেরা ছিলেন, রাজ্য সরকার ইচ্ছে করলে তাঁদের বেতন থেকে ওই ৫ লক্ষ টাকা কেটে নিতে পারে।”
২০০৭ সালের ২৪ অগস্ট জলপাইগুড়ির বন বিভাগের উত্তর-পশ্চিম বিটের বিট অফিসার ধর্মেন্দ্র রায় কালচিনি থানায় একটি এফআইআর দায়ের করে জানান, সে দিন বিকেলে বন দফতরের কয়েক জন কর্মীকে নিয়ে তিনি কালজানি নদীর তীর বরাবর জিপে করে যাচ্ছিলেন। পথে, গাছ ফেলে তাঁদের রাস্তা আটকানো হয়। ধর্মেন্দ্রবাবু ও তাঁর সহকর্মীরা জিপ থেকে নামা মাত্রই আক্রান্ত হন।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে আলিপুরদুয়ার কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র আদলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর বাবা নগেন্দ্রনাথ পুলিশকে জানান, এই ধরনের কোনও কাজের সঙ্গে আদল যুক্ত নয়। তবুও দিন পনেরো পরে পুলিশ হেফাজত থেকে জেলা হেফাজতে পাঠানো হয় আদলকে। এর পরেই ২ নভেম্বর সকালে আলিপুরদুয়ার সংশোধনাগার থেকে ধৃতের পরিবারকে খবর দিয়ে জানানো হয়, আদল অসুস্থ। পরিবারের লোকেরা সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, আদল মারা গিয়েছে। তাঁর দেহ রয়েছে হাসপাতালের মর্গে। ময়না তদন্তের রিপোর্টে আদলের শরীরে বেশ কয়েকটি ক্ষতচিহ্ন পাওয়া যায়। ভারি কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। আদলের পরিবার সংশোধনাগারে পিটিয়ে মারার অভিযোগ করে পুলিশে এফআইআর করেন। আবেদনকারী নগেন্দ্র জানান, জেলে তিনি আদলের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে জানতে পারেন, পুলিশের তৈরি করা একটি বিবৃতিতে আদলকে সই করতে বলা হয়েছিল। আদল জানিয়েছিল, সই করার জন্য তাঁকে অত্যাচারও করা হচ্ছে। কিন্তু কয়েক বছর কেটে গেলেও কাউকে দোষী চিহ্নিত করা হয়নি। জেলা দায়রা মুখ্য বিচারকও তাঁর রিপোর্টে পিটিয়ে মারার অভিযোগ নিয়ে কোনও
মন্তব্য করেননি।
পরে মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টে এলে শুনানির পরে বিচারপতি জানান, আদলের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। তদন্তের কাজও সন্তোষজনক নয়। একটি যুবকের এমন ভাবে মৃত্যুর সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে বিচারপতি মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে তিনি জেলা দায়রা মুখ্য বিচারকের রিপোর্ট ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে খারিজ করে দেন। হাইকোর্টের এই রায়ের খবর বিকালে কালচিনি ব্লকের উত্তর মেন্দাবাড়ি গ্রামের আদল বসুমাতারির বাড়িতে পৌঁছতেই খুশির হাওয়া বয়ে যায়। আদলের বাবা বলেন, “আগের দিন সংশোধনাগারে গিয়ে আদলকে চিঁড়ে-গুড় এবং খাতা-কলম দিয়ে এসেছিলাম। আর পরের দিনই ছেলের মৃত্যুর খবর পেলাম। আজ উচ্চ আদালতের নির্দেশে আশার আলো দেখছি।” আদলের দাদা ধীরাজবাবু জানান, তিনি ও আদল এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে পুলিশের চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সে দিন গভীর রাতেই কাঠ চুরির অভিযোগে বন দফতর ও পুলিশ বাড়িতে এসে আদলকে ধরে নিয়ে যায়। মেন্দাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অভিজিৎ নার্জিনারির অভিযোগ, “আদলকে জেলে হত্যা করা হয়েছিল।” |
|
|
|
|
|