মমতার ভোটব্যাঙ্কে চিড় ধরানো যায়নি, কবুল সিপিএম নেতৃত্বের
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন জানিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলের সম্পর্ককে আরও জটিলতার দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছে সিপিএম। কিন্তু তার পরেও কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটব্যাঙ্কে চিড় ধরাতে পেরেছে তারা? সিপিএম পলিটব্যুরোর মূল্যায়ন হল, গত এক বছরেও এই কাজে সক্ষম হয়নি দল। সম্প্রতি রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। সিপিএম সূত্র বলছে, রাজ্য শীর্ষ নেতৃত্ব স্বীকার করছেন, গত এক বছরে মমতার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রহীনতার অভিযোগ তোলার চেষ্টা করলেও বাস্তব পরিস্থিতি হল, জেলায় জেলায় মমতা তাঁর ভোটব্যাঙ্ককে আরও সুসংহত করেছেন।
সিপিএম নেতারা বলছেন, মমতা শুধু আবেগ দিয়ে রাজনীতি করেন বলে যাঁরা ভাবেন, তাঁরা মস্ত বড় ভুল করছেন। নির্বাচনী রাজনীতির লক্ষ্যে মমতার একটি সুনির্দিষ্ট অঙ্ক আছে। শহুরে নাগরিক সমাজের একাংশ পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা থেকে কার্টুন কাণ্ড নিয়ে যতই মোহভঙ্গের কথা বলুন, আসলে তৃণমূল নেত্রী রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটকে (আগে ছিল ২৬%, এখন বাস্তবে হয়ে দাঁড়িয়েছে ২৮%) নিজের দলের প্রতি আরও সুসংহত করতে বেশ কিছু প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েছেন। ইমামদের ভাতা দেওয়া থেকে শুরু করে সরাসরি সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণে বিল আনার চিন্তাভাবনা এই ধরনের সিদ্ধান্তগুলি রাজ্যের উর্দু এবং বাঙালি, দুই ভাষাভাষী মুসলমান সমাজকে আরও কাছে টেনে নিয়েছে। গরিব সংখ্যালঘুদের আবাসন থেকে কর্মসংস্থান, সব বিষয়েই মমতার সরকার যথেষ্ট সক্রিয়। সিপিএমের এক নেতার বক্তব্য, “আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম, তখনও মুসলমান ভোট ভাগাভাগি হয়েছে। কিন্তু এখন গোটা সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের দিকে চলে গিয়েছে। এটা ভাঙা খুব কঠিন কাজ। উত্তরপ্রদেশে বা বিহারে এটা নতুন নয়, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এটা নতুন।”
পাহাড় সমস্যার সমাধানেও উদ্যোগী হয়েছেন মমতা। সেখানে তিনি যেমন বিমল গুরুঙ্গের সঙ্গে নির্বাচনী জোট বেঁধে সমতলের মানুষের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে চান না, তেমনই নানা ভাবে গুরুঙ্গকে সাহায্য করে মোর্চার সঙ্গে ব্যক্তিগত স্তরে একটা বোঝাপড়াও রক্ষা করতে চাইছেন। এ বিষয়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনও মমতাকে যথেষ্ট সাহায্য করছেন। এর পরেই আসে জঙ্গলমহল। সিপিএমের মূল্যায়ন, মাওবাদীদের বিষয়ে মমতা কড়া মনোভাব নিলেও তাতে জঙ্গলমহলে উল্টো প্রতিক্রিয়া হবে না। কারণ মাওবাদীরা চিরকাল নির্বাচন বয়কট করেছে। তাই মাওবাদী ভোটব্যাঙ্ক খুবই কম। উল্টে কেন্দ্রের সহযোগিতায় কঠোর হাতে মাওবাদী হিংসা দমন করে মমতা বরং শহুরে মধ্যবিত্ত সমাজের একটা বড় অংশের সমর্থন পেয়েছেন। মাওবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল নাগরিক সমাজের অস্তিত্বও এখন খুবই দুর্বল।
সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে তাঁদের পথ এখন যথেষ্টই কণ্টকিত। অনেক ঘাম ঝরিয়ে, অনেক কষ্ট সহ্য করে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য সামনে রেখে গুণগত মান বৃদ্ধির পথে এখন দলকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যেতে। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটেও দলের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো খুবই কঠিন। পরিস্থিতি এতটাই প্রতিকূল যে সিপিএম মনে করছে, বহু জেলায় তারা প্রার্থী পর্যন্ত দিতে পারবে না। সম্প্রতি কয়েকটি জেলায় সমবায় সংস্থার নির্বাচন হয়ে গেল। সেখানেও তৃণমূল তাদের দাপট বজায় রাখতে পেরেছে। সিপিএম সূত্রের দাবি, এই সব ভোটে তৃণমূলের পেশিশক্তির কাছেও সিপিএম পরাস্ত হয়েছে। তাই সিঙ্গুর রায় পরেও সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করতে পারেনি তারা। সিপিএমের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “আসলে ৩৪ বছরের বাম শাসনের পরে সেই অ্যান্টি-ইনকামবেন্সি বা প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ার জন্য এখনও রাজ্যের মানুষের কাছে বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি সিপিএম। কোনও বিষয়ে মমতার সমালোচনা করলেই ৩৪ বছরে সেই সব বিষয়ে কী হয়েছে, সেটাই পাল্টা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠছে। মানুষ এখনও এই সরকারের প্রতি যথেষ্ট তিতিবরক্ত নয়। এখনও আমাদের অনেক অপেক্ষা করতে হবে।”
তাই সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, আগামী বছর পঞ্চায়েত ভোটে তাঁদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। বরং ২০১৪ সালে লোকসভা ভোট এবং তার পরের বছর কলকাতা পুরনির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলের উপরে পাল্টা ‘আঘাত হানা’তে তৈরি হচ্ছেন তাঁরা। দেখতে চাইছেন, আগামী দু’বছরে কংগ্রেস-তৃণমূল সম্পর্ক কোথায় দাঁড়ায়। নজর রাখছেন দীনেশ ত্রিবেদী, কবীর সুমন, সোমেন মিত্রের মতো নেতাদের উপরেও। রাষ্ট্রপতি ভোটে তৃণমূলের দিক থেকে ‘ক্রস ভোটিং’ হয় কি না বা তা নিয়ে দলে বিবাদ তৈরি হয় কি না, সে দিকেও তাকিয়ে সিপিএম। আরও মনে করা হচ্ছে, ২০১৪ সালের আগে এনডিএ-তে যাবেন না মমতা। বরং উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম যে ভাবে সংখ্যালঘু ভোটকে সুসংহত করছেন, সে ভাবে এগোতে চাইছেন তিনি। বস্তুত, নীতীশ কুমার বা নবীন পট্টনায়কের মতো তিনিও পশ্চিমবঙ্গ থেকে কংগ্রেসকে নিশ্চিহ্ন করতেই চাইছেন।
সিপিএম নেতারা বলছেন, মমতা সুষ্ঠু পথনির্দেশিকা দিতে না পারলে উন্নয়ন, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থানই হবে লোকসভা ভোটে তাঁদের মূল অস্ত্র। কিন্তু সেখানেও সিপিএমের একাংশের সংশয়, লালু-নীতীশদের মতো সংখ্যালঘু এবং মতুয়া-সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে চলার যে কৌশল মমতা নিয়েছেন, সেটাই হয়তো শিল্পায়ন ও উন্নয়নের পরিবর্তে ভোটের নির্ধারক শক্তি হয়ে উঠবে। সিপিএম নেতারাও মানছেন, “এমন হলে মমতার প্রভাব খর্ব করা সহজ হবে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.