দ্রুত জবাব দিল রাজ্য সরকারও
কংগ্রেস-তৃণমূল জট বাড়ালেন চিদম্বরম
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে এমনিতেই কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক এখন যথেষ্ট ‘তিক্ত’। বৃহস্পতিবার রাজ্য সফরে এসে সেই সম্পর্ক আরও ‘সঙ্কটাপন্ন’ করে দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পালনিয়াপ্পন চিদম্বরম।
মাওবাদী এলাকায় পরিস্থিতির ‘উন্নতি’ হয়েছে জানিয়েও এ দিন কলকাতায় বণিকসভার এক অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, “আমার উদ্বেগের কারণ একটাই পশ্চিমবঙ্গে এখনও হিংসার সংস্কৃতি চলছে। আর বেশির ভাগ হিংসাত্মক ঘটনার মূল কারণ রাজনৈতিক সংঘর্ষ।” চিদম্বরম জানান, গত ছ’মাসে রাজ্যে রাজনৈতিক সংঘর্ষে ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১,১১২ জন আহত। ৪৫৫টি রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা পুলিশে নথিভুক্ত হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ২০১০-এ রাজনৈতিক সংঘর্ষে রাজ্যে ২০৪ জন খুন হন। আহত প্রায় ২,৬০০। ২০১১-য় রাজ্যে ৯৯৫টি রাজনৈতিক সংঘর্ষ ঘটে। ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত ২,২২৫ জন।
চিদম্বরমের কথায়, “এটা সুস্থ গণতন্ত্রের লক্ষণ নয়। সুস্থ গণতন্ত্রে আলোচনা-বিতর্ক হয়। কিন্তু বুলেটের জবাব বুলেটে হয় না। গণতন্ত্র এবং হিংসা পাশাপাশি চলতে পারে না।” এই বক্তব্য এবং পরিসংখ্যান রাজ্য সরকারের কাছে যথেষ্ট ‘অস্বস্তিকর’। আর স্বভাবতই ‘খুশি’ প্রধান বিরোধীদল সিপিএম।
ঘটনাচক্রে, বাম-আমলে এই চিদম্বরমই একাধিক বার বুদ্ধদেব সরকারের কড়া সমালোচনা করেছিলেন। তখন তৃণমূল খুশি হয়েছিল আর সিপিএম ক্ষুব্ধ। এখন দেখা যাচ্ছে, রাজ্য সরকার সম্পর্কে মূল্যায়নে চিদম্বরম কার্যত একই অবস্থানে। তবে পালাবদলের ফলে বদলে গিয়েছে তাঁর সম্পর্কে যুযুধান দু’পক্ষের মূল্যায়ন!
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ দিন চিদম্বরমের বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানান বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। যার মোদ্দা কথা চিদম্বরম দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নয়, সাধারণ ‘পার্টিকর্মী’র মতো কথা বলছেন! যা রাজ্যের বিরুদ্ধে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’। আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ার ভুক্ত। চিদম্বরম তা নিয়ে মন্তব্য করতে পারেন না। সুব্রতবাবুর আরও বক্তব্য, সিপিএমকে ‘অক্সিজেন’ দিচ্ছেন চিদম্বরম। তাঁর কথায়, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে তৃণমূলকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না।”
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পটভূমিকাতেই চিদম্বরমের মন্তব্য ‘অন্য মাত্রা’ পেয়েছে। প্রণব মুখোপাধ্যায়কে রাষ্ট্রপতি পদে মমতা সমর্থন করবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। মমতা-ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, তিনি ‘মনস্থির’ করেননি। কিন্তু চিদম্বরমের মন্তব্যকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সাপেক্ষেই দেখছেন মমতা। মনে করছেন, প্রণববাবুকে সমর্থন না করায় কংগ্রেস তাঁকে পাল্টা ‘চাপ’ দিচ্ছে। তৃণমূলের এক সাংসদের কথায়, “প্রকারান্তরে চাপ দেওয়া ছাড়া এমন সময়ে রাজ্যে এসে এই মন্তব্য করার অর্থ কী?” মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্র আরও বলছে, গত সপ্তাহেই বিধানসভায় মমতা পরিসংখ্যান দিয়ে জানান, তাঁদের আমলে বরং রাজনৈতিক সংঘর্ষ কমেছে! তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “চিদম্বরম যে সমস্ত কথা বলছেন, তা তো আগের সরকারের আমলের!” তাঁর আরও দাবি, চিদম্বরম সমস্ত কথাই বলেছেন ‘অঙ্ক কষে’।
এ দিন প্রদেশ নেতাদের কাছ থেকেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ শুনতে হয়েছে চিদম্বরমকে। তিনি নেতাদের জানিয়েছেন, হাইকম্যান্ড ‘সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত’ নেবে (খবর পৃঃ ৯)। পরে রাজ্যের প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে চিদম্বরম বিষয়টি ঈষৎ ‘লঘু’ করার চেষ্টা করে বলেন, “আমি এক বারও রাজ্যের কথা বলিনি। বিভিন্ন দলের মধ্যে রাজনৈতিক সংঘর্ষের কথা বলেছি। যা রাজ্যে এখনও চলছে। ২০১০ সাল থেকে এটা বেড়েছিল। ২০১১-র পর কিছুটা কমেছে। কিন্তু এটা পুরোপুরি থামাতে হবে!” কিন্তু তত ক্ষণে ‘ক্ষতি’ যা হওয়ার, হয়ে গিয়েছে!
চিদম্বরমের এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, “উনি যা বলেছেন, ঠিক বলেছেন!” মহম্মদ সেলিম বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। কেন্দ্র সে ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কিন্তু সত্যকে স্বীকার করতেই হবে। চিদম্বরম তাই করেছেন।”
মুখ্যমন্ত্রী আপাতত প্রচণ্ড ‘ক্ষুব্ধ’। রাজ্যের প্রতিক্রিয়ায় তা স্পষ্ট। সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে প্রেস কর্নারে আসেন সুব্রতবাবু। সঙ্গে দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও অরূপ বিশ্বাস। সুব্রতবাবু বলেন, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উচিত ছিল রাজ্য থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তার পর কথা বলা। তা ভুলে তিনি আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করলেন।” এর পরেই সুব্রতবাবু বলেন, “সিপিএম ওদের (কংগ্রেসের রাষ্ট্রপতি প্রার্থীকে) ভোট দেবে কথা দিয়েছে। তাই ওদের (সিপিএমকে) অক্সিজেন দিতেই সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য জানালেন উনি।”
সুব্রতবাবু নন্দীগ্রাম, নেতাই-কাণ্ড থেকে সাতের দশকে মরিচঝাঁপি-কাণ্ডেরও উল্লেখ করে বলেন, “তখন ওঁরা কোথায়?” পরে সুব্রতবাবুকে মনে করানো হয়, নেতাই-কাণ্ডের সময় চিদম্বরম ‘হার্মাদ ক্যাম্পে’র কথা বলেছিলেন। সুব্রতবাবু বলেন, “তা হলে তো ওঁরা স্বীকার করেছিলেন হার্মাদদের কথা! এখন সেই হার্মাদ কোথায়? তবুও আইনশৃঙ্খলা অবনতির কথা আলটপকা বললেন কেন?”
তৃতীয়বার প্রেস কর্নারে এসে সুব্রতবাবু বলেন, “২০১১-র প্রথম পাঁচ মাসে বামফ্রন্ট রাজত্বে রাজনৈতিক সংঘর্ষে মোট ৬২টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে ৩৫ জন তৃণমূলের, ২৭ জন সিপিএম ও অন্যান্য। ২০১২ সালে এ পর্যন্ত রাজনৈতিক খুনের সংখ্যা মাত্র পাঁচটি। তার মধ্যে আমাদের তিন জন। বাকি সিপিএম এবং অন্যান্য।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.