‘চালচলন’ ভাল নয়। তারই বিচার করতে সালিশি সভা ডেকেছিলেন গ্রামের মাতব্বরেরা। অভিযোগ, সভা থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে হামিদা বিবি নামে ওই মহিলার চুল কেটে দিয়েছেন কয়েক জন মহিলা। ঘটনাটি বসিরহাটের সংগ্রামপুর-শিবহাটি পঞ্চায়েতের অমরকাটি গ্রামের দক্ষিণপাড়ার। বুধবার রাতে গ্রামে সালিশি সভা চলাকালীন ওই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে রুহুল কুদ্দুস গাজি নামে গ্রামের এক যুবক এবং কয়েক জন মহিলার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন হামিদা বিবি। পুলিশ জানিয়েছে, মিথ্যা অভিযোগ তুলে মারধর এবং চুল কেটে নেওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। শীঘ্রই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।
বাসিন্দারা জানান, ওই মহিলার বিরুদ্ধে তাঁর ভাসুরের ছেলের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছিল। রুহুল কুদ্দুস গাজি ওই মহিলার নামে অভিযোগ তুললে কেউ তা মানতে চায়নি। রুহুলের দাবি, “ওই মহিলা গ্রামের পরিবেশ নষ্ট করছেন। অনেকদিন ধরেই বিষয়টি গ্রামের লোককে বলছি কিন্তু কেউ বিশ্বাস করেনি। শেষে রাত জেগে নজর রেখে হাতেনাতে ওদের ধরি।” |
এরপরেই গ্রামের মাতব্বরেরা ঠিক করেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যকে নিয়ে সালিশি ডেকে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া হবে। বুধবার রাত ১০টা নাগাদ সালিশি সভা বসে। তবে সেখানে ওই পঞ্চায়েত সদস্য-সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন না। তাঁদের অনুপস্থিতিতেই সভা হয়। পঞ্চায়েতের সদস্য মফিজুর রহমান বৈদ্য বলেন, “ওই মহিলা ঘটনাটি স্বীকার করে নেওয়ায় তাঁর স্বামীকে ডাকা হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল গ্রামে বসেই বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু আমাকে না জানিয়েই সভা হয়েছে।” হামিদা বিবির অভিযোগ, সভা চলাকালীন কয়েক জন মহিলা তাঁকে অন্য দিকে ডেকে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। কেটে নেওয়া হয় তাঁর চুল। শেষে মহিলার চিৎকারে সভা ছেড়ে ছুটে যান গ্রামবাসীরা।
বৃহস্পতিবার সকালে তিন ছেলেমেয়ে এবং স্বামীকে নিয়ে তাঁর উপর শারীরিক অত্যাচারের লিখিত অভিযোগ করেন হামিদা বিবি। তাঁর কথায়, “রুহুল কুদ্দুস-সহ গ্রামের দুই যুবক আমাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। তাতে রাজি না হওয়ায় পরিকল্পনা করে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে। স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিরাপত্তার জন্য ভাসুরের ছেলে আমাদের সঙ্গে থাকে। ওই রাতে রুহুলরা আমাদের বিবস্ত্র করে মারধর করে গ্রামাবাসীদের ডাকে। সভায় ডেকে আমার চুল কেটে দিয়েছে।” হামিদা বিবির স্বামী বলেন, “কাজের জন্য বাইরে থাকি। তাই দাদার ছেলে ওদের দেখাশোনা করত। আসলে রুহুলের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এ কাজ করেছে।”
অভিযোগ যা-ই উঠুক না কেন, ওই মহিলার চুল কাটা যে ঠিক হয়নি তা মেনে নিয়েছেন সালিশিতে উপস্থিত রজব আলি গাজি, ফজের আলিরা। তাঁদের কথায়, “ওই মহিলার চরিত্র ভাল নয় বলে একটা অভিযোগ উঠেছিল। তারই মীমাংসায় সালিশি ডাকা হয়েছিল। কিন্তু কিছু মহিলা কাউকে কিছু না জানিয়ে সভার মধ্যে থেকে ওই মহিলাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে চুল কেটে ঠিক করেননি।” |