গাফিলতির অভিযোগ উঠল সেচ দফতরের বিরুদ্ধে
নামখানায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত একাধিক গ্রাম
বাঁধ সারানোর জন্য বার বার পঞ্চয়েত থেকে প্রশাসনের সর্বত্র জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতে যে টনক নড়েনি প্রশাসনের তার প্রমাণ, দিন তিনেক আগে কোটালের জোয়ারে জলের তোড়ে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বটতলা নদীবাঁধ। নোনা জলে প্লাবিত হয়েছে নামখানা ব্লকের মৌসুনি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা। স্বাভাবিক ভাবেই এই অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দা বাঁধ মেরামতি নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন সেচ দফতরের বিরুদ্ধে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৌসুনি গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম দিকে বালিয়াড়া গ্রামের কাছে বটতলা নদীর বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। নোনা জল হুহু করে ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় দেড় হাজার বিঘা চাষের জমি। সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা প্রায় ১০০। দক্ষিণ দিকে ইন্দ্রপল্লির কাছে বাঁধে ধস নামায় জল ঢুকে প্লাবিত হয়ে কৃষিজমি।
বটতলা নদীর বাঁধ ভেঙে ঢুকছে কোটালের জল। নামখানার বাগডাঙা গ্রামে। ছবি: দিলীপ নস্কর
নারয়ণপ্লি গ্রামের কাছথে মূল বাঁধ অনেক আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। তার পরে রিং বাঁধ দিয়ে কোনওরকমে জল আটকে রাখার ব্যবস্থা করা হলেও এ বার সেই বাঁধ উপচে জল ঢুকেছে। বাগডাঙা ও কুসুতলা গ্রামের কাছে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাঁধ একেবারে নিশ্চিহ্ন। জল ঢুকে প্লাবিত হয়েছে রাস্তাঘাট, চাষের জমি, পুকুর। ডুবে গিয়েছে পানীয় জলের নলকুপ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বেশ কিছু কাঁচা বাড়ি। বৃহস্পতিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল কোটালে জোয়ারের জল ঢুকে চাষের জমি চলে গিয়েছে জলের তলায়। রাস্তায় কোথাও কোমর সমান, কোথাও হাঁটুসমান জল। অনেকেই আশ্রয় নিতে উঁচু জায়গার খোঁজে চলেছেন। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, তিন দিন ধরে এমন অবস্থা চললেও প্রশাসনের তরফে কোনও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়নি। এই অবস্থায় জল নামার অপেক্ষা ছাড়া তাঁদের কাছে আর কোনও উপায় নেই। তাঁদের রও অভিযোগ, পাকাপাকি বাবে বাঁধ মেরামত করা হলে এ ভাবে সর্বনাশ হত না। নোনাজলে চাষের জমি প্লাবিত হওয়ায় চাষআবাদ একেবারে শেষ হয়ে গেল। অথচ এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল।
—নিজস্ব চিত্র।
এ দিন সকালে কোমরসমান জলে হাঁটতে হাঁটতেই বাগডাঙা গ্রামের গৌরি বেরা, মঞ্জরী মাইতিরা বললেন, “জল ঢোকার পর থেকে তিনদিন ধরে খাওয়াদাওয়া প্রায় বন্ধ। পানীয় জলেরও সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু জিনিসপত্র চুরি যাওয়ার ভয়ে কেউই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যেতে পারছি না।” স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ সেচ দফতরের প্রতি। স্বপন বেরার অভিযোগ, “যে ভাবে সেচ দফতরের লোকজন বাঁধ সারানোর কাঝ করে তাতে যে জল আটকানো যায় না, এটাই তার প্রমাণ।”
বাঁধ সারানোর প্রসঙ্গে মৌসুনি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান শৈব্যা মণ্ডল বলেন, “কিছু জায়গায় বাঁধের কাজ ১০০ দিনের প্রকল্পের মাধ্যমে করানো হয়েছিল। সেচ দফতরও কিছু কাজ করেছিল। কিন্তু কোটালের জোয়ারের জলের তোড়ে সব তছনছ হয়ে গেল। এখন কী ভাবে বাঁধ মেরামত হবে বুঝতে পারছি না। সেচ দফচরকে বহুবার বলা হয়েছিল বোল্ডার ফেলে বাঁধের কাজ করতে। কিন্তু ওরা তা করেনি।” তাঁর আরও অভিযোগ, “বাঁধ ভেঙে এত মানুষের ক্ষতি হলেও জেলা প্রশাসনের তরফে এখনও কোনও ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়নি।”
কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক অমিত কুমার নাথ বলেন, “ ত্রাণ মজুত রয়েছে। প্রয়োজন হলেই তা পাঠানো হবে।” বাঁধ সারানো নিয়ে সেচ দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভের প্রসঙ্গে মৌসুনি সাব-ডিভিশনের সহকারী বাস্তুকার প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “আপৎকালীন জল আটকানোর জন্য ভাটার সময় বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করা হবে। এখন বর্ষার মুখে বোল্ডার ফেলে মেরামতির কাজ করা সম্ভব নয়। পরে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.