সুটিয়া গণধর্ষণ-কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী বরুণ বিশ্বাসকে (৩৭) গুলি করে খুন করল দুষ্কৃতীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধে সওয়া ৭টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে গোবরডাঙা স্টেশনের কাছে। এলাকার ‘জনপ্রিয় যুবক’ বরুণবাবুকে প্রকাশ্যে এই ভাবে খুন করায় এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়।
২০০০ সাল থেকে গাইঘাটার সুটিয়ায় একের পর এক গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। দীর্ঘ দিন চাপা থাকার পরে তা জানাজানি হয়। দুষ্কৃতীদের শাস্তির দাবিতে ও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’ গড়ে আন্দোলনে নামেন স্থানীয় কিছু মানুষ। সেই মঞ্চেরই সম্পাদক ছিলেন স্কুল শিক্ষক বরুণবাবু। ওই মঞ্চের আন্দোলনের জেরে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। নড়েচড়ে বসে পুলিশ-প্রশাসন। সুশান্ত চৌধুরী, বীরেশ্বর ঢালি-সহ একাধিক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। অনেকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। বেশ কিছু মামলা এখনও বিচারাধীন। পুলিশ জানিয়েছে, সেই সব মামলার অনেকগুলিতে অন্যতম সাক্ষী ছিলেন বরুণবাবু। সে কারণেই তাঁকে দুষ্কৃতীরা ‘সরিয়ে দিল’ বলে দাবি করেছেন প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার। তিনি বলেন, “ওই ঘটনার কিছু মামলার শুনানি এখনও চলছে। বরুণবাবু যাতে সে সব মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে না পারেন, সে জন্যই দুষ্কৃতীরা তাঁকে সরিয়ে দিল।” তাঁর কথায়, “বরুণের উপরে দুষ্কৃতীদের আক্রোশ ছিল। আগে একাধিক বার হামলা হয়েছে প্রতিবাদী মঞ্চের অনেকের উপরেই। কিন্তু পুলিশকে সে কথা জানানোর পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” ননীগোপালবাবুও ২০১১ সালের ১৪ মার্চ সুটিয়া বাজারে দুষ্কতীদের বোমায় আহত হয়েছিলেন।
ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বনগাঁ রেলপুলিশ। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “পুরো বিষয়টি দিকে নজর রাখছে পুলিশ।” চম্পকবাবু বলেন, “কেন বরুণবাবু সহ ওই প্রতিবাদী মঞ্চের নেতাদের পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বরুণবাবু কলকাতার মিত্র ইন্সটিটিউশনে (মেন) শিক্ষকতা করতেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সন্ধে ৭টা নাগাদ গোবরডাঙা স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে তিনি নামেন। ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের বাইরে তাঁর মোটরবাইক রাখা ছিল। প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে একটি দোকান থেকে পান খেয়ে বাইকে উঠতেই দুষ্কৃতীরা খুব কাছ থেকে তাঁকে গুলি করে।
পিছন থেকে পাঁজর ভেদ করে বুক দিয়ে বেরিয়ে যায় গুলি। রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়ে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের টিকিট কাউন্টারের সামনে এসে পড়ে যান তিনি। বরুণবাবুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আনা হয় গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখান থেকে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তাতে তিনি মারা যান। পরে পুলিশ দেহ ময়না-তদন্তে পাঠায়। |