ময়না-তদন্ত রিপোর্টে রয়েছে মাথায় আঘাতের জন্য মৃত্যু হয়েছে। শরীরে আরও কয়েকটি গভীর আঘাতও রয়েছে। কিন্তু দু’বছর হয়ে গেল, সেই রিপোর্ট হাতে পেয়েও খুনের মামলা দায়ের করেনি পুলিশ। শেষ পর্যন্ত খুনের মামলা দায়ের হলেও অভিযুক্তেরা ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট থানার বিলোন্দপুরের বাসিন্দা হারা ফকিরের মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবার সুনির্দিষ্ট ভাবেই অভিযুক্তদের নাম জানিয়েছিলেন পুলিশকে। সিআইডি-র দ্বারস্থ হয়েও তাঁদের লাভ হয়নি। বরং অভিযুক্তদের হুমকির ভয়ে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এলাকা ছাড়তেও বাধ্য হয়েছেন।
অভিযোগ, ২০১০ সালের ১৬ জুলাই বিলোন্দপুর বাজার এলাকা থেকে হারা ফকিরকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় স্থানীয় দুষ্কৃতী সেলিম লস্করের দলবল। হারা ফকিরের পরিবারের লোকজন পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন, সেলিমের ডেরায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরের দিন সকালে মগরাহাট বাজারের কাছে একটি তাঁর দেহ পাওয়া যায়।
মগরাহাট থানা তারপরে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করে (১৭/১০)। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট মাসখানেকের মধ্যেই থানায় পৌঁছয়। সেই রিপোর্টে স্পষ্ট রয়েছে, হারা ফকিরের মাথায় আঘাত করা হয়েছে। তাঁর দু’টো পা-ই ভাঙা। ভোঁতা জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। হারা ফকিরের আত্মীয়দের অভিযোগ, “অথচ তৎকালীন ওসি খুনের মামলা দায়ের করতে রাজি হননি।” কিন্তু, নিয়ম হচ্ছে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে সুয়োমোটো খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করা। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। এই ঘটনার পরে মগরাহাটে গুলি-কাণ্ডের জেরে ওসি বদলে যান। নতুন ওসি-ও খুনের মামলা দায়ের করেননি। ইতিমধ্যে ওই মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হয় পুলিশকে। গত ২১ মে মগরাহাট থানার ওসি ‘অজ্ঞাতপরিচয় লোকেদের’ বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগের মামলা চালু করেন (১২৬/১২)। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলার ক্ষেত্রে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে মামলা দায়ের করে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিতে হবে। সে কারণেই ওসি খুনের মামলা দেখিয়েছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়নি।
হারা ফকিরের পরিবার এর পরে গত ২৯ মে সিআইডি-র স্পেশাল আইজি বিনীত গোয়েলের সঙ্গে দেখা করেন। তবে সিআইডি এখনই ওই মামলার দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। হারা ফকিরের পরিবারের অভিযোগ, থানায় যাওয়ার পর থেকেই সেলিমের দলবল তাঁদের হুমকি দিচ্ছে। তারপরেই এলাকা ছেড়েছেন তাঁরা। তাঁরা বলেন, “পুলিশ খুনের মামলার তদন্ত দূরের কথা, আমাদের নিরাপত্তাও দিতে পারছে না। তাই এলাকায় থাকতে পারছি না।” জেলা পুলিশের এক অফিসার জানান, এলাকায় সেলিমের প্রভাব রয়েছে। আগে সিপিএমের মদতে থাকলেও এখন তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সেলিমের সম্পর্ক ভাল। এই খুনের অভিযোগের তদন্ত করতে পুলিশ তাই গড়িমসি করছে।
তবে জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি বলেন, “ওই ঘটনা যখন ঘটেছে তখন আমি ছিলাম না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।” ২০১০ সালে জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা। এখন তিনি মেদিনীপুর রেঞ্জের ডিআইজি। তিনি বলেন, “অনেক পুরোনো ঘটনা। কী হয়েছিল, এ ভাবে এখন বলা যায় না। অভিযোগ থাকলে তদন্ত হওয়া উচিত।” |