কলকাতা পুরসভার পানীয় জলের উৎস, পরিমাণ, পরিশোধন, সরবরাহ এবং মানের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইল আদালত। বৃহস্পতিবার একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানির পরে বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত এবং বিচারপতি অসীমকুমার মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চ মন্তব্য করে, পানীয় জলের দূষণ বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। এর পরে ডিভিশন বেঞ্চ কলকাতা ও হাওড়া পুরসভাকে পানীয় জলের অবস্থা নিয়ে সবিস্তার জানিয়ে হলফনামা দিতে নির্দেশ দেয়। কলকাতায় পানীয় জলে আর্সেনিক-দূষণ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে আদালত।
পুর-এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করার আর্জি জানিয়ে ২০০১ সালে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত কলকাতা হাইকোর্টে যে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন, তারই শুনানি ছিল এ দিন। বিচারপতিরা পুরসভার কাছ থেকে জানতে চান:
• পুরসভার পানীয় জলের উৎস কী কী এবং কোন উৎস থেকে কতটা জল নেওয়া হয়?
• সরবরাহ করা জল কতটা পানের যোগ্য, তা নির্ণয় করার জন্য পুরসভার কী ধরনের পরিকাঠামো রয়েছে?
• যে জল সরবরাহ করা হয়, তা কি পর্যাপ্ত? না-হলে ঘাটতি মেটাতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুরসভা?
• পানীয় জল পরিশোধনের কোনও ব্যবস্থা কি পুরসভার আছে?
• ভূগর্ভ থেকে তোলা জল নিরাপদ কি না, তা নির্ণয় করা হয় কী ভাবে?
এ সব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট হলফনামার আকারে চার সপ্তাহের মধ্যে পুরসভাকে আদালতে পেশ করতে হবে। এর পরে সুভাষবাবু বিচারপতিদের জানিয়েছেন, কলকাতা শহরের মাটির নীচের জলেও আর্সেনিকের দূষণ ব্যাপক ভাবে দেখা যাচ্ছে। নিজের বক্তব্যের সমর্থনে সুভাষবাবু এ দিন আদালতে বিভিন্ন সংবাদপত্রে ছাপা হয়ে বেরোনো সংবাদের প্রতিলিপি পেশ করেন। তিনি জানিয়েছেন, জলে বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক মেলায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বরে চারটি টিউবওয়েলের মধ্যে তিনটিই বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কলকাতায় এখন এত বেশি পরিমাণে মাটির নীচ থেকে জল তোলা হচ্ছে যে, ভূগর্ভের জলস্তর ৩৪ ফুট নেমে গিয়েছে।
এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ডিভিশন বেঞ্চ সুভাষবাবুকে নির্দেশ দেয়, কলকাতার জলে আর্সেনিকের অস্তিত্ব সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে তা হলফনামার আকারে দু’সপ্তাহের মধ্যে আদালতে পেশ করতে হবে। তা পেলে এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মত নেবে আদালত।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ’-এর অধিকর্তা অধ্যাপক দীপঙ্কর চক্রবর্তী বহু দিন ধরেই মাটির নীচের জলে আর্সেনিকের অস্তিত্ব নিয়ে সতর্ক করে আসছেন। কিন্তু পুরসভা তাতে কখনওই কান দেয়নি। সুভাষবাবু আদালতকে জানান, দীপঙ্করবাবু প্রায় ২০ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে আর্সেনিক-দূষণ নিয়ে গবেষণা করছেন। যাদবপুর এবং গল্ফগ্রিন এলাকায় টিউবয়েলের জলে আর্সেনিক বিষ নিয়ে আবারও সতর্ক করেছেন তিনি। বিচারপতিরা জানিয়েছেন, আর্সেনিক নিয়ে হলফনামা পেলে আদালত অবশ্যই ওই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ শুনবেন।
এ প্রসঙ্গে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, কলকাতার যে অংশে গঙ্গার পরিশোধিত জল সরবরাহ করা হয়, সেখানে কোনও দূষণের আশঙ্কা নেই। শহরের যে অংশে ভূগর্ভস্থ জল সরবরাহ হয়, সেই জলের নমুনাও পুরসভা নিয়মিত পরীক্ষা করে বলে দাবি মেয়রের। |