অন্তর্ধান রহস্যে গত কাল দায়ের হয়েছিল অপহরণের অভিযোগ। এ বার যোগ হল খুন। অপহরণে অভিযুক্ত নিজেই আজ দাবি করেছে, বলিউডের উঠতি অভিনেত্রী লায়লা খান এবং তাঁর পরিবারের লোকেদের গুলি করে মারা হয়েছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নিখোঁজ লায়লা, তাঁর মা সেলিনা, দুই বোন হাজমিনা ও জারা এবং ভাই ইমরান। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন লায়লার বাবা নাদির পটেল। তদন্তে নেমে লায়লার সৎ বাবা তথা সেলিনার তৃতীয় স্বামী পারভেজ আহমেদ টাক-কে গত ২১ জুন গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আসিফ শেখ নামে আরও এক ব্যক্তিকে ধরা হয়। পুলিশের জেরায় এ ক’দিন পারভেজ বলে আসছিল, লায়লারা দুবাই বা আফ্রিকার কোনও দেশে চলে গিয়েছেন। এমনকী দাউদ ইব্রাহিমের এক সহযোগীকে বিয়ে করেছেন লায়লা, এ রকমও দাবি করেছিল সে।
|
লায়লা খান |
কিন্তু পুলিশ লায়লাদের দেশ ছাড়ার কোনও প্রমাণ পায়নি। গত কাল মুম্বই পুলিশের কাছে নাদির সরাসরি পারভেজের বিরুদ্ধেই অপহরণের অভিযোগ আনেন। তার পরই আজ সম্পূর্ণ নতুন বয়ান হাজির করল পারভেজ।
এ দিন জম্মুতে ডিআইজি গরিব দাস জানান, পারভেজ দাবি করছে যে, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসেই মহারাষ্ট্রতে লায়লা-সেলিনাদের গুলি করে খুন করা হয়েছে। একাধিক ব্যক্তি ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তারা কারা? সে ব্যাপারে পারভেজ স্পষ্ট কিছু বলেনি। দেহ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত খুনের তত্ত্বকে প্রামাণ্য বলতে রাজি নয় জম্মু এবং মুম্বইয়ের পুলিশ। মুম্বই পুলিশের অপরাধ দমন শাখা পারভেজকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইছে। মুম্বইয়ের যুগ্ম কমিশনার হিমাংশু রায় পারভেজের বক্তব্যকে নস্যাৎও করেননি, মেনেও নেননি। তিনি শুধু বলেন, “পারভেজকে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।” লায়লার বাবা নাদিরও পারভেজের দাবি মানতে রাজি নন। একটি চ্যানেলে তিনি বলেন, পারভেজকে বিশ্বাস করার কারণ নেই।
আদতে কাশ্মীরের বাসিন্দা, পেশায় ঠিকাদার পারভেজ এর আগে প্রতারণা সংক্রান্ত একাধিক ঘটনায় জড়িত বলে জানা গিয়েছে। তার সঙ্গে লস্কর-ই-তইবার যোগ আছে বলেও অভিযোগ। সেই সঙ্গে রাজনীতির জগতেও পারভেজের ভাল রকম আনাগোনা রয়েছে। ২০০৮ সালের কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনে এনসিপি-র টিকিটে ডোডা থেকে দাঁড়িয়েছিল সে। ২০১০-এ মুম্বই এসেও এনসিপি সদর দফতরে যাওয়া-আসা বজায় রেখেছিল সে। সেই সময় থেকেই লায়লার মা সেলিনার সঙ্গে তার যোগাযোগ। নাদিরের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে সেলিনা তখন আসিফ আহমেদ নামে এক ব্যক্তির স্ত্রী। পারভেজের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পরে তাকে বিয়ে করেন তিনি।
সেলিনার মেয়ে লায়লা ওরফে রেশমা পটেল বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তার বছর দুয়েক আগেই। ২০০৮ সালে ‘ওয়াফা’ নামে একটি ছবিতে রাজেশ খন্নার স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। পরিচালক ছিলেন রাখি সবন্তের ভাই রাকেশ। তার পরে বলিউডে বিশেষ কিছু করতে না পারলেও মুম্বইয়ে লায়লা-সেলিনাদের সম্পত্তির পরিমাণ ছিল তাক লাগানোর মতো ইগতপুরীর বাংলো, ওশিয়ারায় অভিজাত ফ্ল্যাট, মিরা রোডের ফ্ল্যাট, লোখান্ডওয়ালায় দোকানঘর...। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন এই সম্পত্তি এসেছিল মূলত ‘উপহার’ হিসেবে। কারা, কী উদ্দেশ্যে দিয়েছিল এই সব ‘উপহার’? পারভেজ ছাড়াও আর কারা থাকতে পারে সন্দেহের তালিকায়? নাদিরের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশের কাছে এখনও পর্যন্ত যা তথ্য, নিখোঁজ হওয়ার আগে রাকেশ সবন্তেরই অন্য একটি ছবির জন্য শুটিং শুরু করেছিলেন লায়লা। ২০১১-র ৯ ফেব্রুয়ারি টেলিফোনে নিজের বোনের সঙ্গে শেষ বার কথা বলেছিলেন লায়লার মা সেলিনা। তার পর থেকে তাঁদের আর খোঁজ নেই। তার তিন দিন পরে পারভেজ এবং আসিফ জম্মুর একটি হোটেলের বাইরে সেলিনার সাদা স্করপিও গাড়িটা রেখে দিয়ে উধাও হয়ে যায়। গত সেপ্টেম্বর মাসে সেলিনার বোন মহারাষ্ট্রের ইগতপুরীতে লায়লাদের বাংলোবাড়িতে গিয়ে দেখেন, বাড়িটি ভস্মীভূত। কী ভাবে আগুন লাগল, তা স্পষ্ট নয়। বাংলোর আসবাবপত্র কে বা কারা বিলিয়ে দিয়েছিল আশপাশের বাড়িতে। পড়শিদের মুখে উঠে এসেছিল, পারভেজের সহযোগী আসিফ শেখের নাম!
ওই সেপ্টেম্বরেই দিল্লি হাইকোর্ট বিস্ফোরণের ঘটনায় লায়লার গাড়িতে বিস্ফোরক পাচার করা হয় বলে সন্দেহ করে পুলিশ। যদিও প্রমাণ মেলেনি। এ বছর ২৯ মে, পারভেজের আদত বাড়ি, জম্মুর কিশতোয়ার এলাকা থেকে লায়লার মিৎসুবিশি আউটল্যান্ডার গাড়ি উদ্ধার হয়। সেই সূত্রেই জুনে পারভেজ এবং পরে আসিফ শেখ ধরা পড়ে।
তবে কি পারভেজই পরোক্ষ ভাবে জড়িত ছিল দিল্লির বিস্ফোরণে? পারভেজ এবং আসিফই কি ইগতপুরীর বাংলো পুড়িয়ে দিয়েছিল? লায়লারা সত্যিই নিহত, না কি নিখোঁজ? যদি তারা মারা গিয়ে থাকেন, কে মারল তাঁদের? পারভেজই কি খুনি? নাকি তার দাবি অনুযায়ী এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও অনেক লোক? যারা লায়লাদের বাড়ি-গাড়ি ‘উপহার’ দিত, তারাই কি হত্যার নেপথ্যে? সেলিনার অন্য দুই স্বামীর ভূমিকাই বা কী? দু’-দু’টি রাজ্যের পুলিশের সামনে এখন অজস্র প্রশ্ন আর সম্ভাবনা।
বলিউডের অভিনেত্রী হিসেবে বিশেষ কিছু করে উঠতে না পারলেও লায়লার জীবন কিন্তু হার মানিয়ে দিচ্ছে সিনেমার চিত্রনাট্যকে। |