প্রকাশ কারাট-সীতারাম ইয়েচুরির রাজনৈতিক আঁতুড়ঘরেই এ বার সিপিএমের ছাত্র সংগঠনে ‘বিদ্রোহ’।
রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই সংগঠনে ধস নামতে চলেছে। সিপিএম সূত্রের খবর, জেএনইউ-তে সিপিএমের যে শাখা রয়েছে, তার অধিকাংশ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। জেএনইউ-তে এসএফআইয়ের সাধারণ সভার ডাক দেওয়া হয়েছে আজ রাতে। প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন নিয়ে বিতর্ক হবে সেখানে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে প্রস্তাবও আনা হবে।
এই একই প্রশ্নে আগেই দল থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তরুণ নেতা প্রসেনজিৎ বসু। দলের রাজনৈতিক লাইন অমান্য করায় তাঁকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর পরে জেএনইউ-তেও যে ভাবে ছাত্রদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তাতে যথেষ্ট চিন্তায় পড়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে দলের সামনে জেএনইউ-এর ছাত্র সংগঠন নতুন করে গড়ে তোলা ছাড়া আর উপায় থাকছে না। এমনিতেই জেএনইউ-তে সদ্য অনুষ্ঠিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনে নকশালপন্থী ছাত্র সংগঠন আইসা-র কাছে হেরে গিয়েছে এসএফআই। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে যে অস্ত্র কাজে লাগিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে, জেএনইউ-এ সেই নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরকেই অস্ত্র করেছে আইসা। ফলে এমনিতেই জেএনইউ-তে এসএফআইয়ের অবস্থা খুবই খারাপ বলেই সিপিএম নেতৃত্বের মত।
সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, জেএনইউ-তে যাঁরা দলের ছাত্রনেতা, তাঁরাই মূলত সেখানে সিপিএমের শাখা কমিটির সদস্য। এঁদের অধিকাংশই দলীয় সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করলেও কেউই এখনও এসএফআই থেকে পদত্যাগ করেননি। যাঁরা দলীয় সদস্যপদ ছেড়েছেন, তাঁদের মধ্যে এসএফআইয়ের দিল্লি রাজ্য কমিটির সভাপতি রোশন কিশোর, সহ-সভাপতি কে আনন্দ, রাজ্য কমিটির সদস্য জিকো দাশগুপ্ত রয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। রোশন অবশ্য তাঁর বা অন্যদের পদত্যাগের বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করতে রাজি হননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি এসএফআই নেতা। দলীয় বিষয়ে কোনও কথা বলব না।”
সিপিএম নেতারা মনে করছেন, ‘বিক্ষুব্ধ’ ছাত্রনেতারা দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই প্রস্তাব পাশ করাতে চাইবেন। এই প্রস্তাব পাশ হয়ে গেলে জেএনইউ-তে ছাত্র সংগঠন দলীয় সিদ্ধান্তের ‘বিরুদ্ধে’ বলে বার্তা যাবে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি করে প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরিরা উঠে এসেছেন, সেখানেই তাঁদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে গোটা দলের কাছেই অস্বস্তি তৈরি হবে। এই পরিস্থিতিতে শুধু জেএনইউ-এর এসএফআই শাখা নয়, দিল্লির এসএফআই সংগঠনও ভেঙে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে একেবারে নতুন করে সংগঠন গড়ে তোলার কাজ শুরু করতে হবে। তাতে অবশ্য আখেরে লাভই হবে বলে মনে করছেন এসএফআই নেতৃত্ব। |