প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ‘ভুয়ো’ ইস্তফাপত্রের অভিযোগ ঘিরে আক্রমণ জারি রাখতে এ বার নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছেন পূর্ণ অ্যাজিটক সাংমা এবং বিজেপি নেতারা।
আজ সুষমা স্বরাজের বাড়িতে বৈঠকে স্থির হয়, শনিবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে বিষয়টি নিয়ে দরবার করা হবে। বিজেপি নেতা সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, “এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই) থেকে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ইস্তফার ব্যাপারে যে রায় দিয়েছেন, তার মধ্যে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। এর প্রতিবাদে আমরা মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে যাব।” যদিও রিটার্নিং অফিসার তথা রাজ্যসভার সেক্রেটারি জেনারেল ভি কে অগ্নিহোত্রী তাঁর রায়ে বলেছেন, “আমার মতে, চিঠিতে যাঁর সই রয়েছে, তিনি সইটিকে জাল বলছেন কি না সেটাই আসল। প্রণববাবু নিজেই বলছেন, চিঠিটি তিনিই লিখেছেন। কাজেই প্রাথমিক ভাবে অবিশ্বাসের কোনও প্রশ্ন নেই।”
সাংমা আজ বলেন, “গত কাল অনেক রাতে রায়ের প্রতিলিপি হাতে পেয়েছি। তার পর আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” বিজেপি শীর্ষ সূত্রের মতে, আদালতের দরজা খোলা। কিন্তু নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি শুনতে কতটা আগ্রহী হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। রাষ্ট্রপতি ভোটের পরেও দুই-আড়াই বছর মামলা গড়াতে পারে। তত দিনে লোকসভা ভোট হয়ে যাবে। আর প্রণববাবু যদি রাইসিনা হিলে চলে যান, সে ক্ষেত্রে ‘দলহীন’ রাষ্ট্রপতিকে আক্রমণ করে আদৌ লাভ হবে কি না, তা নিয়ে বিজেপির অনেকে সন্দিহান। কারণ লোকসভা ভোটে কোনও ব্যক্তি নয়, তাঁদের লড়তে হবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
প্রণববাবু অবশ্য এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি। জয়পুরে আজ তিনি বলেছেন, “ওঁরা (বিজেপি) কী করবেন সেটা ওঁদের ব্যাপার।” তবে প্রণববাবুর দল যে তাঁর জয় সম্পর্কে নিশ্চিত, তা আজ কলকাতায় জোর গলায় জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পি চিদম্বরম এবং কপিল সিব্বল। সাংবাদিক বৈঠকে দুই মন্ত্রী প্রায় একসঙ্গেই বলেছেন, “৬৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতবেন প্রণববাবু।”
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে মহাকরণে যান সিব্বল। চিদম্বরম যাননি। পরে সাংবাদিক বৈঠকে সিব্বল বলেন, “বাচ্চাদের পড়াশোনা নিয়ে আমার সঙ্গে মমতার কথা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে কোনও কথা হয়নি।” তৃণমূল প্রণববাবুকে সমর্থন করবে বলে তাঁরা আশা করছেন কি না, জানতে চাওয়া হলে চিদম্বরম বলেন, “কে করবে, তা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন করবেন না। আমরা তো বলেই দিলাম উনি ৬৫ শতাংশ ভোট পাবেন।”
এই পরিস্থিতিতে আপাতত বিজেপি চাইছে ইস্তফা-বিতর্ক থেকে যথাসম্ভব ফায়দা তুলতে। এর ফলে দলকে সংগঠিত করা যাবে, আবার কংগ্রেসকেও বিড়ম্বনায় ফেলা যাবে। সেই লক্ষ্যেই কলকাতায় আইএসআই দফতরে আজ রাহুল সিংহদের দিয়ে বিক্ষোভ, স্মারকলিপি পেশ ও প্রণববাবুর ইস্তফাপত্র পোড়ানোর মতো কর্মসূচি নেওয়া হয়। ইস্তফা-বিতর্ক জিইয়ে রাখতে সুষমা স্বরাজ নিজেও যথেষ্ট সক্রিয়। দলের একাংশ অবশ্য চিন্তায়, ভোট মিটে গেলে সাংমা নিজে মামলা চালিয়ে যেতে কতটা আগ্রহী হবেন, তা নিয়ে। কিন্তু সুষমা-শিবিরের বক্তব্য, রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে কাবু করার জন্যই লাগাতার আক্রমণ করা উচিত। আপাতত যে তাস হাতে এসেছে, তা নিয়ে নানা ভাবে আন্দোলন সংগঠিত করা হোক। তার পর পরিস্থিতি অনুযায়ী এগোনো যাবে। |