|
|
|
|
মেয়র-মন্ত্রী চাপান-উতোর |
জায়গা-ভ্যান তৈরি থাকলেও বিক্রি হল না সস্তার সব্জি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কলকাতা পুরসভার আটটি বাজারে বৃহস্পতিবার থেকে সস্তায় সব্জি বিক্রি হবে বুধবার জানিয়েছিলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। পুর কমিশনার খলিল আহমেদকে পাশে বসিয়ে মেয়র বলেছিলেন, সব্জি বিক্রি হবে ভ্রাম্যমান গাড়িতেও।
কিন্তু বৃহস্পতিবার ওই আটটি বাজারে গিয়ে ক্রেতারা দেখেন, সব্জি বেচার কোনও ব্যবস্থাই করেনি পুরসভা। সব্জি নিয়ে পুরসভার কোনও গাড়িকেও ঘুরতে দেখা যায়নি মহানগরীর রাস্তায়।
বুধবার মেয়র বলেছিলেন, পুরসভা গাড়ি দেবে, বাজারে জায়গা দেবে, আর সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সব্জি কিনে তা বিক্রি করবে রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতর। অথচ রাজ্যের কৃষি বিপনণমন্ত্রী অরূপ রায় এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, সব্জি বেচার পরিকল্পনা বা পরিকাঠামো কোনওটাই তাঁর দফতরের নেই। এমনকী, এ রকম নির্দেশও তাঁর দফতরে আসেনি।
তা হলে কীসের ভিত্তিতে মেয়র এমন ঘোষণা করলেন?
মেয়র এ দিন বলেন, “এই বিষয়টির সঙ্গে আমরা সরাসরি যুক্ত নই। সরকার যে টাস্ক ফোর্স তৈরি করে দিয়েছে, পুরসভার সঙ্গে তাদের বৈঠকে সব্জি বেচার জায়গা চাওয়া হয়েছিল। কয়েকটি ভ্যানের ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়েছিল। আমরা ওদের কথামতোই আটটি বাজারে জায়গার ব্যবস্থা করেছি। ভ্যানও তৈরি। কিন্তু কোনওটাই ব্যবহৃত হয়নি। সরকার যখন চাইবে সেগুলি ব্যবহার করা হবে।”
মেয়রের এই বক্তব্য অবশ্য মানতে চাননি কৃষি বিপণন দফতরের একাধিক কর্তা। তাঁদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে সরকারি আধিকারিক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে যে কমিটি তৈরি হয়েছে, সেটি টাস্ক ফোর্স নয়, মনিটরিং কমিটি। বাজারে বাজারে নজরদারি চালানোই ওই কমিটির মূল কাজ। প্রশাসন সূত্রের খবর, সব্জির দাম এখন কমে যাওয়ায় বিভিন্ন বাজারে আলু বিক্রির সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। তার কারণ, আলুর দাম এখনও নামেনি। এতেও অবশ্য খুব বেশি সায় নেই বিভাগীয় আধিকারিকদের একাংশের। তাঁদের বক্তব্য, আলুর দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় বাম সরকারও বিভিন্ন সমবায়ের মাধ্যমে আলু কিনে তা বাজারে বাজারে বিক্রি করেছিল। কিন্তু তাতে দুর্নীতি এমন মাত্রায় পৌঁছোয় যে, কিছু দিনের মধ্যে আলু বেচা বন্ধ করে দিতে হয় সরকারকে।
বাজারে সব্জির মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার যে মনিটরিং কমিটি তৈরি করেছে তাতে ব্যবসায়ী সংগঠনের একাধিক প্রতিনিধি আছেন। এ দিন ওই কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকের পরে একটি ব্যবসায়ী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, “আমলারা বাজারে আলু-সব্জি বিক্রির দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। ফলে সরকারি তরফে সস্তায় সব্জি বিক্রির উদ্যোগ মাঠে মারা যেতে বসেছে।” তাঁর ব্যাখ্যা, ২০১০-এ সরকারি উদ্যোগে আলু বিক্রির প্রক্রিয়ায় যুক্ত ১২ জন অফিসারকে পরবর্তী কালে দুর্নীতির অভিযোগে সাসপেন্ড করা য়েছিল। তাই এ বার আর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না ওই দফতরের কর্মীরা।
সব্জি বিক্রি নিয়ে কলকাতা পুরসভা ও কৃষি বিপণন দফতরের চাপান-উতোরের মধ্যেই আসরে নেমে পড়েছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি জানান, পুরসভার আটটি বাজার থেকে ন্যায্য মূল্যে চাল বিক্রি করবে খাদ্য দফতর। জ্যোতিপ্রিয়বাবু এ দিন এ কথা ঘোষণা করলেও মেয়রের বক্তব্য, এই বিষয়ে তিনি বিন্দুবিসর্গ জানেন না। শোভনবাবুর বক্তব্য, “আমার সঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী বা তাঁর দফতরের কোনও অফিসারের এ নিয়ে কথা হয়নি। তবে খাদ্য দফতর চাল বিক্রি করতে চাইলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে দেব।”
এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার বিকেলে এস এন ব্যানার্জি রোডের একটি দোকানে হানা দিয়ে বেআইনি ভাবে মজুত রাখা ৪৩ কুইন্টাল ভোজ্য তেল বাজেয়াপ্ত করে কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট বিভাগ। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দোকানের ম্যানেজার শশাঙ্ক হাজরাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|