ঠেলে ফেলে দেওয়া হয় চিন্টুকে, গ্রেফতার জেঠা
সাত দিন খনিগর্ভে আটকে থেকে বেঁচে ফিরেছে সে। কিন্তু রানিগঞ্জের চিন্টু গোপের আতঙ্ক সেখানেই শেষ নয়। কারণ ঘটনাটা নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত খুনের ছক, সেই প্রশ্ন এখন সামনে আসছে। এবং চিন্টুর নিজের জ্যাঠামশাই তারকনাথ গোপই সন্দেহের তালিকায় প্রথম নাম। খুনের চেষ্টার অভিযোগে এ দিন তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে চিন্টু জানিয়েছে, খনির মধ্যে আটকে পড়ে তার জেঠুর কথা অনেক বার মনে হয়েছে। মেন পড়েছে, জেঠু সন্ধেবেলা ঘোরাঘুরি করতে বারণ করতেন! চিন্টু তখনও ভাবতে পারেনি, তাকে কোলে-পিঠে মানুষ করা সেই জেঠুরই বিরুদ্ধে তাকে খনিতে ঠেলে ফেলে দিতে বলার অভিযোগ উঠবে!
তারকবাবু কেন চিন্টুকে মারার চক্রান্ত করে থাকতে পারেন, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। তিনি এক সময়ে কয়লা পাচারে যুক্ত ছিলেন এবং তাঁর সম্পর্কে কোনও গোপন তথ্য চিন্টু জেনে গিয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশের অনুমান। অভিযোগ, চিন্টুকে খনিতে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল তার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় মনু গোপ। চিন্টুর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আগেই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারকবাবুও মনুকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে অগ্রণী ভূমিকা নেন। মনুই পুলিশের কাছে দোষ কবুল করে ওই খনিমুখ দেখিয়ে দেয়। কিন্তু সেই সঙ্গে এ-ও দাবি করে যে, তারকবাবুর নির্দেশেই সে ওই কাজ করেছে। পুলিশের দাবি, জেরায় তারকবাবুর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে তাঁর কথা মতো চিন্টুকে খনিতে ঠেলে ফেলে দেওয়ার কথা কবুল করেছে মনু। তার কাছ থেকে সাত হাজার টাকা উদ্ধারও হয়েছে। আজ, শুক্রবার তারকবাবুকে আদালতে তোলার কথা রয়েছে।
এই খাদানেই পাওয়া গেল চিন্টুকে। ওমপ্রকাশ সিংহের তোলা ছবি।
গত ২৮ জুন সন্ধ্যায় ১৭ বছরের চিন্টু নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তার বাড়ির লোকজন কাঁকরডাঙার বাসিন্দা মনু গোপকে সন্দেহ করছিলেন। চিন্টুর মা কাজলদেবীর দাবি, “মনু আমাদের দূর সম্পর্কের ভাগ্নে হলেও সম্পর্ক অত্যন্ত তিক্ত। এর আগে তিন বার সে আমাদের গরুর গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। এক বার ঘরও জ্বালিয়ে দেয়। আত্মীয়তার কথা ভেবেই আমরা পুলিশে যাইনি। এর পরেও মনু বারবার হুমকি দিত, ‘এমন মজা দেখাব যা কোনও দিন ভুলতে পারবে না।’ কিন্তু সে যে সত্যিই এমন কিছু করবে ভাবতে পারিনি।” চিন্টুর বাবা ঝাঁটিডাঙা এলাকার বাসিন্দা শৈলেন গোপের প্রতিবেশীরাও পুলিশকে জানান, নিখোঁজ হওয়ার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চিন্টুর সঙ্গেই মনুকে শেষ দেখা গিয়েছে।
২৯ জুন চিন্টুর পরিবারের তরফে পুলিশে ‘নিখোঁজ ডায়েরি’ করা হয়। পরের দিনই চিন্টুর জেঠু তারকবাবুর নেতৃত্বে কিছু পাড়াপড়শি মনুকে বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। ১ জুলাই পুলিশ মনুকে আদালতে তুলে ১০ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয়। ওই দিন সকালেই তারকবাবু প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে রানিগঞ্জ থানায় গিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে চেঁচামেচি করেন। মনু গ্রেফতার হওয়ার সত্ত্বেও চিন্টুর খোঁজ মিলছে না কেন, সেই প্রশ্ন তুলে পুলিশের তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। পুলিশ সূত্রের খবর, তারকবাবু সে দিন মনুকে জনতার হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিলেন।
তারকবাবু কি বুঝতেই পারছিলেন যে মনু তাঁর কাল হয়ে দাঁড়াবে? সেই জন্যই কি তাকে জনতার হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করছিলেন? এসিপি (সেন্ট্রাল) সুনীল যাদব জানান, মনু পুলিশকে জেরায় তারকবাবুর নামই বলে। মনুর দাবি, তারকবাবুর নির্দেশেই আর এক জনকে সঙ্গে নিয়ে সে চিন্টুকে পরিত্যক্ত খনিতে ঠেলে ফেলে খনির মুখ বন্ধ করে চলে এসেছিল। বুধবার গভীর রাতে পুলিশ মনুকে সঙ্গে নিয়ে আমকোলা কোলিয়ারি এলাকায় যায়। সে-ই খনিমুখ দেখিয়ে দেয়।
রানিগঞ্জ থানার ওসি উদয়শঙ্কর ঘোষের কথায়, “জিপ এবং মোটরবাইকের হেডলাইট জ্বালিয়ে খনিমুখের ঢাকনা সরিয়ে আমরা ১০ জন পুলিশকর্মী এবং দমকল বিভাগের ১০ কর্মী আওয়াজ দিতে থাকি। একটু পরে নীচ থেকে গোঙানির ক্ষীণ শব্দ আসে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা দড়ির আগায় মই বেঁধে প্রায় ১৬০ ফুট নীচে ঝুলিয়ে দিই। উপর থেকে চিৎকার করে বলতে থাকি, মইটা জাপটে ধরো। ছাড়লেই জলে তলিয়ে যাবে।”
ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় চিন্টুকে তুলে আনা হয়। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই পুলিশকে সে বলে, “মনুদা আমায় ঠেলে ফেলে দিয়েছিল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.