ধাক্কা মেরে খনিগর্ভে, ৭ দিন পর উদ্ধার কিশোর
৬০ ফুট গভীর খনিগর্ভে ফেলে খুনের চেষ্টা সত্ত্বেও সাত দিন পরে বেঁচে ফিরল রানিগঞ্জের এক কিশোর।
এ যেন ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে পড়ে যাওয়া অ্যারন র‌্যালস্টনের কাহিনিরই পুনরাবৃত্তি। পাঁচ দিন সাত ঘণ্টা পাথরের খাঁজে আটকে থাকার পরে যিনি নিজের ডান হাত কেটে ফেলে উদ্ধার পেয়েছিলেন। যে কাহিনি নিয়ে হলিউডের ড্যানি বয়েল তৈরিও করে ফেলেছেন ‘ওয়ান টোয়েন্টি সেভেন আওয়ারস’।
চিন্টুর কাহিনিতে যেটা বাড়তি, তা হল খুনের ছক। যে জেঠার কোলে-পিঠে চেপে মানুষ হয়েছে, সেই তারকনাথ গোপই মনু গোপ নামে এক আত্মীয়কে টাকা দিয়ে খুনের ছক কষেছিলেন বলে পুলিশের অনুমান।
২৮ জুন সন্ধ্যায় নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল রানিগঞ্জের ঝাঁটিডাঙার বাসিন্দা শৈলেন গোপের ১৭ বছরের ছেলে চিন্টু। বৃহস্পতিবার ভোরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। পুলিশের দাবি, তারকবাবুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে চিন্টুকে খনিতে ঠেলে ফেলার কথা কবুল করেছে মনু।
কী হয়েছিল ২৮ তারিখ?
হাসপাতালে চিন্টু। ছবি: শৈলেন সরকার।
আসানসোল মহকুমা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে চিন্টু বলে, “মনুদা বলেছিল, ‘আশ্চর্য’ একটা জিনিস দেখাতে নিয়ে যাবে। তার আগে দোকানে নিয়ে গিয়ে শিঙাড়া খাওয়াল। তার পর থেকেই মাথাটা ঝিমঝিম করছিল।”
শরীর খারাপ লাগায় আর ‘আশ্চর্য জিনিস’ দেখতে যেতে চায়নি চিন্টু। কিন্তু মনু নাছোড়। মোটরবাইকে করে তারা আসে আমকোলার একটা চানকের (পরিত্যক্ত ভূগর্ভস্থ খনির প্রবেশমুখ) পাশে। সেখানে নেমেই মনু পিছন থেকে তাকে ধাক্কা মারে বলে চিন্টুর দাবি। তার কথায়, “পড়েই বেশ কিছুটা তলিয়ে গিয়েছিলাম। একটা শক্ত পাথরে ধাক্কা খেলাম। কোমরে ভীষণ লাগল। ‘হাত-পা ভাঙেনি তো?’ মনুদার চিৎকার ভেসে এল। তখন আমি কথা বলার অবস্থায় নেই। ভুস করে এক বার ভেসে উঠে উপরে তাকিয়ে দেখি, যেখান দিয়ে পড়েছি তার মুখটা কেউ ঢেকে দিচ্ছে।”
ঘুটঘুটে অন্ধকারে কোনও মতে একটা পাথরের খাঁজ আঁকড়ে ধরে চিন্টু। কিন্তু সে ভাবে আর কত ক্ষণ চলে! “হঠাৎই হাতে ঠেকল শক্ত কিছু। হাত বুলিয়ে বুঝলাম, একটা পাইপ। হাঁচড়পাঁচড় করে তাতেই চেপে বসলাম।”
পাইপের উপরেই সাত-সাতটা দিন কাটিয়েছে চিন্টু। গোড়ার দিকে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেছে, লোকের সাড়া পাওয়ার আশায়। শেষের দিকে সেই শক্তি আর ছিল না। “প্রথম দিনটা ঘোরের মধ্যেই কেটে গিয়েছিল। এক সময়ে হুঁশ ফিরল। বোধহয় পরের দিন। অসহ্য খিদেয় এক সময় হাতের আঙুল চিবিয়ে ফেললাম। কিন্তু কখন যেন খিদেটা মরে গেল। খালি ঝিমুনি আসে। ঘুমিয়ে পড়ি। পোকার কামড়ে জেগে উঠি।”
ইতিমধ্যে ২৯ জুন থানায় ডায়েরি করেছে চিন্টুর পরিবার। তার পরের দিনই তারকবাবুর নেতৃত্বে পাড়াপড়শিরা মনুকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। সেই মনুই পুলিশের জেরার মুখে তারকবাবুর নাম করে। বুধবার গভীর রাতে পুলিশ মনুকে নিয়ে কোলিয়ারি এলাকায় যায়। মনু খনিমুখ দেখিয়ে দেয়। রানিগঞ্জ থানার ওসি বলেন, “জিপ এবং মোটরবাইকের হেডলাইট জ্বালিয়ে খনিমুখের ঢাকনা সরিয়ে আওয়াজ দিতে থাকি। একটু পরে নীচ থেকে গোঙানির শব্দ আসে। দড়িতে মই বেঁধে ঝুলিয়ে দিই।”
মনুর কথায়, “হঠাৎ দেখি আলোর ছটা। শুনি, উপর থেকে অনেক গলা বলছে উঠে এসো চিন্টু, ভয় নেই, শক্ত করে চেপে ধরো মইটা।” চিন্টু মই ছাড়েনি। ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় তাকে তুলে আনা হয়। হাত-পা ফ্যাকাসে, সারা শরীরে ঘায়ের মতো দাগ।
তারকবাবু কেন তাকে মারার চক্রান্ত করে থাকতে পারেন, তা স্পষ্ট নয়। পুলিশের বক্তব্য, তিনি এক সময়ে কয়লা পাচারে যুক্ত ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে কোনও গোপন তথ্য চিন্টু জেনে গিয়েছিল কিনা, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.