এক গৃহবধূকে খুনের অভিযোগে অভিযুক্তদের পুলিশের গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধে জখম হলেন আটজন। আহতদের মধ্যে হাবরা থানার আই-সি-সহ কয়েকজন পুলিশকর্মীও রয়েছেন। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটে উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা থানা চত্বরে। পুলিশের উপর আক্রমণের ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, পুলিশকে আক্রমণ করা হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল না। তারা অভিযুক্তদের ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। বাধা পেয়েই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অঞ্জনা দাস (২৩) নামে ওই গৃহবধূর মৃতদেহ রবিবার গভীর রাতে হাবরার তিনআমতলায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার হয়। অঞ্জনাদেবীর বাবা তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে বলে হাবরা থানায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও অভিযুক্তরা খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, ঝগড়াঝাটি করে অঞ্জনাদেবী নিজেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ দিন ধৃতদের আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন। |
জেলার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “জনতা অভিযুক্তদের ছিনিয়ে নিতে গেলে পুলিশ বাধা দেওয়ায় পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছোড়া হয়। তাতে কয়েকজন পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন। চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালের মে মাসে গাইঘাটা থানার চাঁদপাড়ার সেকাঠি হালদারপাড়ার বাসিন্দা অঞ্জনাদেবীর সঙ্গে হাবরার তিনআমতলার বাসিন্দা সুরজিৎ দাসের বিয়ে হয়। হাবরা থানায় অভিযোগে অঞ্জনাদেবীর বাবা উত্তম দাস জানান, বিয়েতে তাঁরা নগদ, গয়না-সহ অন্যান্য জিনিসপত্র যৌতুক দিয়েছিলেন। কিন্তু বিয়ের পরে আরও যৌতুকের জন্য তাঁর মেয়ের উপরে শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচার করা হত। জামাই প্রায়ই মদ্যপ অবস্থায় মেয়েকে মারধর করত। কয়েকবার জোর করে টাকা আদায়ের জন্য বাপের বাড়িতে পাঠিয়েও দিয়েছিল। অঞ্জনাদেবীর শ্বশুরবাড়ির কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, প্রায়ই অঞ্জনাদেবীকে মারধর করা হত শ্বশুরবাড়িতে। এমনকী তাঁর বিবাহিত ননদও বাপের বাড়িতে এসে তাঁকে মারধর করত। রবিবার গভীর রাতে দরজা ভাঙার আওয়াজ পেয়ে তাঁরা এসে দেখেন অঞ্জনাদেবীর মৃতদেহ খাটে শুইয়ে রাখা হয়েছে। এর পরে তাঁরাই অঞ্জনাদেবীকে হাবরা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। প্রতিবেশীদের কাছে খবর
|
গৃহবধূ অঞ্জনা দাস। |
পেয়ে সোমবার ভোরে উত্তমবাবুরা হাবরা হাসপাতালে গিয়ে মেয়েকে মৃত অবস্থায় দেখেন। এর পরেই উত্তমবাবু জামাই, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদের বিরুদ্ধে মেয়েকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ওই চারজনকে গ্রেফতার করে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিবেশীরা পুলিশকে অভিযুক্তদের তাদের হাতে দিয়ে দেওয়ার দাবি জানায়। কিন্তু পুলিশের বাধা পেয়ে জোর করে অভিযুক্তদের ছিনিয়ে নিতে গেলে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। উত্তেজিত জনতাকে পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে হটিয়ে দিতে গেলে জনতাও পুলিশকে লক্ষ্য করে পাল্টা ইট ছুড়তে শুরু করে। ইটের ঘায়ে থানার আইসি ও কয়েকজন পুলিশকর্মী-সহ আট জন জখম হন। |