বহরমপুর থানায় রবিবার রাত আড়াইটে নাগাদ রক্ত মাখা হাঁসুয়া হাতে হাজির হন ভাকুড়ি দক্ষিণপাড়ার এক মহিলা। থানায় ঢুকেই কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারের সামনে টেবিলের উপরে রক্ত মাখা হাঁসুয়াটা রেখে তিনি জানিয়ে দেন, “খুন করে এসেছি!” কাকে? মহিলা জানান, পড়শি যুবক সেলিম শেখ (১৯) বেশ কিছু দিন ধরেই তাকে উত্যক্ত করছিল তাকে। এ দিন তাকে ‘ধর্ষণ’ করতে এসেছিল। বাধা দিতে গিয়ে হাতের কাছে পড়ে থাকা দা দিয়ে কুপিয়েই খুন করেছে সে সেলিমকে।
থানার কর্তব্যরত অফিসার জানান, সেই সময় তিনি লক্ষ্য করেন মহিলার নিজের বাঁ হাতের কব্জি থেকেও চুঁইয়ে পড়ছে রক্ত। পুলিশের জেরায় মহিলা জানায়, সেমিলের সঙ্গে ধস্তাঘস্তির সময়ে হাঁসুয়ার কোপ পড়ে তার হাতেও। রাতেই বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তার চিকিৎসা হয়। তবে মহিলার কথায় যে যথেষ্ট অসংলগ্নতা রয়েছে তা জানিয়েছে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “খুনটা আদপেই ওই মহিলাই করেছেন, না অন্য কাউকে আড়াল করতে খুনের ‘দায়’ নিজের কাঁধে নিচ্ছে ওই মহিলা, খতিয়ে দেখা হচ্ছে সেটাই। রাত থেকেই তাকে দেরা করা হচ্ছে। ঘটনাটি কী ভাবে ঘটল, খুনের জায়গায় মহিলাকে নিয়ে গিয়ে পুলিশ এ দিন সকালেই তা দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু এলাকায় ওই মহিলাকে নিয়ে যেতেই স্থানীয় বাসিন্দারা এমন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে যে তাকে আর নামানো যায়নি।”
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই মহিলার পাশাপাশি তার শ্বশুর ও শাশুড়িকেও আটক করা হয়েছে। তবে ঘটনার পর থেকেই মহিলার স্বামী পলাতক। পুলিশের একাংশ অবশ্য মনে করছে, ওই খুন একা ওই মহিলার পক্ষে করা সম্ভই নয়। এর পিছনে মহিলার স্বামী বা অন্য কেউ রয়েছে।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর যেমন স্পষ্টই বলছেন, “ওই মহিলার পক্ষে একা ওই খুন করা সম্ভব নয়। সম্ভবত পরিকল্পনা করে ওই যুবককে বাড়ি থেকে ডেকে খুন করা হয়েছে এবং গোটা বিষয়টি ওই মহিলা জানত। খুনের ঘটনায় ওই মহিলার সঙ্গে তার স্বামী ও আরও দু-এক জন জড়িত রয়েছে বলেও প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। এমনও হতে পারে ওই ঘরে সেলিমের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলার পরেই মহিলার স্বামী ওই যুবককে খুন করেছে।” |
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “সেলিম শেখের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সর্ম্পক ছিল ওই মহিলার। ঘটনার রাতে ওই মহিলা মোবাইলে ফোন করে ওই যুবককে বাড়িতে ডেকে পাঠায়। এর পরে রাত আড়াইটে নাগাদ ওই মহিলা বহরমপুর থানায় হাজির হয়ে ওই খুনের কথা কবুল করে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই মহিলা-সহ তিন জনকে আটক করা হয়েছে।”
পুলিশ জানায়, রবিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ সেলিমেরে মোবাইলে ফোন করেন ওই মহিলা। সঙ্গে সঙ্গেই বানি থেকে বেরিয়ে যায় সেলিম। ওই মহিলাও জানান, কয়েক দিন ধরে সেলিম তাকে ফোনে উত্যক্ত করছিল। রবিবার সন্ধ্যা থেকেই বেশ কয়েক বার ফোনে সেলিমের সঙ্গে তার বিবাদও হয় বলে জেরায় মহিলা পুলিশকে জানায়। ওই দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে মহিলার বাড়ির লাগোয়া একটি দোকান থেকেই সেলিমের হাত-পা বাঁধা দেহ উদ্ধার করে।
পুলিশের জেরায় ওই মহিলা অবশ্য জানানয়, ঘরের মধ্যে শাশুড়ি দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঘুমিয়েছিল। ওই মহিলার দাবি, “সেলিম আমাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। শাশুড়ি জানতে পারবে বলে তখন আমি তাকে বাড়ির লাগোয়া ওই ঘরে অপেক্ষা করতে বলি। এর পরে হাঁসুয়া নিয়ে ওই ঘরে যাই। সেখানে আমাকে ফের ধর্ষণের চেষ্টা করলে হাঁসুয়া দিয়ে ঘাড়ে কোপ মারি। এতে মাটিতে পড়ে যেতেই হাত-পা বেঁধে ফের হাঁসুয়া দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপ মেরে খুন করি।” প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, ওই মহিলার স্বামী বাড়ির কাছেই বেসরকারি একটি শো-রুমে নৈশপ্রহরীর কাজ করে। ঘটনার রাতে অবশ্য সে অবশ্য কাজে যায়নি। কোথায় ছিল সে? শো-রুমের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে তা জানানর চেষ্টা করছে পুলিশ। সেলিমের মা কামেরুন বিবি বলেন, “সেলিম গাড়ি চালায়। ওই দিন রাত দশটা নাগাদ বাড়ি ফেরে। এর পরে খাওয়া-দাওয়া করে ঘরে শুতে যায়। পরে মোবাইলে ফোন আসে এবং ছেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।” |