উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) কর্মীদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া ৯০ কোটি টাকা প্রভিডেন্ট ফাণ্ডে জমা না-দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে পরিবহণ দফতর। সোমবার কোচবিহারে নিগম কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ওই নির্দেশ দেন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র। সেই সঙ্গে তিনি জানান, সংস্থার কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফাণ্ডের টাকা লোপাটের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবহণ মন্ত্রী বলেন, “কর্মীদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া ৯০ কোটি টাকা প্রভিডেন্ট ফাণ্ডে জমা পড়েনি। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনায় যে ব্যক্তিরা জড়িত আছেন কেউ পার পাবে না।” |
এ দিকে প্রভিডেন্ট ফাণ্ডে টাকা বকেয়া পড়ে থাকায় ২০১৩ সাল থেকে সংস্থার যে সমস্ত কর্মী অবসর নেবেন তাঁদের পাওনা টাকা মেটানো নিয়ে উদ্বিগ্ন নিগম কর্তৃপক্ষ। পরিবহণ মন্ত্রীর অভিযোগ, বামফ্রন্টের শাসন কালে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য কেটে নেওয়া টাকা জমা না দেওয়ার ঘটনা ওই দুর্নীতির একটি নমুনা। তিনি বলেন, “নিগমের উপরে ২০০ কোটিরও বেশি টাকার বোঝা চেপে আছে। তার মধ্যে প্রভিডেন্ট ফাণ্ডের ৯০ কোটি টাকা। ওই বকেয়া মেটানো না গেলে ২০১৩ সাল থেকে সংস্থার যে কর্মীরা অবসর নেবেন তাঁদের পাওনা মেটাতে সমস্যা হবে।” এনবিএসটিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে পালা বদলের পরে সংস্থার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়। ওই সময় কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকার দুর্নীতির ঘটনা সামনে আসে। সোমবার পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এনবিএসটিসির কর্তারা সবিস্তারে বিষয়টি তুলে ধরেন। ঘটনাটি শোনার পরে নিগমের প্রাক্তন চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষের কাছেও ওই বিষয়ে খোঁজ নেন পরিবহণ মন্ত্রী। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগণ বলেন, “দীর্ঘদিন থেকে টাকা জমা না দেওয়ার ফলে প্রভিডেন্ট ফাণ্ডে প্রচুর টাকা বকেয়া পড়েছে। ফলে কেন্দ্রের কাছে ওই খাতে প্রাপ্য ২৬ কোটি টাকা মিলছে না। বাধ্য হয়ে ভতুর্কির পাওনা থেকে প্রতি মাসে ২০ লক্ষ টাকা জমা দেওয়া হচ্ছে।” নিগম সূত্রের খবর, পরিস্থিতি সামাল দিতে গত মে মাসে নিগমের ফিক্সড ডিপোজিট মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে ভাঙানো হয়েছে। আরও কিছু ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়ে চলতি বছর পর্যন্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফাণ্ডের বকেয়া মেটানো সম্ভব হবে। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জানান, গত মাসে বকেয়া মেটাতে ৯০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন ছিল। হাতে ৪৫ লক্ষ টাকা থাকায় বাধ্য হয়ে মেয়াদ পূর্ণ হবার আগে ৫০ লক্ষ টাকার একটি ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙাতে হয়েছে। এ দিন প্রভিডেন্ট ফাণ্ডের বকেয়া টাকা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি পরিবহণ মন্ত্রী জানান, পুজোর আগে এনবিএসটিসির জন্য একশোটি নতুন বাস কেনা হবে। উত্তরবঙ্গের ভুটান ও অসম লাগোয়া এলাকার রাস্তায় ওভারলোডিং বন্ধে ওয়েব্রিজ, চেকপোস্ট বাড়ানো হবে। এ ছাড়াও নিগম কর্মীদের বেতন মাসের ১০ তারিখের মধ্যে দেওয়ার জন্য তিনি উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস দেন। |