এক দিকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে জেনারেটরের সংযোগ নেই। অন্য দিকে পাইপ ভেঙে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে জলাভাব। এই দুই সমস্যার মধ্যে পড়ে নাকাল হলেন হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মী, রোগী এবং রোগীর আত্মীয়েরা। রবিবার বিকেল থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত এই অবস্থাই ছিল রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালের। সোমবার দুপুরে পাইপ মেরামতি করে হাসপাতালের শিশু বিভাগ, প্রসূতি বিভাগ, পুরুষ, মহিলা বিভাগে জলকষ্ট দূর করা গেলেও প্রায়শই এই ধরনের সমস্যায় জর্জরিত রামপুরহাট হাসপাতাল। হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মীদের কথায়, “এই সমস্যা নতুন নয়।” জেনারেটর লাইনের সংযোগের অভাবে হাসপাতালের বহির্বিভাগের দুর্দশা অবশ্য এখনও কাটেনি। সমস্যা সমাধান যাঁদের দায়িত্ব সেই পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার (বিদ্যুৎ) নারায়ণচন্দ্র গড়াই বলেন, “হাসপাতাল কতৃপক্ষের আবেদন পাওয়ার পর জেনারেটরের ক্ষমতা দেখে বহির্বিভাগের সংযোগ দেওয়া যাবে কি না বিবেচনা করে দেখতে হবে।”
পূর্ত বিভাগের সহকারী বাস্তুকার, বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকের কথায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ হাসপাতাল কতৃপক্ষ। হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার সুদীপ্ত মণ্ডল বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে বহির্বিভাগে জেনারেটর লাইনের সংযোগ দেওয়ার জন্য পূর্ত দফতরে আবেদন করলেও সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়নি দফতর। অথচ হাসপাতালের সাধারণ বিভাগ থেকে শুরু করে শল্য, দন্ত, শিশু, চোখ-সহ সমস্ত ধরনের বহির্বিভাগে দৈনন্দিন প্রায় পাঁচশোর বেশি রোগী দেখা হয়। লোডশেডিং হয়ে গেলে জেনারেটরের অভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সকলকে।” সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার পরে বহির্বিভাগে লোডশেডিং হয়। ১২টা পর্যন্ত গলদঘর্ম অবস্থা রোগী থেকে চিকিৎসকদের। চিকিৎসক সুব্রত ঘোষ, চঞ্চল দাসদের ক্ষোভ, “লোডশেডিংয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেও সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
সোমবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের রোগীদের জন্য তাদের পরিজনেরা বাইরে থেকে জল জোগাড় করে আনছেন। বারো বছরের কিশোর রাজেশ শেখের মা পেটের জটিল অস্ত্রোপচারের জন্য তিনি দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাকেও হাসপাতালে ঢোকার সময় তিন বোতল জল নিয়ে ঢুকতে দেখা গেল। আর এক রোগীর আত্মীয় নাসির শেখ বলেন, “রাত থেকে হাসপাতালে জল নেই। বাইরে থেকে জলের জোগান দিতে হচ্ছে। শিশু বিভাগে ভর্তি থাকা ছেলেকে অন্যের দায়িত্বে রেখে দিয়ে পূর্ণিমা বায়েন নামে এক বধূকে দেখা গেল জলের সন্ধানে বাইরে দৌড়তে। হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার সুদীপ্ত মণ্ডল এই সমস্যার কথা শুনে বলেন, “কাল থেকে এই ধরনের সমস্যার কথা কেউ আমাকে বলেননি।” খোঁজ নিয়ে তিনি বলেন, “সমস্যা রয়েছে। পূর্ত দফতরকে বলা হয়েছে।” হাসপাতাল সুপার হিমাদ্রি হালদারের দাবি, “রবিবার রাতে কে বা কারা ট্যাঙ্কের জলের পাইপ চুরি করার চেষ্টা করেছিল। এর ফলে পাইপে ফাটল দেখা দেয়।” তিনি বলেন, “বহির্বিভাগে জেনারেটরের ব্যবস্থার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। দেখা যাক কী হয়।” |