অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত দশ দিনে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৩ টি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য দফতরে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত শিশুদের বয়স ২-৫ বছরের মধ্যে। কারও শরীরে জ্বরের কোনও লক্ষণ ছিল না। অথচ খিঁচুনি ছিল। ভর্তি হওয়ার ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যেই ওই শিশুরা মারা গিয়েছে। মৃত শিশুদের অধিকাংশের বাড়ি মালদহের কালিয়াচক এলাকা। কী কারণে ওই শিশুদের মৃত্যু হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে কলকাতার স্কুল অব ট্রপিকাল মেডিসিন থেকে দু’জন বিশেষজ্ঞ কৃষ্ণাংশু রায় মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান কৃষ্ণকুমার হালদারের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের দল মালদহ মেডিক্যাল কলেজে রবিবার পৌঁছন। রাতে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি এদিন সকালে বিশেষজ্ঞ দলটি কালিয়াচকেও যান। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র তথা প্রতিনিধি দলের সদস্য অসিত বিশ্বাস জানান, ১-১১ জুন পর্যন্ত অজানা রোগে ৪১টি শিশু আক্রান্ত হয়ে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। গত তিনদিনে ৬ টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। |
আক্রান্ত ও মৃত শিশুদের রক্ত পরীক্ষা, সিটি স্ক্যান-সহ একাধিক পরীক্ষার পরেও রোগের কারণ শনাক্ত করা যায়নি। তিনি বলেন, “জ্বর নেই অথচ খিঁচুনি হয়ে শিশু মারা যাচ্ছে, এমন রোগ লক্ষণ আগে কোথাও দেখা যায়নি। আক্রান্ত কয়েকটি শিশুর শিরদাঁড়ার জল ও ব্লাড কালচার সংগ্রহ করে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কলকাতায় পরীক্ষা করার পরেও রোগের কারণ না উদ্ধার করা না-গেলে পুনের এনআইবিতে নমুনা পাঠানো হবে।” এই ধরনের রোগের লক্ষম দেখা গেলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, কীটনাশকের প্রভাবে ওই শিশুদের মৃত্যু হতে পারে। মালদহে এখন মরসুমি ফল উঠেছে। ফল সংরক্ষণ করতে জেলায় ব্যাপক ভাবে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। সেই ফল খেয়ে ওই শিশুরা আক্রান্ত হয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, অস্বাভাবিক গরমের বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে। স্কুল অফ ট্রপিক্যালের অধিকর্তা কৃষ্ণাংশু রায় বলেন, “৭২ ঘন্টার আগে বলা যাবে না মালদহ মেডিক্যাল কলেজে আজানা রোগে শিশু মৃত্যুর কারণ কী?” রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র জানান, অজানা রোগে আক্রান্ত ৪১ জন শিশুর ৩০ জন শিশুই কালিয়াচক-১ নম্বর ব্লক থেকে এসেছে। মৃত শিশুর সংখ্যাও ওই ব্লকেই বেশি। রোগ মোকাবিলা করার জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে মালদহ মেডিক্যাল কলেজের শিশু ওয়ার্ডের ভিতরেই আক্রান্তদের জন্য ১৫ টি আলাদা শয্যা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে অসিতবাবু জানিয়েছেন। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগে চিকিৎসাধীন কলিয়াচকের দারিয়াপুরের দুই বছর বয়সী মিনা খাতুনের রবিবার রাতে মৃত্যু হয়। মা মেরিনা বিবি বলেন, “সকালে বাড়িতে মেয়ের খিঁচুনি শুরু হয়। তখনই মেয়েকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ভর্তি করি। তার পরে মেয়ে ভালই ছিল। আবার খিঁচুনি শুরু হলে মেয়ে মরে গেল।” একই ভাবে কালিয়াচকের জালাপুরের ৫ বছর ৬ মাস বয়সী ইকবাল হোসেনের খিঁচুনি শুরু হলে শনিবার বিকেলে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ইকবালের মা আনসারি বিবি বলেন, “বাগান থেকে খেলাধূলা করে বাড়ি ফেরার পরেই ছেলে বলে আমার শরীর ভাল লাগছে না। বাড়িতে খিঁচুনি শুরু হতেই মালদহ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে ভর্তি করি। ৬ ঘন্টার মধ্যেই ছেলেটা মরে গেল।” |