শ্যামল সেন কমিটির সুপারিশ নিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ঘরে-বাইরে যখন অস্বস্তিতে, ঠিক তখনই পাহাড়ে শক্তি আরও বাড়াল তৃণমূল।
সোমবার দুপুরে কার্শিয়াংয়ের পানিঘাটায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের উপস্থিতিতে তরাই-এ মোর্চার প্রাক্তন সভাপতি বিশাল ছেত্রী, কার্শিয়াং পুরসভার জিএনএলএফের তিন প্রাক্তন কাউন্সিলর নরবাহাদুর খাওয়াস, ছিরিং সুব্বা, কেএল সুব্বা এবং পানিঘাটার প্রাক্তন জিএনএলএফ নেতা তথা গোর্খা লিগ নেতা রাজেন মুখিয়া অনুগামীদের নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন।
গৌতমবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড়ে উন্নয়ন ও শান্তির জন্য একের পর এক পদক্ষেপ করছেন। এতে খুশি হয়ে পাহাড়ের মানুষ আমাদের দলে আসতে চাইছেন।”
তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, রেলমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে মমতা বেশ কয়েক বার পাহাড়ে এসেছেন। তখনই মোর্চা-বিরোধী নেতারা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু মমতা তখন তাঁদের বলেন, তিনি পাহাড়ে রাজনীতি করতে আগ্রহী নন। তবে বিপদে-আপদে নিশ্চয়ই পাশে আছেন। ওই নেতারাও এত দিন গৌতম দেবের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন। এখন মোর্চা বেঁকে বসায় তাঁদের দলে নেওয়ার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন মমতা। গৌতমবাবু অবশ্য এ দিন বলেন, “আমাদের সঙ্গে কারও বিরোধ নেই। আমরা সবাইকে নিয়েই পাহাড়ে উন্নয়নের কাজ করতে চাই।” এ দিন ৯৭২ জন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে তাঁর দাবি।
কিন্তু তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন? মোর্চা-বিরোধী ওই নেতাদের বক্তব্য, ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বোঝাতে পেরেছেন যে, তিনি পাহাড়ে শান্তি ও উন্নয়ন চান। যার জেরে চার বছর পরে পাহাড়ে পর্যটকের ঢল নেমেছে। ফলে মুখে হাসি ফুটেছে পাহাড়ের আমজনতার মুখে। এই স্বাভাবিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য বজায় থাকুক, সেটাই তাঁরা চান। নরবাহাদুর খাওয়াস যেমন বলছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর পাহাড়ে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। তাঁর সঙ্গে এগিয়ে চলা আমাদের দায়িত্ব।” বিশাল ছেত্রী বলেন, “পাহাড়কে সুইৎজারল্যান্ড বানানোর লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই স্বপ্ন সফল করতে তাঁর হাত শক্ত করা প্রয়োজন।” মোর্চার উত্থানের পরেও পানিঘাটায় দীর্ঘদিন জিএনএলএফের সবুজ পতাকা ‘টিকিয়ে’ রেখেছিলেন একদা তরাইয়ের দাপুটে নেতা রাজেন মুখিয়া। পরে গোর্খা লিগে যোগ দেন। তিনি বলেন, “পাহাড়ে আঞ্চলিক দলের পক্ষে উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছা প্রমাণিত।”
কিন্তু এর পাশাপাশি তৃণমূলে যোগদানের রাজনৈতিক একটা কারণও আছে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজেনবাবুর অনুগামীরা এ দিন বলেন, পাহাড়ে যখন যে দল ক্ষমতায়, তখন সে-ই শেষ কথা বলে। অন্য দলের কর্মীদের নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করা হয়। তাই একটি শক্তিশালী সমান্তরাল মঞ্চ দরকার। ভুক্তভোগীদের মতে, পাহাড়ে ক্ষমতাসীনের ‘দাপট’ সুবাস ঘিসিঙের সময় যেমন সত্য ছিল, তেমনই বিমল গুরুঙ্গের আমলেও সত্যি। কোনও পক্ষই বিন্দুমাত্র বিরোধী কণ্ঠ মাথাচাড়া দিতে দেয়নি। রাজ্যে বামফ্রন্ট যখন ক্ষমতায় তখন পাহাড়ে সিপিএম জেলা কমিটির সদস্য কৃষ্ণবাহাদুর ওয়াতারের বাড়ির জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। খোদ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে বারবার জানিয়েও সুরাহা হয়নি বলে জানাচ্ছেন কৃষ্ণবাহাদুর নিজেই।
তাই একটা মঞ্চের প্রয়োজনীয়তা অনেক দিন থেকেই অনুভব করছিলেন মোর্চা বিরোধীরা। তৃণমূল সেই ‘নিরাপত্তা’ দিতে পারে বলে তাঁদের ধারণা। বিশেষ করে কমিটির রিপোর্ট ঘিরে উদ্ভুত পরিস্থিতির বিচারে। অন্য দিকে তৃণমূল মনে করছে, এই শক্তিবৃদ্ধির ফলে মোর্চার উপরে চাপ বাড়িয়ে তাদের ‘পথে’ আনা যাবে। দলের তরফে মোর্চা নেতাদের বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, তাঁরা যদি কমিটির রিপোর্ট মেনে নেন, তা হলে এখানেই থামা হবে। নইলে শক্তি আরও বাড়ানোর পথে এগোবেন মমতা।
এ দিনের ঘটনায় মোর্চা নেতৃত্বের অস্বস্তি যে বেড়েছে তাতে সন্দেহ নেই। তবে প্রকাশ্যে তা কবুল করতে নারাজ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয় তামাং বলেন, “এর আগে কংগ্রেস, সিপিএম চেষ্টা করেও পাহাড়ে সংগঠন তৈরি করতে পারেনি। তৃণমূলের পক্ষেও মজবুত সংগঠন করা সম্ভব নয়।”
|
অস্বস্তিতে মোর্চা |
সময় দিলেন মমতা |
• মোর্চার সঙ্গে বৈঠক ১৪ জুন
•
পাহাড়ের নাগরিক সমাজের সঙ্গে কথা ১৫ জুন |
|