রাজ্যে ছ’টি পুরসভার ভোটের ফলপ্রকাশের ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় আবার নির্বাচনী ময়দানে সম্মুখ সমরে তৃণমূল এবং সিপিএম! বাঁকুড়া জেলার বাঁকুড়া সদর এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে আজ, মঙ্গলবার। দু’টি আসনই গত বছর বিধানসভা ভোটে বিপুল ব্যবধানে জিতেছিল তৃণমূল। সেই অর্থে তৃণমূলের কাছে এই জোড়া উপনির্বাচন আসন ধরে রাখার লড়াই। আর ব্যবধান কমানো এবং ভোটপ্রাপ্তির হার বাড়ানোই সিপিএমের আশু লক্ষ্য। দুই কেন্দ্রেরই ফল ঘোষণা হবে আগামী ১৫ জুন, শুক্রবার।
বিধানসভা ভোটের সময় তৃণমূল ছিল বিরোধী আসনে। এ বার তারা জনমত যাচাইয়ে নামছে ‘শাসক’ হিসাবে। বাঁকুড়া ও দাসপুরের দুই বিধায়ক কাশীনাথ মিশ্র ও অজিত ভুঁইয়ার মৃত্যুতে দু’টি আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে। সম্প্রতি হলদিয়া পুরসভায় বামেদের ‘সাফল্যে’র প্রেক্ষিতে বিধানসভার দু’টি জেতা আসনে তৃণমূলের পারফরম্যান্সের দিকে নজর থাকবে বেশি। দুই প্রয়াত বিধায়কের স্ত্রী মিনতি মিশ্র ও মমতা ভুঁইয়াকে উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। অন্য দিকে, গত বারের পরাজিত প্রার্থীদের বদলে দুই কেন্দ্রেই অপেক্ষাকৃত তরুণ মুখকে নীলাঞ্জন দাশগুপ্ত ও সমর মুখোপাধ্যায় লড়াইয়ে নামিয়েছে সিপিএম।
দুই যুযুধান রাজনৈতিক শিবিরের পাশাপাশিই ‘পরীক্ষা’র মুখে রাজ্য নির্বাচন দফতরও। অস্বাভাবিক গরমে ভোটদাতাদের জন্য যথাসম্ভব ‘স্বস্তি’র ব্যবস্থা করতে হচ্ছে তাদের। বুথে বুথে ওআরএস এবং পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে বলে রাজ্য নির্বাচন দফতর জানিয়েছে। দুই বিধানসভা এলাকার সব ক’টি হাসপাতালকে বিশেষ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। গাড়িতে সরকারি চিকিৎসকেরাও ঘুরবেন। যে সব ভোটকেন্দ্রে ভোটদাতাদের খোলা আকাশের নীচে দাঁড়াতে হবে, সে-সব জায়গায় ছাউনির ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্ত বলেন, “নিরাপত্তারও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই থাকবে সশস্ত্র বাহিনী।” রাজ্য নির্বাচন দফতরের খবর, দুই বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের জন্য ৬ কোম্পানি করে মোট ১২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে। সেই সঙ্গে থাকছে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশও। ভোট চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে ২ লক্ষ ১৮ হাজার ১২১ জন ভোটদাতার জন্য ২৭৭টি ভোটকেন্দ্র থাকছে। ২২টি বুথে থাকবেন মাইক্রো-অবজারভার। ৪০টি বুথে থাকবে ক্যামেরা। দাসপুরের ৩০৩টি বুথে ২ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭৭ জনের ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা হয়েছে। এখানে ক্যামেরা থাকছে ৫০টি বুথে। মাইক্রো-অবজারভার থাকছেন ২৮ জন।
একে উপনির্বাচন। তায় দুই জেলাতেই প্রবল গরম। এই অবস্থায় ভোটদানের হার গত বছরের তুলনায় কম হবে বলেই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের ধারণা। তৃণমূলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “ভোটদানের হার কম হলে স্বাভাবিক ভাবেই ব্যবধান কমে আসতে পারে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার প্রথম এক বছরে উন্নয়নের যে কাজ করেছে, তুলনায় দুই পিছিয়ে-পড়া জেলার মানুষ তার পাশেই আছেন। এই উপনির্বাচনে তারই প্রতিফলন
ঘটবে বলে আমরা মনে করি।” সাম্প্রতিক পুরভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয়নি। উপনির্বাচনে অবশ্য কংগ্রেসের প্রার্থী নেই। এই বিষয়টিও তাঁদের পক্ষে যাবে বলে তৃণমূল নেতৃত্ব আশাবাদী।
পক্ষান্তরে, সিপিএম ভরসা রাখছে এক বছরে মমতার সরকারের প্রতি মানুষের ‘মোহভঙ্গে’র উপরে। বাঁকুড়ায় প্রয়াত কাশীনাথবাবুর প্রতি তৃণমূলের অতীতের ‘অসম্মান’ এবং দাসপুরে প্রধান শাসক দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বও তাদের আশায় রেখেছে। জীবদ্দশায় কাশীনাথবাবুর নাম ঘোষণা করেও তাঁকে মন্ত্রী করা হয়নি অথচ মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রীকে প্রার্থী করে ‘ফায়দা’ তোলার চেষ্টা হচ্ছে বাঁকুড়ায় এই প্রচারই চালিয়েছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “প্রচার থেকে যা বোঝা গিয়েছে, দুই কেন্দ্রেই আমাদের ফল আগের চেয়ে ভাল হবে।” প্রসঙ্গত, গত বছর দাসপুরে প্রায় ২৪ হাজার এবং বাঁকুড়ায় প্রায় ৩০ হাজার ভোটে হেরেছিল সিপিএম। |