মৌসুমি বায়ু এখনও স্থবির। উপরন্তু যার দৌলতে গত ক’দিন ধরে দক্ষিণবঙ্গের কোথাও কোথাও একটু-আধটু বৃষ্টি হচ্ছিল, ঝাড়খণ্ড-বিহার সীমানার সেই ঘূর্ণাবর্তটির অভিমুখ ঘুরে গেল উত্তরবঙ্গের দিকে। ফলে দক্ষিণবঙ্গের বৃষ্টি-ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ার সম্ভাবনা দূর অস্ত্।
স্বাভাবিক নিয়মে দক্ষিণবঙ্গে এখন ঘোর বর্ষার সময়। কিন্তু তার বদলে পশ্চিমাঞ্চলের তিন জেলা বীরভূম, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ফের তীব্র তাপপ্রবাহের মুখোমুখি। বাঁকুড়া ও বর্ধমান জেলায় তো তাপপ্রবাহ চলছেই। সোমবারও দক্ষিণবঙ্গে দহনের বলি মোট ৬টি প্রাণ বর্ধমানে ৩ জন, পুরুলিয়ায় ২ জন ও মুর্শিদাবাদে ১ জন। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের প্রাথমিক ধারণা, গরমজনিত অসুস্থতাই এঁদের মৃত্যুর কারণ। অন্য দিকে বঙ্গোপসাগর থেকে ঢোকা মেঘের সুবাদে কলকাতা ও আশপাশে তাপমাত্রা ততটা না-বাড়লেও আর্দ্রতা চরমে ওঠায় মহানগরে অস্বস্তি-সূচক ফের সহনমাত্রা ছাড়িয়ে অনেকটা ঊর্ধ্বমুখী। এ দিন নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হলেও কলকাতা ছিল শুকনো খটখটে।
কোনও দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সে দিনের স্বাভাবিক সর্বোচ্চের পাঁচ ডিগ্রি বেড়ে গেলে সেই পরিস্থিতিকে তাপপ্রবাহ বলে। আর ৬ ডিগ্রির বেশি বাড়লে বইতে শুরু করে তীব্র তাপপ্রবাহ। |
গত সপ্তাহের গোড়ায় দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল। তাতে মৃত্যু হয়েছিল ৯০ জনের। তবে গত ক’দিন ইস্তক ঝাড়খণ্ড-বিহার সীমানায় একটি ঘূর্ণাবর্ত অবস্থান করছিল, সঙ্গে ছিল নিম্নচাপ রেখা। দুয়ের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গে পূর্বের জেলাগুলো কিছু বৃষ্টি পেয়েছে। মেঘ থাকায় পশ্চিমাঞ্চলেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা কমে এসেছিল। কিন্তু এ দিন স্বস্তির ওই সামান্য উৎসটুকুও মিলিয়ে গিয়েছে। ঘূর্ণাবর্তের অভিমুখ উত্তরবঙ্গের দিকে ঘুরে যাওয়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে ঢোকা মেঘ পাড়ি দিচ্ছে সোজা উত্তরবঙ্গে। কিছু বজ্রগর্ভ মেঘ ছিটকে চলে আসায় মুর্শিদাবাদ-নদিয়ায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে, সামান্য বৃষ্টি পাচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনাও। কিন্তু কলকাতার ভাগ্যে কিছুই জুুটছে না, কারণ কলকাতার আকাশে পৌঁছানোর আগেই সেই মেঘ পুরোপুরি ভেঙে যাচ্ছে।
অতএব ঘেমে-নেয়ে মহানগর নাজেহাল। এ দিন আলিপুরের থার্মোমিটারে সর্বোচ্চ পারদ উঠেছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। আর্দ্রতা বেশি থাকায় অস্বস্তি-সূচক দাঁড়িয়েছে ৬৭ ডিগ্রি। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সাত দিন কলকাতার অস্বস্তি-সূচক ৬৬ থেকে ৭১ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে, যেখানে বছরের এই সময়ে তা থাকার কথা ৫৫ ডিগ্রি। আলিপুরের আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, স্বাভাবিক নিয়মে বর্ষা এসে যায় বলে এই সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও মে মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা কম থাকার কথা।
অথচ মৌসুমি বায়ু এ বার এখনও গতি না-পাওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোয় তাপমাত্রা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বস্তুত গত পাঁচ দিন ধরে মৌসুমি বায়ু সেই কর্নাটক-গোয়া সীমানাতেই থম মেরে দাঁড়িয়ে। দিল্লির মৌসম ভবনের আশা ছিল, আজ, মঙ্গলবার তা গতি পাবে। কিন্তু আরবসাগর-বঙ্গোপসাগরের বায়ুপ্রবাহে পরিবর্তন না-হওয়ায় সে আশা বিলীন তো বটেই, উল্টে আবহবিদদের আশঙ্কা, বৃহস্পতিবারের আগে মৌসুমি বায়ু সরবে না।
অর্থাৎ দক্ষিণবঙ্গে বর্ষায় আরও বিলম্বের ইঙ্গিত স্পষ্ট। “দক্ষিণবঙ্গে জুনের শেষ সপ্তাহে বর্ষা এসেছে, এমন উদাহরণও তো রয়েছে!” বলছেন এক আবহবিদ। |