পাঁঠার বদলে পাবদা। চিকেন নয়, চিতল।
গরমের চোটে রাতারাতি বদলে গিয়েছে বিয়ে বাড়ির খাবারের তালিকা। বাদ পড়ে যাচ্ছে বিরিয়ানি, পোলাও এমনকী ফিস ফ্রাই! অনুষ্ঠান বাড়িতে ঢুকলেই আপ্যায়ন করা হত গরম কফি বা পকোড়া দিয়ে। এখন সে সব দেখলেই আঁতকে উঠে অন্য দিকে সরে যাচ্ছেন অতিথি।
টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির নামগন্ধ নেই। হাঁসফাঁস করা আবহাওয়ায় বহু বাড়িতেই গুরুপাক খাদ্যতালিকার বদলে সহজপাচ্য হালকা খাবারের অর্ডার গিয়েছে ক্যাটারিং সংস্থার মালিকদের কাছে। এমনকী, তিন থেকে পাঁচ মাস আগে দেওয়া অর্ডার এখন বদলে ফেলতে হচ্ছে। নবদ্বীপের একটি ক্যাটারিং ব্যবসার মালিক শান্তনু ভৌমিক বলেন, “শুধু মাংস নয়। ময়দার কোনও পদও কেউ চাইছেন না। একটা সময়ে লাচ্চা পরোটা, নানপুরি, রাধাবল্লভী ছাড়া চলত না। এখন সে সব বাদ। বদলে চাওয়া হচ্ছে সাদা ভাত।” তাঁরা জানাচ্ছেন, পোলাও পর্যন্ত পাতে চাইছেন না কেউ। মাছের ফ্রাইও চাইছেন না অনেকে। মাটন কসা, মাটন কোর্মা, মাটন মসালা বা মাটন চাপের মতো পদের তো প্রশ্নই নেই। |
তার বদলে কী থাকছে? ক্যাটারিং ব্যবসায়ী রাধেশ্যাম দে বলছেন, “শুরুতে সাদা ভাতের সঙ্গে লম্বা বেগুন ভাজা ফিরছে। তারপরে মাছের নানা পদ। তবে সব থেকে বেশি জোর দিতে হচ্ছে মিষ্টি, শরবত, নানা রকম ফলের রস আর আইসক্রিমে।” তাতে খরচ কিন্তু বাড়ছে। যেমন, শুরুতে কফির বদলে ঠান্ডা পানীয় দামে বেশি পড়ছে। কোথাও খাওয়ার আগে গন্ধরাজ লেবুর রস মেশানো টক জল দিয়ে ফুচকাও দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা আম পোড়ার শরবত, জলজিরা বা ম্যাঙ্গো শেকের আয়োজন করছেন, তাঁদের খরচ এক লাফে অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে। রাধেশ্যামবাবু বলেন, “সে ক্ষেত্রে অতিথিদের মাথা পিছু পনেরো থেকে কুড়ি টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে নিমন্ত্রণকর্তাকে।” শান্তনুবাবু বলেন, “মাংসের বদলে চিতল মাছের পেটির ঝাল কিংবা মুইঠ্যা পরিবেশন করতে হলে পাত পিছু সত্তর থেকে একশো টাকা করে বেশি লাগছে।” তাঁদের কথায় চিতলের প্লেটের দাম পড়ছে কমপক্ষে একশো তিরিশ টাকা। নবদ্বীপের আর এক ক্যাটারিং ব্যবসায়ী নিতাই সাহা বলেন, “একটি মাটনের পদের সঙ্গে একটি মাছের পদই সাধারণত বিয়ে বাড়ির ভোজের তালিকায় থাকে। কেউ কেউ তার সঙ্গে ভেটকি পাতুরিও রাখেন। সেখানে মিষ্টি নিয়ে সাধারণ বাড়িতে এক একটি প্লেটের দাম পড়ে মোটামুটি একশো আশি থেকে দু’শো টাকা। সেখানে দু’টিই মাছের পদ করতে গেলে একটি পদ অন্তত পাবদা বা চিতলই চাইছে বেশিরভাগ বাড়ি। চিতল ধরলে প্লেটের দাম অনেক পড়ে যাচ্ছে। পাবদায় মোটামুটি একই থাকছে। যাঁরা পাবদা ও চিতল এক সঙ্গে চাইছেন, তাঁদের তিনশোর কাছাকাছি পড়ছে প্লেটের দাম।” ইলিশ? রাধেশ্যামবাবুর কথায়, “এখন ইলিশের পদ না রাখতেই আমরা বলি। আষাঢ় না গেলে তেমন ভাল ইলিশ মিলবে না। বরং চিকেনের হাল্কা কোনও পদ রাখা ভাল।” কলকাতার একটি বিখ্যাত ক্যাটারিং সংস্থার মালিক তপন বারিক বলেন, “গরমের জন্য বিরিয়ানি মাংস বাদ দিতে চাইছেন সকলেই। কেউ কেউ চিকেন কাবাব অবশ্য নিচ্ছেন। মাছের নানা পদ যোগ করতে হচ্ছে, তাতে কিন্তু খরচও বাড়ছে। আগে আমাদের সাধারণ একটি প্লেট পড়ত কর ছাড়া ৩৯০ টাকা। তাতে পাঁঠার মাংস, মাছ দুই থাকত। এখন একাধিক মাছের পদ নিয়ে সেই প্লেটই পড়ছে কর ছাড়া ৪৯০ টাকা করে।”
তবে এই অবস্থায় মাছের যে সব পদ বিয়ে বাড়ি থেকে এক রকম হারিয়েই গিয়েছিল, সে সব আবার ফিরে আসছে। পাতে পড়ছে রুই-পোস্ত, দই-কাতলা, এঁচোড়-চিংড়ি। সেই সঙ্গে পুদিনাপাতার চাটনি। পনিরের তরকারি স্বমহিমায় বিরাজমান। দেখা মিলছে ছানার বরফিরও।
তবে গরমের শেষ চমক কিন্তু মরসুমি ফল দিয়ে সাজানো আইসক্রিম। আম, লিচু, বেদানা, আপেল, খেজুর টুকরো করে, একটু দামি গুঁড়ো দুধ মাখিয়ে দুপুর থেকে ফ্রিজে রাখা হচ্ছে। ভ্যানিলা আইসক্রিমের উপরে ওয়েফার এবং চেরি দিয়ে পরিবেশন। বাজেট বুঝে কোথাও একটা, কোথাও ডবল স্কুপ। |