|
|
|
|
ড্রয়ে বেশি হতাশ হবেন ফরাসিরাই |
ইংল্যান্ডের ফুটবলে
‘গুরু’ হাউটনের ছাপ
রূপায়ণ ভট্টাচার্য • কলকাতা |
|
|
ইংল্যান্ড-১ (লেস্কট)
ফ্রান্স-১ (নাসরি) |
কোথায় জিদান? কোথায় বেকহ্যাম? পরশপাথর খোঁজার মতো দুটো দলই খুঁজে বেড়াল এক জন নেতা। যিনি দলটাকে চালাবেন। ইচ্ছেমতো গতি বাড়ানো, কমানোর দায়িত্ব নেবেন। হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি দিতে উদ্যোগ নেবেন।
ইংল্যান্ড বা ফ্রান্সের তরুণ দলের ফুটবলে তারুণ্যের দীপ্তিই ছিল। জেতানোর জরুরি ঝাঁকুনিটা এল না।
ড্র ম্যাচে ঝাঁকুনি দুটো। এক, স্কোরলাইনে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির দুই তারকার নাম। দুই, ইংল্যান্ডের ফুটবল স্টাইলে এক প্রাক্তন ভারতীয় কোচের প্রবলতর ছায়া। |
|
মাঠ ছাড়ছেন নায়ক লেস্কট। হাউটন-স্টাইলের প্রয়োগ তাঁরই গোলে। ছবি: এএফপি। |
বব হাউটনের থেকে ঠিক দু’মাসের বড় বর্তমান ইংল্যান্ড কোচ রয় হজসন। তবু হাউটনকেই গুরু মানেন হজসন। হাউটনের বিয়েতে ছিলেন বেস্টম্যান। কেন্টের মেডস্টোন ক্লাবে হাউটনের সহকারী ছিলেন। তাঁর কোচিংয়ে খেলেওছেন। ছেচল্লিশ বছর আগে হজসন যখন সুইডেনের হ্যাম্পস্টেড ক্লাবে কোচিং শুরু করলেন, তখন তাঁর নাম সুপারিশ করেন হাউটন। হাউটন তখন মালমো ক্লাবে, তখনই কিংবদন্তি।
হাউটনের পরিকল্পনার ছাপ তো হজসনের টিমের স্টাইলে থাকবেই। ভাইচুং, সুনীলদের তিনটে পরামর্শ বারবার দিতেন হাউটন।
এক, ৪-৪-২ ছকে দলের শেপটা ঠিক রাখো।
দুই, লং বলে উইন দ্য সেকেন্ড বল, ওখান থেকেই আক্রমণ শুরু করো। তিন, ফ্রিকিক থেকে গোলের চেষ্টা করো।
হজসনের ইংল্যান্ড ‘শেপ’ ঠিক রাখার চেষ্টা করে গেল নব্বই মিনিট। টেরি ও জেরারের ওই কাজটাই ছিল প্রধান। জেরারের ফ্রি কিক থেকে লেস্কটের হেডে ১-০। খেলা দেখতে দেখতে ভারতীয় কিপার সুব্রত পাল এক কথায় মেনে নিলেন, “একেবারে হাউটন স্যারের স্টাইলে খেলছে ইংল্যান্ড।” |
|
ফ্যান-যুদ্ধেও স্বস্তির হাসি |
ইংরেজদের দুই ফরোয়ার্ডের এক জনের বয়স ২৬, অন্য জনের ২১। ফরাসিদের দুই স্টপারের বোঝাপড়া ভাল নয় দেখে, শুরুর দিকটা তাঁরা চেষ্টা করলেন ওখান দিয়ে আক্রমণের। ক্রমে সেই উদ্যোগ অদৃশ্য। ইউক্রেনের যে শহরে খেলাটা হল, সেই দোনেৎস্ককে বলা হয় ‘লক্ষ গোলাপের শহর’। রাস্তায় অসংখ্য গোলাপ। এ বার সেখানে গোলাপের গন্ধ নেওয়ার মতো ইংরেজ ভক্ত তেমন নেই। লন্ডনের কাগজে আক্ষেপ, ইউক্রেনে জলের দরে বিয়ার বিক্রি হচ্ছে, আবহাওয়া দারুণ, কিন্তু ইংরেজরা নেই। স্মরণকালের মধ্যে জাতীয় দলের খেলা দেখতে এত কম দর্শক গিয়েছে। দলের উপরে তেমন ভরসা নেই বলে।
ম্যাচটা যত গড়াল, তত বোঝা গেল ফরাসিদের টেকনিক ও স্কিল অনেক ভাল। পাসের খেলায় ফরাসিরা (৬৩৪) হেলায় হারালেন ইংরেজদের (৩০৭)। মাইকেল আওয়েন, গ্যারি লিনেকার, ক্রিস ওয়াডল, গ্রাহাম টেলরদের মন্তব্যগুলো ইন্টারনেটের তরঙ্গে ভেসে আসছিল। সবাই নাকি এক পয়েন্টেই খুশি। আওয়েন পর্যন্ত টুইট করেছেন, “না হারাটাই গুরুত্বপূর্ণ”। তরুণ দলটার উপর সবার এত অনাস্থা?
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ফরাসি কিংবদন্তি পিরেস এ দিনই লন্ডনের কাগজে সেরা ‘ফ্রাঙ্গল্যান্ড’ দল গড়েছেন। ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ড থেকে সেরা ১১ জনকে নিয়ে। ওই এগারো জনে মাত্র তিন ইংরেজ সুযোগ পেয়েছেন। হার্ট, টেরি এবং রুনি। ফরাসিরা ১-১ করার পর থেকে ফ্রান্সের নাসরি, রিবেরি, বেঞ্জিমারা নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করলেন। বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত শটে ১-১ করে মুখে আঙুল দিয়ে ইংল্যান্ড বেঞ্চের দিকে দৌড়ে গেছিলেন নাসরি। জল্পনা চলছে, হজসনের সহকারী কোচ গ্যারি নেভিলের দিকেই ওই অঙ্গভঙ্গি কি না। ক’দিন আগে নাসরির নামে কিছু একটা বলেছিলেন নেভিল। |
|
ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই ফ্রান্সের জয়ের প্রার্থনায় ভক্তরা। সোমবার। ছবি: এএফপি। |
ইংল্যান্ডে এ দিন বেটিং চলেছে, নব্বই মিনিটে কতবার টিভি ধারাভাষ্যকাররা রিও ফার্দিনান্দের নাম করবেন। সাধারণের ধারণা ছিল, জন টেরি এবং লেসকট সমস্যায় পড়বেন প্রতিভাবান ফরাসিদের থামাতে। ২১টি ম্যাচ অপরাজিত ফরাসিরা। ইউরোয় এই রেকর্ড কারও নেই। কেন নেই, তা তাঁদের বৈচিত্র্যময় পাস খেলার চেষ্টার মধ্যে ধরা পড়ল। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির নাসরি, রিয়াল মাদ্রিদের বেঞ্জিমা এবং বায়ার্ন মিউনিখের ফ্রাঙ্ক রিবেরির পাসিংয়ে মিডল থার্ড ও অ্যাটাকিং থার্ডে ফরাসিদেরই অনেক সুন্দর দেখাল গোলাপ শহরে। ত্রয়ীর সেরা নাসরির সঙ্গে চোখ টানলেন দুর্দান্ত রাইটব্যাক দেবুচি। টিভি ধারাভাষ্যে ফার্দিনান্দের নাম বেশিবার ওঠারই সম্ভাবনা।
বল পজেশন অনেক বেশি রেখেও যে ফরাসিদের সুন্দর ফুটবলে নীল-ঘূর্নিঝড় উঠল না, তার কারণ নেতার অভাব। ফুটবলে বলে, একটা দলের সাফল্যের পিছনে দু’ ধরনের নেতা দরকার। এক জন কথা বলে সতীর্থদের তাতাবেন। এক জন প্রয়োজন মতো খেলার স্টাইল বদলাবেন। ১৯৮৪র ফ্রান্সে নেতা ছিলেন প্লাতিনি, তিগানা। ১৯৯৮ সালের ফ্রান্সে দেশঁ এবং দেসাই। ২০০৬ সালে জিদান এবং ম্যাকালেলে। লরাঁ ব্লা নিজেও নেতৃত্ব দিয়েছেন সতীর্থদের তাতানোর ব্যাপারে। এই ম্যাচটায় টেরি, জেরার, কোলের সৌজন্যে রক্ষণাত্মক সংগঠন নিখুঁত করে ইংল্যান্ড বেঁচে গেল। ফরাসি দলে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো সিনিয়র রিবেরি। তিনি তো নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকার লোক। |
এক নজরে ইংল্যান্ড-ফ্রান্স |
বল পজেশন |
ইংল্যান্ড-৩৫% ফ্রান্স-৬৫% |
লক্ষে শট |
ইংল্যান্ড-১ ফ্রান্স-১৫ |
কর্নার |
ইংল্যান্ড-৪ ফ্রান্স-১১ |
ফাউল |
ইংল্যান্ড-৭ ফ্রান্স-৯ |
|
বার্সেলোনায় যেমন লা মাসিয়া ফুটবল স্কুল থেকে জাভি, ইনিয়েস্তা, মেসি, ফ্রাবেগাসরা বেরিয়ে এসেছেন, ফরাসিদের রয়েছে ক্ল্যারিফঁতে অ্যাকাডেমি। বেঞ্জিমা, নাসরি, বেন আরফারা এখান থেকেই বেরিয়েছেন দল বেঁধে। ’৮৭ সালে জন্ম বলে এঁদের বলা হয় ’৮৭ প্রজন্ম। ম্যাচটা আবার টিভিতে দেখলে তাঁরা বুঝতে পারবেন, ইংরেজদের এত অগোছাল তাঁরা কোনও দিন ইউরোয় পাবেন না।
হজসন এবং ব্লাঁ, দুই কোচই ম্যাচটার আগে অতি বিনয় দেখিয়েছিলেন দল নিয়ে। তাঁরা নাকি কাপ জেতার টিম নন! ম্যাচ শেষে দুই কোচের হাত মেলানোর সময় হজসনের থেকে ব্লাঁয়ের শরীরী মুদ্রায় হতাশা ধরা পড়ল বেশি। ড্র ম্যাচটা ইংরেজদের স্বস্তি আর তৃপ্তি আনতে পারে, ফরাসিদের জন্য রইল অস্বস্তি আর অতৃপ্তি। |
|
|
|
|
|