সম্পাদকীয় ২...
প্রেমের পরিণতি
নেরো বৎসরের এক মুসলিম কিশোরীর বিবাহকে সমর্থন করিয়া দিল্লি হাই কোর্ট দেশবাসীকে বিস্মিত করিয়াছে। যে সময়ে সংসদ ১৮ বৎসরের কম বালিকাদের সহিত যে কোনও যৌনসম্পর্ককে ‘অপরাধ’ আখ্যা দিয়া মেয়েদের অকালবিবাহ, অকালমাতৃত্ব হইতে রক্ষা করিতে চাহিতেছে, সেই সময়ে এই রায় আরও চমকপ্রদ। হয়তো মহামান্য আদালত ‘মানবিক’ হইবার তাগিদ অনুভব করিয়াছেন। কৈশোর-উদ্গমে প্রেমের উন্মেষ মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, প্রেমাস্পদের সহিত মিলিত হইবার ইচ্ছাও প্রত্যাশিত। কিন্তু বিবাহ এবং সংসারযাত্রা কেবল জৈব তাড়নার বিষয় নহে। সমাজ জীবন ও রাষ্ট্র জীবনের বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতেই ব্যক্তির জীবন নির্ধারিত হয়। এই কারণে সহবাস ও বিবাহের ন্যূনতম বয়স বিষয়ে বারবার আইন হইয়াছে, বার বার তাহা বদলাইয়াছে। এই লইয়া সমাজে বিতর্কও কম হয় নাই, কিন্তু উনিশ শতক হইতে ক্রমাগত মেয়েদের বিয়ের বয়স বাড়িয়াছে। ইহাই স্বাভাবিক। মেয়েদের কেবলমাত্র প্রজননের যন্ত্র করিয়া রাখিবার প্রথা হইতে মুক্তি দিয়া সম্পূর্ণ মানুষ রূপে বিকশিত হইবার সুযোগ দিতে হইলে তাহাদের শিক্ষা সম্পূর্ণ করিতে দিতে হইবে, পরিবারে আবদ্ধ না রাখিয়া সমাজে নিজেদের স্থানটি বুঝিয়া লইবার সুযোগ দিতে হইবে।
বয়ঃসন্ধি কালটি আপনাকে চিনিবার কাল, সেই সময়ে মেয়েদের উপর সংসারের জোয়াল চাপাইয়া, তাহাদের আচরণে হাজার বিধিনিষেধ আরোপ করিয়া, তাহার ব্যক্তিত্ব, উচ্চাশা, স্বপ্ন-কল্পনাকে বিলুপ্ত করিয়া দেওয়া ক্ষমাহীন অপরাধ। ইহা মানবসম্পদের অপচয়ও বটে। যে মেয়েটির প্রতিভার বিকাশ ঘটিলে সে সমাজে, অর্থনীতিতে উন্নত অবদান রাখিতে পারিত, অকালে বিবাহ দিয়া তাহাকে অদক্ষ গৃহশ্রমিক করিয়া তুলিবার মধ্যে কোনও সার্থকতা নাই। যে বালিকা এই ঝুঁকিগুলি না বুঝিয়াই প্রেমিককে পাইবার জন্য ব্যগ্র হইয়াছে, তাহাকে সংসার-পিঞ্জরে ঠেলিয়া দিলে তাহা কি সুবিবেচনা হয়? মনে রাখিতে হইবে, বিবাহের ইচ্ছাও কেবলমাত্র বালিকার হৃদয়োত্থিত নহে, সমাজ-সংস্কৃতিতে পুরুষতন্ত্রের যে জয়গান প্রতিনিয়ত ধ্বনিত হইতেছে, তাহাতে বিবাহই প্রেমের একমাত্র পরিণাম, এবং মেয়েদের জীবনের সর্বোত্তম গতি বলিয়া নিয়ত প্রচারিত। ‘প্রেমে পড়িয়া অকালবিবাহ করিলে দোষ নাই’, আদালতের এই বার্তা তাই শঙ্কা উদ্রেক করে।
আশঙ্কা গাঢ় হইয়াছে, কারণ আদালত এখানে মুসলিম বিবাহ আইনের নির্দেশ উদ্ধৃত করিয়া বলিয়াছে, চাহিলে মুসলিম কিশোরীটি প্রাপ্তবয়স্ক হইলে বিবাহকে বাতিল করিতে পারে। ভারতের মতো দেশে বাস্তবে ইহা কত দূর সম্ভব, সেই প্রশ্ন উঠিবেই। কিন্তু আরও বড় প্রশ্ন এই যে, ধর্মীয় অনুশাসন দিয়া বালিকাদের ভবিতব্য নির্ধারণ কত দূর সঙ্গত? পড়াশোনা সম্পূর্ণ করিবার কিংবা যৌন নির্যাতন হইতে অব্যহতি পাইবার প্রশ্নে মুসলিম বালিকার সহিত হিন্দু কিংবা খ্রিস্টান বালিকার পার্থক্য ঘটিবে কেন? ধর্মীয় অনুশাসনের সহিত দেশের আইনের বিভেদ ঘটিলে কোনটি অধিক মর্যাদা পাইবে, সে প্রশ্নে বার বার বিতর্ক উঠিয়াছে। শাহ বানু বিবাহবিচ্ছেদ মামলা হইতে ইমরানা ধর্ষণকাণ্ড অবধি বার বার এ লইয়া রাজনৈতিক ঝড়ও উঠিয়াছে। আদালত এই প্রশ্নটি আবারও উসকাইয়া দিল। স্মরণ করিতে হইবে, নারীর অধিকার বস্তুত মানবাধিকার হইতে ভিন্ন নহে। নিগ্রহ হইতে মুক্ত, স্বাধীন ও সচেতন জীবন যে কোনও কিশোরীর অধিকার। তাহার বিপরীত অনুশাসন হইতে তাহাকে রক্ষা করাই রাষ্ট্রের কর্তব্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.