সম্পাদকীয় ১...
অশান্তির আশঙ্কা
গোর্খা আঞ্চলিক প্রশাসনে (জিটিএ) ডুয়ার্স ও তরাইয়ের মাত্র পাঁচটি মৌজা অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে শ্যামল সেন কমিটির সুপারিশ পার্বত্য দার্জিলিঙে অশান্তি ও অস্থিরতার আবহ ফিরাইয়া আনার শঙ্কা মূর্ত করিয়াছে। গোর্খা-অধ্যুষিত ৩৯৮টি মৌজা চাহিয়া মাত্র পাঁচটি পাওয়ার সুপারিশকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতৃত্ব ‘বঞ্চনা ও প্রতারণা’ বলিয়াই গণ্য করিতেছেন। এই সুপারিশ বাতিল করিয়া সে সংক্রান্ত নথিপত্র এবং জিটিএ চুক্তির কাগজ পোড়াইবার আহ্বান জানাইয়া তাঁহারা ধাপে-ধাপে পার্বত্য দার্জিলিং ও ডুয়ার্সে আন্দোলন ছড়াইয়া দিবার কর্মসূচি ঘোষণা করিয়াছেন। সেই সঙ্গে রাজ্যের যাবতীয় নির্বাচিত সংস্থা হইতে মোর্চার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্তও গৃহীত হইয়াছে। রাজ্য প্রশাসনের সহিত অসহযোগিতার অভিপ্রায়টি স্পষ্ট। আগামী জুলাইয়ে অনুষ্ঠেয় জিটিএ-র নির্বাচন অতএব বেশ অনিশ্চিত হইয়া উঠিল।
লক্ষণীয়, মোর্চা নেতৃত্ব তাঁহাদের আন্দোলন শুরুর আগে সরকারকে বেশ কিছু দিন সময় দিয়াছেন। চলতি পর্যটনের মরসুম যাহাতে নির্বিঘ্নে অতিবাহিত হয়, সে বিষয়টিও তাঁহারা খেয়াল রাখিয়াছেন। এই অবস্থানের মধ্যে একটা আপসের মনোভাব রহিয়াছে, যাহা আলোচনা ও দরকষাকষির মাধ্যমে সমস্যার সন্তোষজনক নিষ্পত্তি চায়। প্রশ্ন হইল, রাজ্য সরকার মোর্চা নেতৃত্বের এই মনোভাবে সাড়া দিবেন কি না। মুখ্যমন্ত্রী বলিয়াছেন, মোর্চা নেতৃত্ব যখন গোর্খা-অধ্যুষিত মৌজাগুলির শনাক্তকরণে শ্যামল সেন কমিটির মধ্যস্থতা শিরোধার্য করিয়াছিলেন, তখন সেই কমিটির সুপারিশও তাঁহাদের মানিয়া লওয়া উচিত। সঙ্গত ও যুক্তিপূর্ণ কথা, সন্দেহ নাই। কিন্তু জনজাতীয় আত্মশাসনের অভিপ্রায় ও আন্দোলন সর্বদা যুক্তির সরল রেখায় অগ্রসর হয় না, প্রায়শ আবেগ দ্বারা চালিত হয়। ভারতে যে-সকল প্রান্তিক জনজাতির বসবাস, তাহাদের স্বায়ত্তশাসনের দাবির মোকাবিলায় রাষ্ট্র তথা সরকারের ভূমিকা সর্বদা সহমর্মীর থাকে নাই, প্রায়শ জনজাতীয় আন্দোলন ও নেতৃত্বে বিভেদপন্থা অনুসরণ করিয়া, বিভাজন ঘটাইয়া ব্যর্থ করিয়া দেওয়ার অপপ্রয়াস চলিয়াছে। উত্তর-পূর্ব ভারত তাহার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। পশ্চিমবঙ্গে গোর্খা জনজাতির স্বশাসনের আকাঙ্ক্ষা বানচাল করিতেও কখনও সমতলকে পাহাড়ের বিরুদ্ধে সমাবেশিত করিয়া, কখনও বা ডুয়ার্স ও তরাইয়ে বসবাসকারী অন্য জনজাতি, বাগিচা-শ্রমিক ও বাংলাভাষীদের গোর্খাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়া দিয়া সেই আন্দোলনকে দুর্বল করার চেষ্টা হইয়াছে। গোর্খা নেতৃত্বের একাংশকে ‘খরিদ’ করিয়া আন্দোলন ভাঙিয়া দেওয়ার অপকৌশল তো আছেই। সমতলের, এই সার্বিক আক্রমণে প্রান্তিক জনজাতীয় স্বশাসনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হওয়া কঠিন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর পাহাড় বনাম সমতলের দ্বন্দ্ব ঘুচাইবার অঙ্গীকার করিয়াছিলেন। পার্বত্য দার্জিলিঙের উন্নয়নে তাঁহার আন্তরিক প্রয়াস মোর্চা নেতৃত্বের হৃদয়ও জয় করিয়া লয়। গোর্খাদের আহত অভিমানের ক্ষতে প্রলেপ দিতে তিনি মন্ত্রিপরিষদ লইয়া একাধিক বার দার্জিলিং সফরও করেন, বেশ কিছু প্রকল্পও ঘোষণা করেন। কিন্তু মোর্চার মূল দাবি জিটিএ-র এলাকা সম্প্রসারণের প্রশ্নে তাঁহার গড়িয়া দেওয়া কমিটির কাজকর্ম গোর্খা আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ। ৩৯৮ চাহিয়া ৫ পাইলে তাহাকে নাকের বদলে নরুন পাওয়াই বলে। নেপাল ও ভুটানের সংলগ্ন বলিয়াই গোর্খা গরিষ্ঠতা সম্পন্ন শত-শত মৌজা জিটিএ-র অন্তর্ভুক্ত না-করার সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনাযোগ্য কি না, তাহা ভাবিয়া দেখা দরকার। মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয় মোর্চা নেতৃত্বের সহিত আলোচনা করিবেন। পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি করা হইতে নিবৃত্ত থাকিতেও বলিবেন। কিন্তু পৃথক রাজ্যের দাবি হইতে গোর্খাদের সরাইতে হইলে বোধহয় কেবল পাঁচটি মৌজায় কাজ হইবে না। সকলেই তো যুধিষ্ঠিরের নেতৃত্বাধীন শান্তিকামী পাণ্ডব নন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.